somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈশ্বরে বিশ্বাস এবং আমরা

১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"Friedrich Nietzsche নামক এক জার্মান দার্শনিক একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন। বলা যায় বিশ্বের তাবৎ বিখ্যাত উক্তিগুলোর মধে্য এটি একটি।
উক্তিটি এতবেশি জনপ্রিয় যে, এটা নিয়ে উইকিপিডিয়াতে পর্যন্ত একটা বিশাল আর্টিকেল লেখা হয়েছে।
বলা চলে পশ্চিমাবিশ্বে রাতারাতি জ্ঞান একধাপ এগিয়ে গিয়েছে এই উক্তি অন্তরে ধারণের মধ্য দিয়ে। কেননা এই কথাটি সীমানা অতিক্রম করতে সহায়তা করেছিলো। জ্ঞানার্জনের যতসীমানা ছিলো সব চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে।
তিনি বলেছিলেন, God is dead
আমিও এই লেখাকে বা ওই জার্মান দার্শনিক সাহেবের উক্তিটিকে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ মনে করি। কেন করি বিশ্লেষণ করছি-

কিছুদিন আগে আমি বাড়িতে গিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত ছুটি কাটাতে। তখন আমার বাবা আমাকে টাকা-পয়সা দেয়া নিয়ে বিভিন্ন কথা বলেন। আমি তাঁকে বলেছিলাম আপনি শুধু একবার বলেন আমি তোমাকে আর টাকা দিতে পারবো না। আমি এতে মোটেই মনে কষ্ট পাবো না। কিন্তু আপনার এই কথা যদি কাজে পরিণত করতে পারেন, তাহলে দেখবেন কিছুদিনের মাঝেই আমি স্বাবলম্বী হয়ে গেছি। যেহেতু এই দেশে খাবারের বা টাকার অভাব নেই, সেহেতু আমি কোনভাবেই না খেয়ে মরবো না। তবে আমি যেহেতু কাজ করছি না বা করার স্বদিচ্ছা মনে নেই, সেহেতু আমি আপনার থেকে প্রাপ্ত টাকার আশায় বসে থাকি এবং অলস সময় কাটাই। আপনি টাকা দেয়া বন্ধ করে দিলে আমার বিশ্বাস হবে আমার বসে বসে টাকা পাওয়ার আর কোন উৎস নেই, তখন আমি বাধ্য হয়ে কাজ খুঁজে নেবো। সবথেকে ভালো হয় আপনি আমাকে ত্যাজ্য করলে। সেক্ষেত্রে আমি বুঝতে পারবো আমার মাথার উপরে যেহেতু কেউ নেই, সেহেতু আমার যা করার নিজেকেই করতে হবে। বাবা আমার কথায় রাজী হয়নি বলেই আজও আমি বেকার বসে আছি বাবার থেকে টাকা প্রাপ্তির আশায়। অনাহারে থাকলে বাড়িতে ফোনে খবর দেই, ভর্তির টাকার জন্যও তাই।
আজ যদি আসলেই আমার বাবা আমাকে ত্যাজ্য করেন বা টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন, তাহলে আমি যেমন নিশ্চিতভাবেই নিজের ক্ষুধা মেটাতে কাজে নামবো, তেমনি আমার বাবা মারা গেলেও একই ঘটনা ঘটবে। কারণ, আমার পরিবারের কোন নির্দিষ্ট আয়ের উৎস নেই বা জমানো টাকাও নেই যে বাবার মৃত্যুর পরে সেগুলোর মালিকানা পেয়ে খরচে নেমে পড়বো। হ্যাঁ, আর একটা উপায় আছে- বউ ঘরে থাকলে বাড়তি খরচ পোষানোর জন্য আমাকে আয়ের পথে নামতে হবে। আবার পড়াশোনা শেষ হয়ে গেলে সব বন্ধুরা কাজে নেমে গিয়ে নিজেদের সামাজিক মর্যাদা পরিবর্তন করে ফেললে তখনও আমাকে কাজ খুঁজে নিতে হবে। মোটকথা, পেট বাঁচানো এবং সম্মান বাঁচানোর জন্য আমাকে আয় করার পথে একদিন নামতে হবে। কিন্তু মাথার উপরে ছায়া যদি শক্তভাবে থাকে, তাহলে সেই সম্ভাবনা অনেক কম। (যদিও অতিমানব ধরণের কিছু মানুষ থাকেন যারা বিনা কারণেই বা তাঁদের অন্তর্নিহিত কোন প্রয়োজনেই দৃশ্যমান প্রয়োজন ছাড়াই ছাত্র অবস্থায় পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন। তবে আমি সেই গোত্রীয় নই এবং আমার ধারণা বেশিরভাগ মানুষ-ই নয়।)
