মানুষ কেন বিদেশে যায় ?
(বিদেশ সম্বন্ধে পর্ব আকারে ক্ষুদ্র ধারনা দেওয়ার প্রয়াস)
মানুষ বিভিন্ন কারণে বিদেশে যায় । তাদের মধ্যে প্রধান কারণ গুলি হচ্ছে ১) চাকুরী বা অর্থ উপার্জন ২) স্টাডি বা পড়া লেখা করতে ৩) ভ্রমন করতে ৪) ট্রেনিং নিতে ৫) ব্যবসা বানিজ্য করতে ৬) স্থায়ীভাবে বসবাস করতে ৭) চিকিৎসা নিতে ৮) রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে ৯) খেলাধুলা করতে ১০) ধর্মীয় কারনে বা প্রচার করতে ১১) আত্মগোপন করতে ১২)ব্যক্তিগত কারনে ১৩)বিনোদন-সাংস্কৃতিক কারনে ১৪)রাষ্ট্রীয়-সরকারী কাজে ১৫)ইনভাইটেশনে-হাইয়ারে ১৬)কর্মের সুবাদে
১) বিদেশে যাওয়ার অন্যতম কারণ চাকুরী বা অর্থ উপার্জনঃ বিদেশে যাওয়ার তাই অন্যতম কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ।এক সময় বিদেশ থেকে ভাগ্যের অন্বেসনে ইউরোপের মানুষ ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিলো ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। পৃথিবীর অন্যতম সম্পদে ভরপুর ছিলো উপমহাদেশ। নেদারল্যান্ডের ওলন্দাজ, পর্তুগালের পর্তুগিজ ও ইংল্যান্ডের ইংরেজরা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দুঃভাগ্য এখন আমরা ঐসব দেশে ভাগ্যের অন্বেসনে অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য যায় । মানুষ বিভিন্নভাবে অর্থ উপার্জন করে কেউবা বৈধভাবে আবার কেউ অবৈধভাবে । ছোট বড়, উচু নিচু সবধরনের কাজ করতে হয় । সততা,যোগ্যতা ও দক্ষতানুযায়ী মুলত কাজের মুল্যায়ন করা হয় ।তবে যারা ভালো তারা কেউ বিজ্ঞানী,গবেষক, শিক্ষক,ডাক্তার ,ইঞ্জিনিয়ার,প্রশাসনিক কর্মকর্তা,ম্যানেজার, টেকনিশিয়ান,নার্স,ইমাম, মুয়জ্জিন সহ সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত । কেউ নিস্ন বেতনে মানবেতর জীবন যাপন করে আবার উচ্চ বেতনসহ সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তদের সংখ্যাও কম নয় । কেউ ঝাড়ুদার, কেউ বা মালি, কেউ হোটেলের চারদেওয়ালের অন্দরমহলে কাজেরত,কেউ ফেরিওয়ালার কাজ করে ।গাড়ির ওয়ার্কশপে,ট্যাক্সি ক্যাবে,ইন্ডাষ্ট্রি ফ্যাক্টরী,সুপার মল,চেইন স্টোর গুলিতে ও অনেকে কাজ করে । দেশ ভেদে কাজের ধরন ভিন্ন হয় ।যেমন মধ্য প্রাচ্যে উট-দুম্বাজাতীয় পশু চরানো, তেলের পাম্প,বিল্ডিং স্থাপনার শ্রমিক,ঘর গৃহস্থালীর কাজ……. ইত্যাদী ।মালয়শিয়ায় পামগাছ হতে পামওয়েল সংগ্রহ রত শ্রমিকরা অনেক ঝুকি নিয়ে কাজ করে । মাঝে মধ্যে সাপের কামড়ও খেতে হয় যদিও ভ্যাক্সিন দেওয়া থাকে । মরিসাসে মাছ ধরতে অনেকের সমস্যারসৃষ্টি হয় । ইতালিতে বেশীর ভাগ বাঙালী ফেরি করে । নির্দিষ্ট পর্যটন মৌসুমে ভালো আয় হয় । বাকী সময় বেশ করুন অবস্থা হয় । যুক্তরাষ্ট্র,অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপে অনেকে ড্রাইভিং পেশা বেছে নেয় । জাপানে ফ্যাক্টরীতে কাজ বেশী করে । সব কিছু রোবট বা মেশিন দ্বারা সম্ভব না । এ জন্য মানুষের গ্রহন যোগ্যতা শেষ হবে না ।তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রচুর কাজ আছে এবং কাজ করলে অর্থ পাওয়া যায় । পেশা নিয়ে কারোর মাথা ব্যাথা নেই উন্নত বিশ্বে। সবচেয়ে উত্তম হয় কোন একটি আন্তর্জাতিক মানের কাজে দক্ষ হওয়া এবং যে দেশে যাওয়া হচ্ছে ঐ দেশের ভাষা শিখে বিদেশে যাওয়া।
