একদিন কলেজ পড়ুয়া এক কঙ্গোলিজ ছেলের সাথে কথা হচ্ছিলো সমসাময়িক বিষয় নিয়ে। কথা প্রসঙ্গে কিছুটা বেপরোয়া চালচলন ও দুষ্টুমির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে সহাস্য জবাবে বলল এমন তো হতেই পারে কারন আমরা ‘জেনারেছিও কাবিলা’(ফরাসী ভাষায়) বা কাবিলা প্রজন্ম।বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্মকে যেমন ডিজুস জেনারেশান, এফ এম রেডিও প্রজন্ম ইত্যাদি নামে ডাকা হয় ব্যাপারটা তেমনই। কঙ্গোতে অপেক্ষাকৃত কম বয়সী প্রেসিডেন্ট জোসেফ কাবিলাকে কেউ কেউ তাদের প্রজন্মের অনুকরণীয় মডেল মনে করলেও অনেকেই তাঁকে পছন্দ করেন না বিভিন্ন কারনে। আধুনিক শিক্ষিত লোকজনের একটা অংশ এ মডেলের সমর্থক হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুঃসাহসী ও শৃঙ্খলার সীমা পেরিয়ে উৎপাত করা তারন্যে নিজেদেরকে কাবিলা প্রজন্ম মনে করে । এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকায় বলতে শুনতাম ‘ পোয়া ইভা কাবিল’ মানে এই ছেলেটা দুষ্ট বা ‘ইতে কাবিল ওই গিয়ে’ মানে সে দুষ্ট বা অতি চালাক হয়ে গেছে । দুর্ধর্ষ চালাক বুঝাতে স্রেফ মজা করার খাতিরে কাবিল বলা হয়েছে এখানে। এ প্রসঙ্গে অথবা অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই আসা যাওয়ার পথের ধারে ঘটতে দেখা প্রতিদিনের কিছু ঘটনা নিয়ে দুটি কথা ।
গত জুলাই মাসে আমাদেরকে নিয়ে স্থানীয় মিনিবাস ড্রাইভার দ্রুত বেগে ছুটে যাচ্ছিল উগান্ডার রাজধানী কাম্পালার দিকে । হঠাৎ ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি থামিয়ে অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেক করার জন্য একটি নির্দিষ্ট ফরমে জরিমানা করে দিল। ড্রাইভার তা মেনে নিয়ে নিয়ম মতো আবার ধীরে চলতে শুরু করল। এর কয়েকদিন পরে ঢাকার জনাকীর্ণ রাজপথে ট্রাফিক পুলিশ- বাস কনট্রাক্টরের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের দৃশ্য দেখলাম । পাশ দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সময় হাত দিয়ে ইশারা করলেন একজন তরুণ ট্রাফিক কন্সটেবল । গাড়ির ভিতর থেকে বাস অ্যাসিস্ট্যান্ট নামতেই তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন । তিনি পরম মমতায় হ্যান্ডসেক করলেও বাস অ্যাসিস্ট্যান্টের মুখ গোমরা ও বিরক্তিপূর্ণ। আমি বাস অ্যাসিস্ট্যান্টের এহেন অনুদার ও বন্ধুত্বপনায় কৃপণতার কারন বুঝলাম যখন দেখলাম পুলিশটি মুঠো করে কিছু টাকা পকেটস্থ করল। আর দর্শক হিসেবে উপস্থিত রইল রাস্তার দু পাশের অপেক্ষমান যাত্রীরা।
একটি সরকারি অফিসে ছোট্ট একটি কাজ করে দেয়ার জন্য পাঁচশ টাকা উপরি বা বকশিস (!) চাইলেন একজন সুন্দরী তরুণী কর্মকর্তা । আমি ঘোরের মধ্যে আচ্ছন্ন হয়ে কি বলব তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না । সুন্দরী তরুণীরা ঘুষ খেতে পারবে না বা এটা তাদের স্ট্যাটাসের সাথে ঠিক যায় না আমি এটা বলতে চাচ্ছি না । বরং এ বয়সে এ ধরনের বদঅভ্যাস চর্চা করলে জাতির ভবিষ্যৎ কি হবে তা ভেবে আমি মাথা চুলকিয়েও কুল পাই না ।
বিভিন্ন সময়ে আদিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একই ছাত্র সংগঠনের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের ভয়ানক সংঘর্ষ দেখেছি। কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনকে শুধুমাত্র নিজেদের আয়ত্তে রাখার জন্য এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে,এক ক্লাসমেট আরেক ক্লাসমেটকে কতটা নির্মমভাবে পিটিয়ে,কুপিয়ে রক্ত ঝরাতে পারে তা চোখে দেখলেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। দেশের উচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে রাজনীতি বিজ্ঞানের সহিংস প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসগুলো চরম অসহ্য লাগার মতো । তরুণদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেখে একজন প্রবীণ যদি বলেন এ সব দেখাও দুর্ভাগ্যজনক তাহলে তাঁকে কি দোষ দেব।
আজকের তরুণরা অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে আলাদা মনন,মানসিকতা ও জীবনধারায় বিশ্বাসী। আমি আশাবাদী আমরা নতুন সুরে জীবনের জয়গান গাইবই। যদিও সব কিছু দেখেও আমরা দেখিনা বা অসহায়ভাবে না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাই । এখন অতীতকে পেছনে রেখে সব বদলে দেয়া আর নিজেকে বদলে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে সুন্দর আগামীর বর্ণিল মিছিলে থাকার কথা আমাদের। তা না করে পুরনো জং ধরা সিস্টেমের আধুনিকায়নের দুষ্টমিতে মেতে থাকার যুক্তি কি ? আমরা এই সময়ে এই জনপদের ‘কাবিলা প্রজন্ম’ বলেই হয়ত !
জহিরুল কাইয়ুম
গনতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র থেকে

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



