somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কালা পাহাড় ২০০০
আমি স্বপ্ন দেখি এক যুবকের, যে নরকের কীটদের বিশাল বাহিনীর সামনে যুদ্ধের ময়দানে হাজির হবে। যুদ্ধে জিতে বিজয়ী হবার জন্য নয়, শুধু ন্যায়ের পক্ষে দাড়াবার জন্যেই যুদ্ধে যাবে সেই যুবক। মহাভারতের সেই চরিত্র "সংশপ্তক" এর মত, যে পরাজয় নিশ্চিত জেনেও যুদ্ধের ময়দানে হা

হুমায়ুন আহমেদের সর্বশেষ লেখা “দেয়াল” এবং আমার বিরক্তি (সাথে বোনাস হিসেবে, কেন অন্যরা বিরক্ত হবে)

১২ ই মে, ২০১২ রাত ২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি পড়ুয়া। আমি কোন কাজের না হতে পারি, কিন্তু আমি পড়ি। প্রিয়-অপ্রিয় সবার লেখাই পড়ি। একবার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গিয়ে দেখি, কনে আমার প্রিয় লেখকের নামই জীবনে শুনেনি। মনে মনে খেত বললেও মুখে কিছু বলার সাহস হয়নি। যাই হোক, আমাদের দেশের সবচেয়ে ব্যবসা সফল লেখক হুমায়ুন আহমেদের বই প্রায়ই পড়া হয় (যেহেতু, ইবুক হিসেবে ফ্রি ডাউনলোড করে আমার কিন্ডলে পড়া যায়)। উনার লেখা সম্পর্কে একজন পাঠক হিসেবে আমি মন্তব্য করতেই পারি। আমার মন্তব্যে উনার ব্যবসা বা বইয়ের কাটতিতে কমতি হবে না। আমার কটাক্ষ উনি পড়েও দেখবেন না, তাই উনার শারীরিক অসুস্থতার জন্য আমি দায়ী হব না।

লেখাটার অংশবিশেষ প্রথম আলোতে আসে (a)। আর পড়েই আমার চরম বিরক্তি আসে। যার কারণে শেষমেষ আমার মত অলস লেখক দিনশেষে আপনাদের সাথে আলোচনায় বসি, বিরক্তি কমানোর সর্বোত্তম উপায়, বিরক্তি ঝাড়ার জন্য।

১) “মুক্তিযুদ্ধের সময় একনাগাড়ে দুই দিন পানি না খেয়ে ছিলাম। ... আমাদের হাতে অল্পবয়সী একজন পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন ধরা পড়েছিল। ... রাজপুত্রের মতো চেহারা। মাইকেল এঞ্জেলোর ডেভিডে খুঁত থাকলেও তার কোনো খুঁত ছিল না। খাঁড়া নাক, পাতলা ঠোঁট, মাথার চুল কোঁকড়ানো, আবু লাহাবের মতো গায়ের রং” – ছেলেদের চেহারার বর্ণনা পড়তে বিরক্ত লাগে, তাও যদি হয় গাঁজাখুরি। এই ফারুক ডেপুটেশনে ছিল আবু-ধাবী (b)। ১২ই ডিসেম্বর এসে কি এমন যুদ্ধ করল যে ২ দিন পানি না খেয়ে থাকে। আসন্ন বিজয়ের আগমুহূর্তে এরকম অনেকেই পক্ষ বদল করতে পারে। আর এইরকম কোন যুদ্ধের ইতিহাস নাই। হয়ত লেখক পাকিস্তানী অফিসারের চেহারার বর্ণনা দিয়ে তার প্রতি পাঠকের সহানুভূতি আনতে চেয়েছেন। এরপর ফারুকের দ্বারা তাকে হত্যা করিয়ে ফারুকের কঠিন প্রকৃতি বোঝাতে চেয়েছেন (সুন্দর চেহারাতেও দয়া হয় নাই টাইপ)। চরিত্র চিত্রণ লেখকদের কাজ। এছাড়া আমি আর এই বিরক্তিকর গাঁজাখুরি কাহিনীর কোন কারণ দেখি না।

