somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খোঁজ দ্যা TALAASH

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আআমির খান !! বলিউড ইতিহাসের অন্যতম বাটকু, দুটি বিশাল কান আর সবচে “উঁচু নাক” বিশিষ্ট নায়ক এবং কিংবদন্তী। যিনি তথাকথিত জনপ্রিয়তায় বিশ্বাস করেন না, কোন এওয়ার্ড ফাংশানে পদধূলি দেন না, যেন তেন পত্রিকায় বাণী দেন না, স্বজাতি নায়ক’কূলের সাথে মিশ খান না এবং বছরে একবারের বেশি রূপালী পর্দায় খোমা দেখান না।

“দিল চাহতা হ্যায়” এর উচ্চাভিলাশী স্টাইলিস্ট এক্সিকিউটিভ, “মঙ্গল পান্ডে”তে বিশাল মোচ আর চুলের ব্রিটিশ আমলের সিপাহী, ক্ল্যাসিক সিনেমা “রাং দে বাসন্তী”র ডিজুস তরুণ ডিজে’র মেটামরফোসিস, “ফানা” সিনেমার বাবরী চুলের মৌলবাদী জঙ্গী, “তারে জামিন পার”এর আবেগী শিক্ষক, “গজিনী”র সিক্স প্যাকওয়ালা ন্যাড়া মাথার পাগলা এবং সর্বশেষ “3 ইডিয়টস” এ মেধাবী কলেজ পড়ুয়া !! যেখানে সমসাময়িক অন্যান্য সুপারস্টার’রা তাদের সেই চর্বিত চর্বণ ট্রেডমার্ক- তোতলা, ন্যাকা ন্যাকা স্টাইল, বুড়া বয়সে লুতুপুতু প্রেমের সুরসুরি মার্কা সিনেমা; কিম্বা পাঁঠার মতো শরীর আর এক্সপ্রেশনলেস মুখোভঙ্গী নিয়ে থার্ড ক্লাস কাহিনীর মারদাঙ্গা সিনেমা করে যাচ্ছেন, সেখানে আআমির খানের এই বৈচিত্রের প্রতি ডেডিকেশন এবং এর সফল রূপায়ন তাঁকে পরিণত করেছে তারা’র জগতের তারা’দের মধ্যে ভিন্নধর্মী এক উজ্জ্বল তারায়।

আআমির খান মানেই ক্ল্যাস, ব্যাতিক্রমী কিছু! তাই সিনেমাখোর জনতার ২০১২’এর “তালাশ” নিয়ে ছিল আকাশচুম্বী এক্সপেক্টেশনস। তাঁর আনকোরা গেটাপ - স্মার্ট পুলিশি ইউনিফর্মের সাথে ঝোলা গোঁফ; সাথে সাথে দেশ বিদেশে অনেক অনুকরণপ্রিয় বান্দর’কে দেখা গেল বেমানান মুখে ঝোলা গোঁফ ঝুলিয়ে উল্লুক সেজে ঘুরে বেড়াতে !! (আমিও চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পর্যাপ্ত হরমোনের অভাবে প্রজেক্ট বাদ দিতে হোল)।
তালাশের হলপ্রিন্ট মুক্তি পাবার পরদিনই এক ফেসবুকবন্ধু নামের অপশক্তি স্ট্যাটাস দিল, “দিলাম ফাঁস কইরা- কারিনা কইলাম ভূত। হেতেই হগগল আকাম কুকাম করিচ্ছে!! খি খি খি...” (যারা এই যুগেও হলপ্রিন্টে মুভি দেখে আর দেখার পর কাহিনী ফাঁস করে দেয়, তাদের ক্রস ফায়ারে ফেলে দেবার জন্য র‍্যাব বাহিনীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।) যাকগে, আআমির খানের মুভিতে ভূত? অসম্ভব !! এই গুজব’কে রিউমার ভেবে নিয়ে নিজেকে স্বান্তনা দিলাম, আর আশায় বুক বাঁধলাম। দেখলাম “তালাশ” এবং এক্সপেক্টেশন কি ফ্রাস্ট্রেশন হয়ে গেল কিনা, তা নিয়ে কনফিউশনে পড়ে গেলাম !!

