somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেভিড লিউ এর আবিস্কার

১২ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্যান্সার এ আক্রান্ত কিশোরী ইতিহাস গড়েছেন গতকাল লিউকিমিয়া থেকে 'মুক্ত' হয়ে। যেটা হয়েছে ডেভিড লিউ এর হাত ধরেই...নিচে বিস্তারিত।

যখন একজন শিশু জন্মগ্রহন করে, সে তার বাবার থেকে অর্ধেক এবং মায়ের থেকে অর্ধেক ডিএনএ নিয়ে ই জন্ম নেয় এবং এটাই তার জীবনের গড়ে উঠার ব্লু প্রিন্ট.. তার চোখের রং কি হবে, তার গায়ের রং কি হবে, সে কি লম্বা হবে, সে কি কোন রোগে আক্রান্ত হবে তার সব কিছুই 'লিখা' থাকে এই ডিএনএ তে, এটাই তার ভবিতব্য, চেন্জ করার কোন উপায় নাই।

কিন্তু ২০১২ সনে যখন Emmanuelle Charpentier and Jennifer Doudna, (University of California, Berkeley) CRISPR টেকনোলজি নিয়ে আসলো, তখন সারা বিশ্ব চমকে গেল কেননা এই টেকনোলজি দিয়ে ডিএনএ এডিট করার উপায় বের হল, তার মানে ডিএনএ আর কোন জীবের জন্য ভবিতব্য না, দরকার মত একে চেন্জ করা যাবে আর তাতে কেউ যদি কোন 'খারাপ' ডিএনএ নি য়ে জন্মগ্রহন আর তার তার জন্য কোন রোগ যেমন ক্যান্সার এ আক্রান্ত হয়, হয়ত একদিন তার ডিএনএ চেন্জ করে সেই 'খারাপ' ডিএনএ কে এডিট করে 'ভাল' ডিএনএ তে রূপান্তরিত করা যাবে। তবে বলা যত সহজ, করা তত সহজ না.... অনেক বছর লেগে যাচ্ছে এর পরিপূর্ন এপ্লিকেশন...বায়োলজি রিলেটেড ল্যাব গুলিতে এখন CRISPR টেকনলজি ই প্রধান টেকনিক হয়ে দাড়িয়েছে এর বিবিধ এপ্লিকেশন এ। আমি নিজেও একজন ব্যবহারকারী।

তবে একে আরো রিফাইন করেছেন ড: ডেভিড লিউ যিনি নেক্সট জেনেরেশন CRISPR টেকনোলজি আবিস্কার করেছেন যাকে বলা হচ্ছে Base Editing. এটার নাম বেইস এডিটিং কেননা ডিএনএ তৈরী হয় চারটা ক্যামিক্যাল দিয়ে যাদেরকে বলা হয় Base- সংক্ষেপে বলা হয় A, T, G, and C.


আমাদের প্রত্যেক কোষে এর ডিএনএ তে আছে ৩,০০০,০০০,০০০ টা বেইস মানে A, T, G, and C এই চারটা বেইস নানা পর্যায়ক্রমিক বিন্যাসে তিন বিলিয়ন বার একটা বেইস এর সাথে আরেকটা বেইস জোড়া লেগে আছে যেমন ATTGCAGTCAGCAGTAGCAGTAGACGCAGATGACACACGT এই ভাবে ...........এখানে আমি লিখলাম ৪০ টা বেইস কিন্তু আমাদের প্রত্যেক কোষের ডিএনএ তে আছে তিন বিলিয়ন টা বেইস। আমাদের অনেক রোগ হয় শুধু মাত্র ভুল বেইস এর জন্য...যেমন উপর এর ৪০ টা বেইস মাঝে ২৯ নং বেইস হল G (বোল্ড) যেটা সবার ডিএনএ এর মাঝে একই পজিশনে আছে কিন্তু যার কোন রোগ আছে যেমন বেটা থ্যালামেশিয়া, তার হয়ত এই ২৯ নং বেইস টা হল C (G এর বদলে)। ডেভিড দেখালো যে তার আবিস্কার দ্বারা , ভুল বেইস C কে এডিট করে নরমাল বেইস G তে রূপান্তরিত করা যায়, এর এতে বেটা থ্যালামেশিয়া রোগও কিউর করা সম্ভব হবে।

