ভ্যাকসিন আপনাকে সুরক্ষা দিবে সিরিয়াসলি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হাত থেকে। কিন্তু
ভ্যাকসিন আসার আগে যত লোক করোনা ভাইরাস এ মারা যেত, বিশ্বব্যাপি/ধনী দেশগুলি সহ অনেক দেশে ৫০% এর বেশী লোকজন ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও,মারা যাওয়ার হার কিন্তু সে অনুপাতে কমছে না...। আমি জোর দিচ্ছি অনুপাত শব্দটার উপর। এর কারন হল করোনা আক্রান্ত এর হার কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আসার পর থেকে বেড়ে চলছে। বেশী নাম্বারে আক্রান্ত হলে তার ১-২% তো মারা যাবেই। অবশ্য ভ্যাকসিন না থাকলে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা যে অনেক বেশী লোক মারা যেত, সেটা বুঝা যাচ্ছে। ভ্যাকসিন ডেল্টা দ্বারা মারা যাওয়া থেকে রক্ষা করছে কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার হার কমাতে পারছে না...। বেশী আক্রান্ত মানে মৃত্যু এর সংখ্যা ও তেমন কমছে না। ভ্যাকসিন না থাকলে, এখন মৃত্যুর হার সামাল দেওয়া যেত না।
এর থেকে মুক্তি পেতে হলে সংক্রমন কমাতে হবে কিন্তু কেন ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও সংক্রমন কমছে না???? এর কারন হচ্ছে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে ইনজেকসন দিয়ে যেটা আপনার ফুসফুস কে রক্ষা করবে কেননা যে এন্টিবডি তৈরী হয় সেটা শরীরে সার্কুলেট করে আপনার ইন্টারনাল অর্গান গুলিকে সুরক্ষা দিচ্ছে কিন্তু প্রবলেম হল যে করোনা ভাইরাস এর মেইন প্রবেশ দ্বার হল আপনার শ্বাসনালি। শ্বাসনালী তে Mucus নির্গত করার টিস্যু তেই ভাইরাস বসবাস করা আরম্ভ করে কিন্তু যেহেতু ইনজেকশান দ্বারা যে এন্টিবডি তৈরি হয় সেগুলি কে বলে IgG/IgM type, সেগুলি শ্বাসনালিতে যায় না, তাই ভাইরাস ফুসফুসে আক্রান্ত করতে পারে না কিন্তু শ্বাসনালীতে বহাল তবিয়তে বংশবিস্তার করতে থাকে- ফলাফল asymptomatic infection. যেহেতু ভ্যাকসিন নেওয়া লোকজন এর কোন সিম্পটম নাই কিন্তু তার শ্বাসনালীতে থাকা ভাইরাস খুব সহজেই অন্যদের কে ও আক্রান্ত করছে কেননা ভাইরাস এ আক্রান্ত ব্যাক্তি জানেই না যে সে আক্রান্ত।
শ্বাসনালিতে যে এন্টিবডি থাকে তা হল IgA type. এখন এই IgA type এন্টিবডি শ্বাসনালীতে বানাতে হলে আপনার ভ্যাকসিন টা দিতে হবে নাকে স্প্রে করে..। ইনজেকশন দিয়ে না। আপনি দেখবেন যে পলিও টিকা খাওয়ানো হয়...পলিও যদি ইনজেকশন দিয়ে দেওয়া হত তাহলে খুব একটা ইফেক্টিভ হত না। কেননা পলিও ভাইরাস পানি বাহিত হয়ে পেটের ভিতর Mucus টিস্যু (mucosa) দিয়ে নার্ভাস সিস্টেমে পৌছে গিয়ে প্যারালাইসিস করে। তাই টিকা খাওয়ানো হলে ই ভ্যাকসিন সরাসরি পেটের ভিতর এর Mucus টিস্যু (mucosa) পৌছে যায় আর সরাসরি ভাইরাস কে নির্মুল করে।
বাচ্চা/টিন এজদের নাকের অনেক গভীরে (nasopharynx) Bronchus-associated lymphoid tissue থাকে যেটা এডাল্টদের মাঝে নাই, এই lymphoid tissue গুলি থেকে ভাইরাস এ আক্রান্ত হলে ইমিউন রেসপন্স এর দ্বারা প্রচুর পরিমানে IgA type এন্টিবডি তৈরী করতে পারে (mucosal immune system) এবং সেই জন্যই এখন মনে করা হচ্ছে যে বাচ্চা/টিনএজ রা হয়ত এই কারনেই বয়স্কদের থেকে বেশী সুরক্ষিত করোনা ভাইরাস থেকে। এ ব্যাপারে সিএনএন এর এই News Report টা দেখতে পারেন।
উপর এর ছবিতে ই দেখুন স্প্রে ভ্যাকসিন কিভাবে ভাইরাস এর বংশবৃদ্ধি কমাতে পারে নাকের মাঝে কেননা নাকে স্প্রে করলে, নাকের Mucus নির্গত করার টিস্যু থেকে প্রচুরপরিমানে এন্টিবডি তৈরী হবে (IgA type) যেটা ভাইরাস কে নির্মুল করতে সাহায্য করে।
কিন্তু ইনজেকশন দিয়ে ভ্যাকসিন নিলেও নাকের মাঝে ভাইরাস পরিমান অনেক বেশী থাকবে কেননা ইনজেকশন দ্বারা তৈরী IgG/IgM type এন্টিবডি নাকের মাঝে যায় না বললেও চলে।
জনমত গড়ে না উঠলে স্প্রে ভ্যাকসিন তৈরী হবে না....
আমার মতে সবাই কে বুস্টার শট দেওয়া হোক নাকে স্প্রে ভ্যাকসিন দিয়ে, তাহলে ইনজেকশন টিকা রক্ষা করবে ফুসফুস আর স্প্রে টিকা বন্ধ করবে সিম্পটম ছাড়া ভাইরাস এর বংশবৃদ্ধি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩৪