বি-ল্যান্ডে রাজনীতির কমেডি সিক্যুয়েল- বছরের পর বছর চলছে একই চলচিত্র, ’রঙিন রুপবান’ । শুধুমাত্র, অভিনেতা-অভিনেত্রী বদলে গেছে, স্ক্রিপ্ট-ক্যারেক্টার-ডিরেক্টর একই আছে । দেখুন তাহলে-
’তালব্য শ-১’:
ব্যাপক জনপ্রিয় চরিত্র, দেশকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যাওয়ার পর, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তার শাসনকে সমালোচকরা কর্তৃত্ববাদ বলে মনে করেন, বিশেষ করে একদলীয় রাষ্ট্র, বাক্সাল তৈরির মাধ্যমে। তার সময়কাল রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং দুর্ভিক্ষ পীড়িত ছিল, যার ফলে তার নেতৃত্বের প্রতি জনগনের মোহভঙ্গ ঘটে ।
’তালব্য ‘শ-২’:
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একাধিকবার ক্ষমতায় থাকাকালীন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পতন, মানবাধিকার সমস্যা এবং দুর্নীতির জন্য ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন ।
'জেড':
"কিছু একটা ছিল": ...শ-১ এর হত্যার পর, ইনি ক্ষমতায় আসেন এবং বহুদলীয় রাজনীতি এবং বাজার অর্থনীতি পুনঃপ্রবর্তন করেন, যার ফলে দেশে কিছুটা স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি আসে। বেশ কিছু অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচি শুরু করার জন্যও তাকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়।
'ই':
একজন সামরিক স্বৈরশাসক, বিনোদন ও ভাঁড়ামোর জন্য বিখ্যাত ছিলেন । যিনি ১৯৮২ সালে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। তার নয় বছরের শাসনকাল রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও দুর্নীতি ও নারী কেলেংকারীতে ভরপুর চিহ্নিত ছিল, যা জনসাধারণের মধ্যে হতাশার পরিমান বাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল ।
• 'কে':
’তালব্য-শ-২ এর মতো, ইনিও একাধিক মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার প্রশাসনের বিরুদ্ধেও দুর্বল শাসন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুর্নীতির সূচকে পর পর চ্যাম্পিয়ন ট্রফি পাওয়ার সুখ্যাতি আছে ।
এর থেকে বোঝা যায় যে, বাংগুদেশে বিভিন্ন ধরনের নেতা ক্ষমতায় আসার পরও, দেশের রাজনীতিবিদ শ্রেণী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাধীনতার পর থেকে ৫৪ বছরের ইতিহাসে জনগণকে ধারাবাহিকভাবে হতাশ করেছে ।
’তালব্য শ-১‘ এবং ’ওয়াই’ উভয়ই "যা করার কথা ছিল তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন" এই দাবি উভয় নেতার প্রতি জনসাধারণের চক্রবৃদ্ধি হতাশা ব্যক্ত করে, প্রাথমিকভাবে উভয়কেই প্রচুর জনপ্রিয়তা, সম্ভাবনা এবং প্রতিশ্রুতির সাথে দেখা হত ।
তাদের ব্যর্থতার কারন সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণ থেকে এসেছে: ......শ-১ কর্তৃত্ববাদ, স্বজনপ্রীতি এবং কঠোর দমন-পীড়ন, অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, দুর্ভিক্ষের কারনে প্রানহানি- এসবের জন্য জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছিলেন, অন্যদিকে ‘ওয়াই’ এখন তার অন্তর্বর্তীকালীন নেতৃত্বে দেশ বিশৃঙ্খলার দিকে ঝুঁকে পড়ার জন্য নিন্দার মুখোমুখি হচ্ছেন।
ভিন্ন প্রেক্ষাপট, একই ফলাফল
এই নেতাদের ব্যর্থতার মধ্যে মূল পার্থক্য প্রেক্ষাপটে । ...শ-১ ও শ-২ ব্যর্থতা ছিল ইচ্ছাকৃতভাবে কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতা একীভূত করার ফলাফল, যার ফলে জনসাধারণের আস্থা নষ্ট হয় এবং তাদের শাসনের সহিংস অবসান ঘটে। বিপরীতে, ’ওয়াই’ এর ব্যর্থতাগুলিকে ভাঙা রাজনৈতিক দৃশ্যপট এবং শাসনের প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জগুলি পরিচালনা করতে অক্ষমতার ফলাফল হিসাবে দেখা হয় । তার সরকারের নিষ্ক্রিয়তা এবং পরিবর্তনের পথে ভুল পরিচালনা তার মেয়াদের শুরুতে তিনি যে জনসাধারণের আস্থা অর্জন করেছিলেন তা নষ্ট করে দিয়েছে।
’ওয়াই’-এর ব্যর্থতা
একসময় নিরপেক্ষ এবং বিশ্বব্যাপী সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে সমাদৃত ’ওয়াই’, ….শ-২-কে ক্ষমতাচ্যুত করার ছাত্র বিদ্রোহের পর বিপুল জনসাধারণের আশা নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তবে, এক বছরেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পর, বড় দাগে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, অর্থনৈতিক স্থবিরতা সামাল দিতে না পারা এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগে ইনি গনমানুষের আশা ভংগ করেছেন ।
সুনীলদা......... ৫৪ বছর কাটলো...... কেউ কথা রাখে নি । যুগে যুগে নাদের আলীদের মিথ্যে বয়ানে আমাদের পূর্বপুরুষেরা এবং আমরা আর কত বড় হতে হতে এখন বিলীন হবার পথে ।
এই দেশের রাজনীতি, স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ানদের সিরিয়াল, সিক্যুয়েল- বছরের পর বছর চলছে একই চলচিত্র, ’রঙিন রুপবান’ । শুধুমাত্র, অভিনেতা-অভিনেত্রী বদলে গেছে, স্ক্রিপ্ট-ক্যারেক্টার-ডিরেক্টর সেইম । যে কেউ সাধারন মানের আইকিউ আছে এমন মানুষ নির্ভুল বলতে পারবেন আগামী ২০৫০ পর্যন্তেএই দেশটিতে সরকার কি করবে, তাদের প্রধান কি করবেন, বলবেন এবং কি করবেন্না বা বলবেন্না ।
বড় আশা জাগানিয়া ছিল জেন-জি ২০১৮, ২০২৪-এর কোটা বিরোধী আন্দোলন । ইতিমধ্যে, সেই হিসাবও বরাবর পাওয়া গেছে, একই পথে তারাও হাটছে- কিছুমাত্র ব্যতিক্রম হয় নাই ।
হ্যাঁ, "বাঙ্গুল্যান্ড" এবং হতাশা- দুই-ই সমার্থক শব্দ, জন্মসূত্রে স্থায়ী বাসিন্দা বাঙ্গিদের যাদের আর কোথাও যাবার জায়গা নেই- এটা মেনে নিয়ে বাঁচতে জানতে হবে । সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে- কিছু না বোঝা, না শোনা, আশা না করা, অন্যায়-অনিয়মকে নিশ্চিত ধর্ষন হিসাবে উপভোগ করে সুনাগরিক হয়ে উঠা । মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের সেই সামর্থ্য ও শক্তি দিন, আমীন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