গতকাল সারা বিশ্ব দেখল যে ডেভিড এর এই আবিস্কার এর ছয় বছর এর মাথায় বৃিটেনে ১৩ বছর এর এক কিশোরীর লিউকোমিয়া রোগ কিউর হওয়ার গল্প..বাংলাদেশের পত্র/পত্রিকা সহ সারা বিশ্বের সোশাল মিডিয়া ও অন্যান্য গন মাধ্যমে খুব emphasis দিয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে দেখলাম দায়সারা ভাবে খবর টা ছাপা হয়েছে কিন্তু কিভাবে কাজ করে সেটা জানানো টা আমি জরুরী মনে করি বিধায় এই পোস্টের অবতারনা।

বিবিসি এর ওয়েব সাইটে প্রথম খবর টা প্রকাশ হয় পরে ডেভিড লিউ নিজে টুইট করে খবরটা জানান দেন।
Leukemia cured through base editing
ঐ কিশোরী খুবই জঠিল লিউকোমিয়াতে ভুগছিলেন যার কিউর হবার সম্ভাবনা ছিল অলমোস্ট জিরো। কেননা তার T-cells যেটা a type of white blood cell that protects the body from infections- ক্যান্সার এ আক্রান্ত হয়।



বিবিসি এর উপর এর ছবিতে দেখানো হয়েছে কিভাবে এই কিশোরীর লিউকোমিয়াকে কিউর করা সম্ভব হয়েছে। ডোনার কাছ থেকে নরমাল T-cells নিয়ে সেই কোষের ডিএনএ এর তিন যায়গায় বেইস এডিট করা হয়। প্রথম এডিট করা হয় ডিএনএ তে যাতে ডোনার T-cells গুলি কেমোথেরাপিতে নস্ট না হয়, আরেকটা এডিট করা হয়েছে যাতে T-cells এর শরীরে যে পরিচিত মুলুক মার্ক আছে তাকে সরিয়ে নেওয়া হয় যাতে অন্য T-cells এই পরিবর্তিত T-cells কে ফরেন T-cells হিসাবে ডিটেক্ট করে ধ্বংস না করে দেয়, আবার ডোনার T-cells যাতে শরীর কে এটাক না করে সেটার জন্য ও আরেকটা বেইস এডিট করা হয়, সবার শেষে ডোনার T-cells কে ক্যান্সার সেল কে ডিটেক্ট/ধ্বংস করার জন্য একটা 'অস্ত্র' (রিসিপটর) দেওয়া হয়। এর সব কিছুই করা হয় শরীর এর বাইরে, তারপর এই আর্মড/পরিবর্তিত T-cells কে ঐ কিশোরীর শরীর ইনজেক্ট করা হয় এবং প্ল্যান অনুযা্যী এই পরিবর্তিত T-cells ক্যান্সার যুক্ত T-cells কে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।

এই বেইস এডিটিং দিয়ে মানব জাতিতে প্রায় ৩২,০০০ বিভিন্ন রোগ যার কারন শুধু মাত্র একটা ভুল বেইস এর জন্য হয়, তাকে কারেক্ট করার জন্য ব্যবহার করা যাবে
See here for details
ডেভিড শুধু বেইস এডিটিং ই আবিস্কার করেন নাই, তার নেক্সক্ট জেনেরেশন বেইস এডিটিং আরো যুগান্তরী ----- তার নাম হল প্রাইম এডিটিং... আমার খুবই একটা প্রিয় টপিক হল প্রাইম এডিটিং, তাই আমি আমার ক্লাশের ছাত্র/ছা্ত্রীদের টার্ম পেপার হিসাবে Every year CRISPR/Base Editing/ Prime Editing applications, compare/contrast, design experiment to apply one of the techniques in a mock disease নিয়ে টার্ম পেপার লিখতে দেই। গত বছর হার্ভাডে ডেভিড এর ল্যাব দেখতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল........আমার কাছে মেসি/নেইমার দের হিরো না ভেবে ডেভিড কেই হিরো হিসাবে ভাবতেই বেশী পছন্দ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৪৭
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×