somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘বিধাতা তোমার মঙ্গল করুন’

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনে পরে কঙ্গোতে শুরু হওয়া আমার কর্মজীবনের প্রথম দিকের দিনগুলোর কথা। নতুন পরিবেশে সুশৃঙ্খল ও নীতিনিষ্ঠ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটা কণ্টিনজেন্টের সাথে মিশন এলাকায় ইন্টারপ্রেটার বা অনুবাদক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম। সিনিয়র জুনিয়র সহকর্মীদের সহযোগিতা আর এখানকার স্থানীয় মানুষের ভালোবাসা আমার কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছিল।দেখতে দেখতে অনেকটা সময় পার করে এলাম। এবার দুপুরের খাঁ খাঁ রোদে রাস্তায় কাটানো ধূসর সময়, ক্যাম্পে তাঁবুর সামনে বসে বিবর্ণ সন্ধ্যার রূপ দর্শনে ক্লান্ত একজন মানুষের বাড়ি ফিরে যাবার বিদায় ঘণ্টা বেজে ওঠেছে।
বিভিন্ন সময়ে এখানে নানান জটিলতার কারনে মানুষের জীবনকে বিপদাপন্ন হয়ে ওঠতে দেখেছি। আমাদের দেশের হিসেবে খাদ্য, বস্র , বাসস্থান , শিক্ষা ও চিকিৎসা এই পাঁচটি মৌলিক অধিকারের কোনটিই এদেশের মানুষের জন্য নিশ্চিত নয়। সেটা নিয়ে কারো কষ্টও নেই। নেকড়ে দৃষ্টির মার্কিন- ইউরোপীয় শক্তির লোভের যাঁতাকলে পড়ে প্রকৃতির ধনী সন্তানেরা অভাবী ও সাধারণ জীবন যাপন করে যাচ্ছে। কে কোথায় স্বর্ণ এবং ডায়মন্ডের জায়গার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অস্রবাজী করছে অথবা কোন বিদ্রোহী গোষ্টীর (মালান্দ্রু বলে গালি দেয়া হয় এদের । চোর বুঝাতে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের লোকদেরকেও এটা বলা হয়) রাজনৈতিক বা আন্তর্জাতিক কারনে খনি দখলে নিয়েছে ওসব নিয়ে সাধারণ মানুষের মাথাব্যাথাও নেই। বরং তাদের ইচ্ছা “ ভিক্ষা চাইনা কুত্তা সামলাও” টাইপের। মানে আমাদের ওসবের দরকার নেই । সশস্র বিদ্রোহী গোষ্টীর হাতে আমাদের প্রান যেন না যায় । দুবেলা অন্নসংস্থান করে বেঁচে থাকতে পারলেই সার্থকতা। কিন্তু এই সামান্য চাওয়াটুকুও সব সময় পূরণ হবার নয় ।
অনেক সমস্যাগ্রস্ত হলেও অন্তত একটি বিষয়ে আমাদের তুলনায় এদেশের মানুষের বিচার বিবেচনাবোধ অনেক উন্নত। কথা প্রসঙ্গে আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করে বাংলাদেশে বিয়ের আগে ছেলেপক্ষ মেয়েপক্ষকে কয়টা গরু দিতে হয় (এখানকার রীতি ‘দোতে’ অনুযায়ী)। কঙ্গোলিজরা মনে করে মেয়ের বাবার কাছে হাত না পেতে উল্টা তাকে উপহার দেয়া দরকার। কিন্তু আমাদের সভ্য দেশে যৌতুকের বলি হয়ে প্রতি বছর কত হাজার নারী নির্যাতনের শিকার হয় সেটা আর তাদেরকে বলতে গেলাম না।
এখানে দীর্ঘ তিন বছরে অনেক গুলো ক্যাম্পে ছিলাম । কামানিওলা, লুবিম্বি, কাবুমু, কিওনভু, কালামা এবং তুবিম্বি। বাংলাদেশ মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ার(কন্সট্রাকসান) ইউনিটের সাথে কাজ করার কারনে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সুযোগ হয়েছে । কোন এক উদ্ভুত কারনে(হতে পারে ওদের ভাষা বোঝার কারনে,আচার আচরণ বা সহযোগিতা করার মানসিকতার কারনে) মানুষ আমাকে প্রচণ্ড রকমের পছন্দ করে । সে জন্য আমাদের দায়িত্বের বাহিরের অনেক আবদার নিয়ে আসে কেউ কেউ। সিনিয়রদের সহযোগিতায় সাধ্যের মধ্যে কিছুটা সমাধান করার চেষ্টা করেছি। এ রকম মানসিকতার জন্য বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সুনাম আছে এখানে। মোটামুটি যেখানেই যাই ছোটো বড় সবাই আমাকে নাম ধরে ‘কাইয়ুমু’ বলে ডাকে। পাশের বাড়ির লোকের মতো কাছে এসে বসে গল্প জুড়ে দেয় । আমার বাড়ির খোঁজ খবর ,বাংলাদেশ কেমন এবং এটা বিশ্বের কোন অঞ্চলে,ওখানে সব মানুষ সাদা এবং ধনী কিনা, ওখানে মানুষ কি খায় ইত্যাদি জানতে চায় । আর যাওয়ার সময় অবধারিতভাবে “বিস্কুই” বিস্কুট চেয়ে বসে। পথচারীদের কেউ কেউ তাদের এই ভিনদেশী স্বজনকে “পোতি ফ্রের,কমো ?” ছোটো ভাই কি খবর? বলে কুশল জানতে চায়। এগুলো আমার আজীবন মনে থাকবে।
সর্বশেষ গতকাল একটা ক্যাম্প থেকে শেষ বারের মতো বিদায় নিয়ে আসলাম। ক্যাম্প থেকে গাড়ী নিয়ে বের হতেই দেখি অনেকগুলো ছোটো ছেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাদের বিদায় জানাচ্ছে। আমাকে দেখে ওরা ধুলা-ময়লামাখা ছোটো ছোটো হাত নেড়ে সমস্বরে বিদায় জানিয়ে বলল “কাইয়ুমু, ক্য দিউ ভু বেনিছ”। অর্থাৎ বিধাতা তোমার মঙ্গল করুন। কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে উঠলাম। চোখ ছল ছল করে উঠল।

জহিরুল কাইয়ুম
কঙ্গো থেকে
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×