২) “‘আবু লাহাব’-এর অর্থ আগুনের পুত্র” - এই খানে লেখকের দোষ নাই। আমারই দোষ। এইরকম ভুল দেখলে বিরক্ত হই। ‘আবু লাহাব’-এর অর্থ আগুনের পুত্র নয়, আগুনের পিতা। ‘ইবনে লাহাব’-এর অর্থ আগুনের পুত্র।

৩) “একজন পীর সাহেবের কাছে যাব। তিনি জন্মান্ধ।... আমি পীর বংশের। বংশের ধারা অনুযায়ী আমি এখন গদিনশীন পীর।... দড়ির চারপাইয়ের এক কোনায় প্রচণ্ড গরমেও উলের চাদর গায়ে আন্ধা পীর বসে আছেন।... আন্ধা হাফেজের কথার মাঝখানেই চারপাইয়ের নিচ থেকে দুটো বিড়াল লাফ দিয়ে হাফেজের দুপাশে বসল। ফারুকের মনে হলো, বিড়াল দুটিও অন্ধ” – লেখক পীর বিষয়ে এতই অবসেসড, যেকোনদিন নিজেকে পীর ঘোষণা দিয়ে বসতে পারে। অন্ধ পীর, অন্ধ বিড়াল, গরমে উলের চাদর... উফফ।

৪) “আন্ধা পীর বললেন, আপনার ডানহাতটা আমার দিকে বাড়ান। আমি ধরে দেখি। ফারুক হাত বাড়ালেন। আন্ধা পীর দুই হাতে ফারুকের হাত ধরলেন। সাংবাদিক অ্যান্টনি ম্যাসকারেনহাসের কাছে দেওয়া বর্ণনায় মেজর ফারুক হাত ধরাধরির এই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, হঠাৎ ফারুকের মনে হলো শরীর দিয়ে যেন হাই ভোল্টেজের বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলো। কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো, তাঁর শরীর অবশ হয়ে গেছে” – আরো কিছু বুজরুকির বর্ণনা। আর ম্যাসকারেনহাসের নাম শুনে মনে হল, সব ঐতিহাসিক কাহিনী বর্ণনা। এক বসায় ২ উপন্যাসের লেখক সাহেব সত্যি গবেষণা বা স্টাডি করে এই উপন্যাস লিখেছেন কিনা, তা উনার রেফারেন্স লিস্ট দেখলেই বোঝা যাবে।

৫) “সিগারেটে টান দেওয়ামাত্র তাঁর মাথায় আবারও পুরোনো পরিকল্পনা চলে এসেছে। শেখ মুজিবকে হত্যা করে দেশে একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটানো। পরিকল্পনা এখন ইগল পাখি। পাখির দুটি ডানার একটি ডানা হলো সামরিক” – ভাবখানা এমন, পুরো পরিকল্পনা ফারুকের। কেন, সিআইএর ডকুমেন্টে যে তাদের সংশ্লিষ্টতার কথা আছে, সেটা কি লেখক সাহেব শুনেন নাই? (c)

