গ্রামে বেড়াতে এসেছি । পড়াশুনার চাপে তো আজকাল আর গ্রামে আসাই হয় না।একটি সুন্দর সন্ধ্যা। পুকুর পাড়ে বসে আছি। আকাশের দিকে তাকাতেই আমার তিক্ত মনটা কেন জানি খুব ভাল হয়ে গেল। পুরোটা আকাশ তারায় ছেয়ে আছে। শহরের আকাশে তো আর সব সময় তারা দেখা যায় না। কিন্তু গ্রামের আকাশে হরহামেশাই এই জিনিস চোখে পড়ে। ও আচ্ছা আমার মনটা কেন তিক্ত এইটাই তো বলা হয় নাই। তোমার সাথে আমার গত ১ সপ্তাহ ধরে কোনো কথা হচ্ছে না। তুমি কেন বোঝো না যে তুমি ছাড়া আমার আর কোনো অবলম্বন নাই। হুম, আমার ও একটা অন্যায় ছিল। আমার অন্যায় ছিল, আমি তোমাকে শুধু আমার করে পেতে চেয়েছিলাম। আমি চাইনি তোমাকে কারো সাথে শেয়ার করতে। আচ্ছা তুমি ই বল তোমাকে কি আমি কারো সাথে শেয়ার করতে পারি?
সন্ধ্যা থেকেই ভাবছি তোমাকে আজকে ফোন করব। আমাদের দুই জনের যত ভুল বুঝাবুঝি আজকে সব দূর করব। আজকে যেকোনো ভাবেই হোক তোমার মাথায় নতুন যেই ভূত চেপেছে তা দূর করব। আমি শুধু রাতের আধাঁর আরো ঘন হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। অপেক্ষা করতে করতে কখন জানি পুকুর পাড়ে ঘুমিয়ে গেছি। যখন ঘুম থেকে জেগে উঠি তখন দেখি মোবাইল এ তোমার একটা মিস্ড কল। বিশ্বাস করতে পারবে না মনটা যে কতটা খুশিতে ভরে উঠল। মনে হতে থাকল এই ঘন অন্ধকার রাত যেন শুধু তোমার আর আমার জন্য। সাথে সাথে তোমাকে ফোন করলাম। আর যখন দেখলাম আমি ফোন করার সাথে সাথেই তুমি ফোন রিসিভ করেছ তখন তো খুশিতে পুকুরের সচ্ছ জলে একবার ঝাপ ই দিতে ইচ্ছা করল। অনেক কষ্টে আমার সেই ইচ্ছা দমন করলাম। কারন এখন কোনো পাগলামি করলে হবে না। এখন তোমার সাথে এমন ভাবে কথা বলতে হবে যাতে করে কোনো ভাবেই তোমার আগ্নেয়গিরিটা ফেটে না যায়। তুমি যখন হ্যালো বললে আমার মনে সে কি আনন্দ। এইত সেই মিষ্টি সুর। কিন্তু সমস্যা হল সুরটা কেমন জানি বিষণ্ণ হয়ে আছে। আপাতত এই বিষণ্ণ সুরই আমার জন্য অমৃত।
আশ্চর্য ব্যাপার আমি তখন পর্যন্ত জানতাম না যে আমার জন্য বিরাট এক ধাক্কা অপেক্ষা করছে। প্রথমে আমার সব খবর নেওয়ার পরই তুমি আমাকে একটার পর একটা ধাক্কা উপহার দিতে শুরু করলে।
ধাক্কা ১ – এই যতদিন তুমি আমার সাথে কথা বলনি, ততদিন নিয়মত তোমার সাথে ফয়সালের কথা হচ্ছিল। এতে ও আমি খুব একটা অবাক হইনি, কেননা তুমি যে আমার বারবার নিষেধ সত্ত্বেও ফয়সাল এর সাথে কথা বল তা তো আমি জানি ই। কিন্তু তুমি কখনো আমার কাছে ওর নামে খুব একটা প্রশংসা কর নি। আজকে যে তুমি তাই করতেছ। (ফয়সাল চরিত্রটা সবার কাছে খুব অপরিচিত। আমি একটু পরই ওর পুরিচয় দিচ্ছি।)
ধাক্কা ২ – হঠাৎ করেই তুমি খুব অস্পষ্ট করে বললে I Love You. আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না এইটা কি? প্রশংসা করছে ফয়সাল এর আর প্রেম নিবেদন করছে আমাকে। এইটা কেমন কথা? আমি তোমাকে আবার ও বলতে বললাম। তুমি আবার ও একই কথা বললে। কিন্তু ব্যাপারটা আমি নিশ্চিত হতে পারলাম না। আমি এইবার তোমাকে প্রতিটি শব্দ আলাদা আলাদা ভাবে উচ্চারন করতে বললাম। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে তুমি আমাকে প্রেম নিবেদন করতেছ না। তুমি বলেছ “ I Love Faisal” . এতক্ষনে আমি সত্য বুঝতে পারলাম যে তুমি ফয়সাল এর প্রশংসার পাশাপাশি আমাকে প্রেম নিবেদন করছ না। প্রেম নিবেদন করেছ ফয়সালকেই।
ধাক্কা ৩ – তুমি আর বললে যে তুমি আমার সাথে নিজের ক্যারিয়ারকে নিরাপদ মনে করছ না। আমি ঠিক ভাবে পড়াশুনা করি না। সব পরীক্ষাতে প্লেস পাইনা।
ধাক্কা ৪ – ফয়সাল তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসে। হয়ত আমার চেয়ে ও বেশি ভালবাসে। ও নাকি তোমাকে ছাড়া কিছু চিন্তাই করতে পারে না। নির্লজ্জের মত এই কথাগুলো বলতে তোমার একটুও লজ্জা করেনি। আমাদের ৩ বছরের পরিচয়ে কি আমি তোমাকে ভালবাসতে পারিনি?? কি করিনি আমি তোমার জন্য??