TALAASH (2012)
পরিচালনাঃ রিমা কাগতি
আইএমডিবি রেটিং – ৭.৩


রাতের মুম্বাই। কমে আসছে ধীরে ধীরে ঘরমুখী মানুষের ভীড়, গাড়ীর চাকার গতি। বাড়ছে ঘর ছাড়া মানুষের অলস ব্যাস্ততা, রাতের রাণী’দের কৃত্তিম সলজ্জ আকর্ষণ। দুঃখবিলাসী মাতাল আর লালসা মেটাতে লোভাতুর নির্ঘুম সব চোখ। অমঙ্গলের আশঙ্কায় কু ডাক ডাকে কুকুর। হেড লাইট জ্বলে উঠে অভিজাত অন্ধকার রাস্তায়। ধেয়ে আসে দামী গাড়ী। প্রায় নির্জন রাস্তায় হঠাত অদৃশ্য কাউকে বাঁচাতে হার্ডব্রেক করতে গিয়ে টালমাটাল হয়ে যায় চালক, নিয়ন্ত্রণহীণ হয়ে পড়ে তীব্র গতির গাড়ী। স্কিড করে রাস্তার রেলিং ভেঙ্গে প্রচন্ড শব্দ তুলে উড়ে যায় পাশের সমুদ্রে। চোরাবালির মত ডুবে যায় মুহূর্তেই।

মশহুর নায়ক আরমান কাপুর নিহত! হত্যা, আত্মহত্যা নাকি দূর্ঘটনা? বেশ কিছু বছর আগে ঠিক এ জায়গাতেই আর ঠিক এভাবেই আরেকটা রহস্যময় দূর্ঘটনা ঘটেছিল; যার কোন কিনারা আজও হয়নি। সাইরেন বাজিয়ে উপস্থিত হোল পুলিশ, ইন্সপেক্টর সুরজান সিং। নায়কের অকাল মৃত্যুতে শোকাহত সারা দেশ, ভেঙ্গে পড়ে সাবেক নায়িকা স্ত্রী সোনিয়া, আতঙ্কিত হয় বন্ধু সাঞ্জয়। তোলপাড় উঠে শহরের নিষীদ্ধ পল্লীতেও।

ঘুম নেই ইন্স. সুরজানের চোখে; আর পাহাড়সমান কষ্ট বুকে বয়ে বেড়াতে বেড়াতে ক্লান্ত স্ত্রী রোশনি। অকালে চলে যাওয়া সন্তানের জন্য হাহাকার। ছোট্ট করন’এর মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি তাদের কেউই। স্মৃতিভারাক্রান্ত সুরজানের দিন কাটে তদন্তে, রোশনির একাকীত্বে। হঠাত তাদের নিস্তরঙ্গ জীবন এলোমেলো করে উদয় হয় এক অদ্ভুত নারী; ফ্রেনি। নাছোড়বান্দা ফ্রেনি’র দাবী; তাদের সন্তান নাকি পরলোক থেকে তার সাথে যোগাযোগ করছে; ছটফট করছে ছোট্ট করন তার দুঃখী বাবা মা’য়ের সাথে কথা বলতে! লজিক আর সূত্রে বিশ্বাসী সুরজান রাগতভাবে প্রত্যাখ্যান করে এই অতিপ্রাকৃত অস্তিত্ব, কিন্তু সন্তানহারা মা’য়ের মন দুলতে থাকে বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলায়, সে উদ্বলিত হয় তার হারানো মানিক’কে খুঁজে পাবার আশায়।

মনের ভেতর চাপা দেয়া এই করন প্রসঙ্গের অপ্রত্যাশিত উত্থানে দিশেহারা আবেগে উদ্ভ্রান্ত হয় কঠোর মনের সুরজান সিং। গাড়ী নিয়ে ঝড় তুলতে থাকে খালি রাস্তায়। হৃদয় মোচরানো কষ্টে লুকানো অশ্রু টপটপ পড়তে থাকে তার। হঠাত টোকা পড়ে তার থেমে থাকা গাড়ীর গ্লাসে; কম দামে ভালোবাসা কেনার লোভনীয় আহবান জানায় নিষিদ্ধ এক রূপসী; রোজী।



অদ্ভুত মাদকতাময় আকর্ষন এই রোজী’র। তার দেয়া সূত্র ধরেই নিষিদ্ধ পল্লীতে হাজির হয় পুলিশ। খোঁজ পড়ে দালাল শশী’র। আর লোভের গন্ধে আজানা পাকে জড়িয়ে পড়ে ফাইফরমাশ খাটা খোড়া তৈমুর। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে হারানো সবুজ ব্যাগ আর একটি ডিভিডি। নায়ক আরমান ব্ল্যাক মেইলের শিকার; ঘনীভূত হতে থাকে সন্দেহ। শশীর ফেলে দেয়া সীমকার্ডের কল লিস্টে পাওয়া যায় বন্ধু সাঞ্জয়ের নাম্বার।