৬) “বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে এসেছেন র’-এর (ভারতের সিক্রেট সার্ভিস রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং) পরিচালক কাও। তিনি এসেছেন পান বিক্রেতার ছদ্মবেশে। শেখ মুজিবুর রহমান বিরক্ত গলায় বললেন, আমি আপনাকে চিনি। অনেকেই আপনাকে চেনে। আপনার ছদ্মবেশ ধরার প্রয়োজন পড়ল কেন? কাও বললেন, মাঝে মাঝে নিজেকে অন্য রকম ভাবতে ভালো লাগে বলেই ছদ্মবেশ। আপনাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মেজর রশীদ, ফারুক, লে. কর্নেল ওসমানী এ বিষয়ে আলোচনায় বসেন জেনারেল জিয়াউর রহমানের বাসায়। এই বিষয়ে আপনাকে তথ্য দিতে এসেছি” – লেখক সিআইএর প্রকাশিত ডকুমেন্ট সম্পর্কে তার উপন্যাসের কোথাও উল্লেখ করেছেন কিনা জানিনা। তবে, র’-এর এইসব তথ্যের রেফারেন্স দিলে যাচাই করে দেখব। আমি মনে করিনা, র’-এর সাথে লেখকের আলাদা কোন খাতির আছে যার জন্য উনি এসব খবর র’-এর কাছ থেকে পেয়ে থাকবেন। অবশ্য, এইসব সিক্রেট সার্ভিসের লোকজন সাধারণত সবচেয়ে বড় মিথ্যুক হয়। দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ভেজাল লাগানোই সিক্রেট সার্ভিসের কাজ। মিথ্যা বলা এদের পেশা। র’, আইএসআই, সিআইএ, মোসাদ – এরা কিছু বললেও পাবলিক বিশ্বাস করে না। আরেকটা ব্যাপার, জিয়াউর রহমানের বাসায় বঙ্গবন্ধু হত্যার মিটিং হয়েছে, প্রমাণ ছাড়া এইরকম বলাটা খুব রিস্কি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের সময় এইসব তথ্য দরকার ছিল। হুকুমের আসামী হিসাবে তাহলে খালেদা জিয়াকে সরকার গ্রেফতার করতে পারত। কিযে রান্না করতেছেন লেখক, তা উনিই জানেন। আর, বিএনপি হরতাল দিয়ে দিতে পারে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে।

৭) “বঙ্গবন্ধুর অতি কাছের মানুষ রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ বসে আছেন রক্ষীবাহিনীর সদর দপ্তর সাভারে। আতঙ্কে তিনি অস্থির। রক্ষীবাহিনী আত্মসমর্পণ করে তাঁকে নিয়ে পড়েছে। তারা বারবার জানতে চাইছে, তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে কী করবে? বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত রক্ষীবাহিনী ঝিম ধরে বসে আছে। একসময়ের সাহসী তেজি ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদও ঝিম ধরে আছেন। শুরু হয়েছে ঝিম ধরার সময়। রাস্তায় মিছিল বের হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, সেই মিছিল আনন্দ-মিছিল। শফিক বাংলামোটর গিয়ে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখল। সেখানে রাখা ট্যাংকের কামানে ফুলের মালা পরানো। কিছু অতি উৎসাহী ট্যাংকের ওপর উঠে নাচের ভঙ্গি করছে। আমার বাবর রোডের বাসার কথা বলি, বেতারে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে একতলায় রক্ষীবাহিনীর সুবেদার পালিয়ে গেলেন। তাঁর দুই মেয়ে, একজন গর্ভবতী, ছুটে এল মায়ের কাছে। তাদের আশ্রয় দিতে হবে। মা বললেন, তোমাদের আশ্রয় দিতে হবে কেন? তোমরা কী করেছ? তারা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, খালাম্মা, এখন পাবলিক আমাদের মেরে ফেলবে। এই ছোট্ট ঘটনা থেকে রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার এবং তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও ঘৃণাও টের পাওয়া যায়” – এইখানে আওয়ামী লীগের লোকজন বিরক্ত হবে। কারণ, প্রথমত, রক্ষীবাহিনীর কথা তারা শুনতে চায়না। এটা আওয়ামী লীগের কালো অধ্যায়। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের কেউ কোন প্রতিবাদ বা টু শব্দ করে নাই। এখনকার আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও এটা শুনতে চাইবেননা। সবশেষে, আনন্দ-মিছিল হয়েছিল ঢাকার রাস্তায় – এই কথা লেখক সাহেব বললেন, ডক্টর ইউনুসকে দেখেও কি উনার শিক্ষা হয় নাই? আওয়ামী লীগের লোকজন খুবই বিরক্ত হবেন এই ঘটনার বর্ণনায়।

রেফারেন্সঃ

a) Click This Link

b) Click This Link

c) Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১২ সকাল ১০:৪২
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×