ধাক্কা ৫ – আমি নাকি খুবই স্বার্থপর। আমি নাকি আমার নিজেকে ছাড়া আর কিছুই বুঝি না। আমার কাছে নাকি আমার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবই সব। কিন্তু ফয়সালের সব কিছুই নাকি তুমি। এই কথা গুলো তুমি কিভাবে বললে?? কিছুদিন আগেই তো আমার সাথে কথা বলার সময় এই ফয়সালকে নেশাখোর বলে গালাগালি করেছিলে। আজ সেই সব কই??
এইবার আমি আমার কথা বলি। আমিতো হতবাক হয়ে গেছি। এই কথাগুলো কি তুমি বলছ?? এইত কয়েকদিন আগের কথা যখন কোনো কারনে তোমাকে বিশ্বাস নিয়ে কথা উঠলেই তুমি খুব অহঙ্কার এর সাথে বলতে তুমি ভুলে যেয়ো না যে আমি রিম্পা আপুর বোন। তাই আমার চরিত্রটা ও রিম্পা আপুর মতই হবে। (ফয়সাল এর মত রিম্পা আপু চরিত্রটাও আমি একটু পরে সবাইকে খুলে বলছি।)
আজ কোথায় তোমার সেই কথা??? এত তাড়াতাড়ি মানুশের অহঙ্কার শেষ হয়ে যায়??
ফয়সাল – ফয়সাল হচ্ছে ওদের ২ ব্যাচ বড় ভাই। যে কয়েকদিন ধরে ওর সাথে ভাব করার খুব চেষ্টা করছিল। আমি যদিও ব্যাপারটা জানতাম। কিন্তু ও আমার নিষেধ থাকা স্বত্তেও ফয়সালের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। যা আমি জানতাম না। যদি কখনো কিছু জেনে ফেলতাম তখন যেকোনো ভাবেই হোক ও কথা টা এড়িয়ে যেত।
রিম্পা আপু – রিম্পা আপু ওর আপন বড় বোন। যে কিনা তার নিজের ভালবাসার জন্য তার পরিবারকে ত্যাগ করেছে। যদিও রিম্পা আপু যার জন্য এত বড় ত্যাগ স্বীকার করেছে সে নাকি ভবঘুরে টাইপ এর। কিন্তু রিম্পা আপু তার ক্ষেত্রে যথেষ্টই সফল। তারপর ও সে নাকি তার ভালবাসা ছেড়ে পালায়নি।
তোমার কাছে আমার কিছু প্রশ্ন???
*** তুমি আমার সাথে যেই কথাগুলো বলতে এখন সেই কথাগুলো একি ভাবে ফয়সালকেও বল??
*** এখন কি ফয়সালকে তোমার নেশাখোর মনে হয় না???
*** যেইভাবে রাতের বেলা তোমার হোস্টেল এর বারান্দায় বসে তুমি আমাকে স্বপ্ন দেখাতে সেই স্বপ্ন কি তুমি এখনো দেখ??
*** আমার রুমের সাথের বারান্দার কোনায় যেই টেবিলটার উপর বসে আমি সারারাত তোমার সাথে কথা বলতাম, সেই টেবিলটা কি এখন আমি সরিয়ে ফেলব??
*** আমাকে দেওয়া তোমার বইগুলো এখন আমি কি করব? এগুলোর দিকে তাকালেই যে আমার তোমার কথা মনে পড়ে।
*** তুমি কি এখন ফয়সালকেও বল যে তুমি রিম্পা আপুর বোন???
ভাল থেকো। আমি হয়ত তোমাকে আর কখনো পাব না। আর তুমি যদি কোনোদিন আমার জীবনে ফিরে আসো, তবু ও হয়ত আমি তোমাকে মেনে নিতে পারব না। শুধু এইটুকুই বলি আমার সাথে তুমি যা করেছ ফয়সালের সাথে একই প্রতারনা কর না। নিজেকে আর ছোট কোরো না।
(অন্য একটি ব্লগ এ পূর্বে প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ২:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




