somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই সময়ে এই জনপদে

০৫ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের লেখাটি কঙ্গোর বারেগা উপজাতির ল্যাগা উৎসব নিয়ে। কঙ্গোর বর্তমান লোকজন অনেক আদিবাসী ও উপজাতির সমন্বয়ে গড়া। প্রতি বছর জুলাই-আগস্ট মাসে কঙ্গোর বারেগা উপজাতি কিশোর ও তরুণদের জন্য ল্যাগা উৎসব করে থাকে । এই উৎসব মূলত ভবিষ্যৎ জীবনের ধারণা দেয়ার জন্য এক ধরনের “গ্রুমিং সেশন”। পুরো উৎসবটি হয় গভীর জঙ্গলের ভিতর। প্রতি গ্রামে একজন প্রথা বা কৃষ্টিপ্রধান থাকে যাকে স্থানীয় ভাবে ‘সেফ কুতুমিয়ের’ বলা হয়। প্রাচীন বেশভূষা দেখেই বুঝা যায় তিনি কঙ্গোর অনেক পুরনো কোন এক সংস্কৃতির ধারক – বাহক। মাথায় পশুর চামড়ার টুপি ,গলায় পশুর দাঁত বা হাড় দিয়ে বানানো মালা , হাতে লাঠি ইত্যাদি। একবার এক প্রথা প্রধানের লাঠিটা হাত দিয়ে ধরার চেষ্টা করলাম কিন্তু তিনি সে সুযোগ দিলেন না । কারন এটা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে তাই সবাই ধরতে পারে না। দক্ষিন কিভু প্রদেশে রেইন ফরেস্ট ও জীব বৈচিত্র্যের জন্য সুপরিচিত মুয়েঙ্গা ও সাবুন্দা অঞ্চলে উলিন্ডী নদীর আশেপাশে বসবাসকারী গোত্রটি হচ্ছে বারেগা।
১০ থেকে ১৮ বছরের কিশোরদেরকে এই প্রশিক্ষণের আওতাভুক্ত করা হয়। আলোচ্য সূচীতে থাকে দাম্পত্য জীবন যাপন, সমাজে শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে বসবাসের নিয়ম কানুনসহ অন্যান্য বিষয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে সামাজিক বিষয়গুলো এখানে লোকালয় থেকে বের হয়ে গভীর জঙ্গলে নীরব পরিবেশে শেখানো হয়। বৃক্ষের নিচে উদার খোলা প্রকৃতির কোলে পাঠদানের কথাটি কোথাও পড়েছিলাম। সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তি নিকেতনের প্রথম দিককার অবস্থা সম্পর্কে । এখানে সেই ধারণার বাস্তব অনুশীলন চলছে।
একদিন কয়েকটি কিশোর ছেলেকে দেখলাম আপাধমস্তক লালচে কাদা মেখে শরীরের নিন্মাংশে এক চিলতে কাপড় পরে হুলা গুলা রকমের নাচ গান করতে করতে জঙ্গলের দিকে যাচ্ছে। যেহেতু এটি একটি উৎসব এই বয়সের সবাইকে বাধ্যতামূলক ভাবে একবার করে অংশগ্রহন করতে হয়। এ গোত্রের কেউ শহরে থাকলেও গ্রামে এসে অংশগ্রহণ করে যেতে হয়। কেউ একজন যদি এই ল্যাগা উৎসবে যোগ না দেয় তাকে সমাজ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। লোকজনের ধারণা ছেলে-পুরুষ মানুষ এ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে না গিয়ে পারেই না। কারন আনুষ্ঠানিকভাবে যৌবনে পদার্পণ করার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।
পুরো উৎসবটি বনের ভিতর তাই অংশগ্রহণকারীদের মাসখানেক ওখানেই থাকতে হয়। পরিবার থেকে খাবার ও অন্যান্য জিনিসপত্র পাঠানো হয়। কয়েকদিন রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে কিশোর তরুণদের উৎসাহ সহকারে গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করতেও দেখলাম । রাস্তার যে পাশে জঙ্গল আছে সেখানে বসে প্রথা প্রধান পো পো করে শব্দ বাসি বাজিয়ে তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন । আমাদের ক্যাম্প থেকে কিছু দূরে রাতের অন্ধকারেও বাঁশির পো পো শব্দ শুনতে পেতাম । একজন একদিন বলল প্রাচীন বিশ্বাস মতে এভাবে শয়তানের আরাধনা বা কখনো কখনো অশরীরী অশুভ শক্তির অনিষ্ট বা কু-প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কালেগা এবং কাগিংগা দেবতার ভক্তি করা হয় ।
অন্য জাতি ও সংস্কৃতির মানুষের কাছে এরা এ উৎসব নিয়ে কোন কথা বলতে চায় না । কারন বেলজিয়ান উপনিবেশ আমলে কিং লিওপল্ডের সেই “ সিভিলাইজেসান অ্যান্ড ক্রিসচিয়ানাইজেসান প্রসেস” সভ্যতা শিখানো ও খ্রিষ্টান করার প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ হয়ে যায় অনেক প্রাচীন বিশ্বাস এবং নিজস্ব আচার অনুষ্ঠান। একজনের কাছে জানতে চাইলাম এ উৎসব সে কিভাবে পালন করেছে। তাতে সে কেমন যেন লজ্জা পেল। পরে আরেক জন বলল অনেকগুলো শিক্ষার মধ্যে একটি হল ছেলে বা পুরুষ মানুষ কখনো রান্না ঘরে ডুকতে পারে না। তার দেয়া যুক্তিটা আমার পছন্দ হয়েছিল। বুঝতে পারলাম নেলসন ম্যান্ডেলার “লং ওয়াক টু ফ্রিডম” বইয়ে বর্ণনা দেয়া দক্ষিন আফ্রিকার গ্রামীণ সংস্কৃতি এবং উপজাতীয় নিয়মের সাথে এদের প্রথার কিছু মিল আছে।

জহিরুল কাইয়ুম
কঙ্গো থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:২৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×