২০ লাখ টাকার মোহে জীবন বাজি রাখে তৈমুর। স্বপ্ন দেখে বাজারের মেয়ে নির্মলা কে নিয়ে পালিয়ে যাবার, দূরে কোথাও। রূপের পসরা সাজিয়ে বসা এই মেয়ে গুলো কখনো কোথাও হারিয়ে গেলেও, কেও কি কোনদিন খোঁজ নেয়? স্তব্ধ রাতে কাঁঠালচাঁপা ফুলের গন্ধ; নির্জন নদীর তীর; অমোঘ টানে ফিরে আসে সুরজান; সেই রোজীর খোঁজে।

উঁচুতলার আরমানের মৃত্যু রহস্যের সাথে জড়িয়ে পড়ে নিচুতলার কিছু মানুষের স্বপ্ন, লোভ আর অস্পৃশ্য একটি মেয়ে; পার্থক্য বিলীণ হয়ে যায় বাস্তব অবাস্তবের; জীবন আর মৃত্যুর। মৃত্যুর পরে কি হয়? আত্মারাও কি অতৃপ্ত থাকে? তারাও কি কষ্ট পায় ফেলে আসা প্রিয় মানুষের কষ্টে? মৃত্যুনদীর ওপার থেকে কখনো ফিরে আসে পুরনো পাপ? প্রায়শ্চিত্তের নেশায়! অথবা ফিরে আসে কোন হারানো ভালোবাসা? দুঃখ ভুলিয়ে দিতে!

এক্সপেক্টেশন
এক্সপেক্টেশন অনুযায়ী এই সিনেমায় দেখার মত আছে শুধুমাত্র সুরজান সিং চরিত্রে আআমির খান, রোশনি; রাণী মুখার্জী আর বোনাস হিসেবে তৈমুর চরিত্রে নাওয়াজউদ্দীন সিদ্দীকী’র অসাধারণ অভিনয়।

এই সিদ্দীকীই কাহানী সিনেমাতে মি. খান চরিত্রে অভিনয় করে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। কে কে মেনন এর পর আরেকজন শক্তিশালী অভিনেতা পেয়েছে বলিউড নিঃসন্দেহে। কারিনা তো এমনিতেই দারুন সুন্দরী। আর প্রস. চরিত্রে তিনি একেবারে ন্যাচারাল অভিনয় করেছেন !!

ফ্রাস্ট্রেশন
খুন, রহস্য, ব্ল্যাকমেইলিং; সাথে পরাবাস্তবতা এবং প্রচন্ড আবেগ বা সেন্টিমেন্টের ব্যাবহার – ট্যাগ লাইন খুব ইন্টারেস্টিং মনে হলেও আসল জিনিশটা মোটেও সুবিধার কিছু হয়নি। ডিরেক্টর হিসেবে এখন পর্যন্ত এই সিনেমাটাই সবচে বড় প্রজেক্ট রিমা কাগতির। এর আগে এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন দর্শক নন্দিত জীন্দেগী না মিলেগি দোবারা, লক্ষ্য, দিল চাহতা হ্যায়, লাগান সিনেমায়। আমার ধারণা, এক্সট্রা অর্ডিনারি কিছু দেখাতে না পারলে পরিচালক হিসেবে তার ভবিষ্যত মোটামুটি লো ভোল্টেজ বাত্তির মত।

কনফিউশন
আআমির খান না থাকলে এই সিনেমা; হলে গিয়ে কেউ দেখতো কিম্বা মেগাবাইট খরচ করে ডাউনলোড করত কিনা সন্দেহ! অবশ্য যেই দেশে দাবাং আর আজব গজব প্রেম কাহানী’র মত সিনেমাও হিট হয়, সে ক্ষেত্রে কোন ভবিষ্যদ্বাণী না করাই আক্কেলমানের কাম।

ভূতের ছবি দেখে ভীমরী খেতে চাইলে রাম গোপাল ভার্মার ছবি দেখাই উচিত (সিনেমাও দেখতে পারেন) !!

ডাউনলোড লিঙ্ক
kat.ph
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৫
৮১টি মন্তব্য ৮১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×