২) স্টাডি বা পড়ালেখাঃ এক সময় বাংলাদেশে পড়তে অন্যান্য দেশ হতে ছাত্ররা আসতো । মালয়শিয়ার ইতিহাস অতোটা সমৃদ্ধ নয় । বলতে পারেন জেলের জাতি । মালয়শিয়ারাও এ বাংলাদেশে পড়তে আসতো । বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটে । এখন উল্টা মালয়শিয়া আমরা পড়তে যায় । কিছুদিন পুর্বেও আমাদের দেশের ছাত্ররা ভারত পড়তে যেত । কিছু যেত সাইপ্রাস ও মালয়শিয়া। দিন বদলে গেছে ছাত্ররা এখন IELTS,TOEFL,SAT,GRE,GMAT করে বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন করছে ।নির্দিষ্ট দেশে পড়া লেখা এখন আর সীমাবদ্ধ নেই । দেশের একটি বিশাল অংশ যারা বিদেশে পড়া লেখা করতে যায় ।এমন সাবজেক্ট বা অুনষদ আছে যা সচারচার আমাদের দেশে দেখা যায় না । ঐ সকল অপ্রচলিত বিষয়েও পড়ারও সুযোগ আছে ।এছাড়া উচ্চতর আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন যাদের থাকে তারা বিদেশে পড়তে যায় ।কারণ দুঃখ জনক হলেও সত্য যে বিশ্ব র্যাঙ্কিং এ যে প্রায় দু’হাজার শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশী কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম নেই ।শিক্ষার গুনমান, পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধা অপ্রতুল । পড়ালেখার ব্যয় নিজে মেটানোর তেমন পরিবেশ এখনও সৃষ্টি হয় নাই । আমাদের প্রচলিত পড়া লেখা বতৃমান বিশ্বে টিকে থেকে নের্তৃত্ব দিতে ব্যর্থ হচ্ছে ।মেধা থাকা সত্বেও সুষ্ঠ পরিকল্পনা ও তার প্রয়োগের অভাবে মেধা তেমন কোন কাজে আসছে না ।রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ন,দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যস্থাপনা পড়া লেখার মারাত্মক ক্ষতি করছে । এরপর আছে ছাত্র রাজনীতি যা ছাত্রদের পড়া লেখার অনেক ক্ষতি করে ।রাজনৈতিক লেজুর বৃত্তির ফলাফল খুব হতাশা জনক ।বিভিন্ন দাঙ্গা হাঙ্গামার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে । এমন কি মুল্যবান জীবন দিতে হয় । এসব বিভিন্নমুখী নেতিবাচক কারণে মানুষ বিদেশে লেখা পড়া করে । আর বিদেশী ছাত্র এ পরিবেশে আসার প্রশ্নই আসে না । অনেক মেধাবী ছাত্র আছে যারা স্কলারশীপ নিয়ে বিদেশে পড়ছেন । একটি গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার হচ্ছে যারা লেখা পড়ার জন্য বিদেশে যান একটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আর বাড়ি হতে টাকা নেওয়ার প্রয়োজন হয় না । তবে উন্নত বিশ্বে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের নিয়ম মেনে চলা উচিত । নিয়মের ব্যতিক্রম করলে নানান ঝামেলায় পড়তে হয় । সাধারণত অধিকাংশ দেশে সপ্তাহে ২০ ঘন্টার বেশী কাজ করা যায় না । তবে ভ্যাকেশনে প্রচুর কাজ করা যায় । লেখা পড়া শেষে কেউ আবার চাকুরীও পেয়ে যান । ছাত্রদের বড় একটি অংশ ঐ দেশের স্থায়ী নাগরিকত্ব নিয়ে থেকে যান ।
বাকী অংশ ২ (পরবর্তীতে)---------- চলবে------
বিদেশ নিয়ে যত কথাঃ বাকী অংশ ২ ---( পর্ব-১ )
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:১০