একইরকমভাবে যখন মানুষ বিশ্বাস করে তাঁর মাথার উপরে ঈশ্বর আছেন তাঁর সকল প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য, তাঁর বিপদে সাহায্য করার জন্য ঈশ্বর বসে আছেন উপরে, তখন তাঁর চেষ্টা স্বাভাবিক দৌর-ঝাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সে অসুস্থ রোগীর পাশে বসে কিছুটা লৌকিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে উপাসনায় ব্যস্ত হয় ঈশ্বরের সাহায্য প্রাপ্তির আশায়। ঈশ্বর না থাকলে কিন্তু মানুষটি উপাসনায় সময় ব্যয় না করে আরও বেশি যত্ন এবং চেষ্টা ব্যয় করতেন রোগীর জন্য।
জ্ঞানের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। মানুষ (হাতে গোনা কিছু মানুষ বাদে) সেই পর্যন্ত জেনে ক্ষান্ত হয়ে যায় যেখানে ঈশ্বরের নাম যুক্ত। মহাকাশ নিয়ে জানতে গিয়ে তাঁরা মহাকাশ কীভাবে সৃষ্টি হলো বা কীভাবে চলছে জানার আগেই থেমে যায়। তাঁরা জানেন সবকিছু ঈশ্বর পরিচালন করেন। তাঁরা জানেন সব ঈশ্বরের সৃষ্টি।
অথচ এই মানুষগুলি যদি প্রথমে ভাবতেন ঈশ্বর নেই বা মারা গেছেন, তাহলে এক পর্যায়ে এই ভাবনাই তাঁদের বিশ্বাসে পরিণত হতো এবং তাঁরা অভাবের সময় ঈশ্বরের সাহায্য প্রাপ্তির আশায় বসে থাকতেন না। তাঁরা বিপদে অলৌকিক সাহায্য আশা করতেন না। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যেতেন শেষ দেখার জন্য। তাঁরা মহাকাশের সকল রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করতেন সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে। এতে হয়তো এখন মহাকাশ নিয়ে আমাদের সীমিত জ্ঞানের বদলে বাসোপযোগী কয়েকশ গ্রহ খুঁজে পেতাম বা পেতাম অজানা কোন শক্তির সন্ধান যা আমাদের কাজে লাগতো।

আমার এক কাছের বন্ধু এখন হাসপাতালে ভর্তি। জীবন আর মৃত্যুর মাঝামাঝি অবস্থান করছে। হয়তো মৃত্যুটাই একটু কাছে আছে এখন। মাঝে মাঝেই ওর শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে যায়। কৃত্রিম অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হয় মাঝে মাঝে। কয়েকদিন আগে এক সন্ধ্যায় ওর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার খবর পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে দেখি অক্সিজেন চলছে কিন্তু কষ্ট কমছে না। ডাক্তারকে খুঁজে বের করে অবস্থা বর্ণনা করার পরে সে অক্সিজেনের সাথে নির্দিষ্ট একটা গ্যাসের কথা বলে দেন। গ্যাসটা ব্যবহার করার পরে ওর কষ্টটা কমতে শুরু করে। ওকে মাথায় হাত বুলিয়ে যখন ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি আর ও কিছুটা ঘুমের ঘোরেও চলে গেছে, তখন পাশের কোন এক রোগীর বেশ বয়স্ক এক মহিলা আত্মীয় এসে জিজ্ঞেস করলেন রোগীর অবস্থা কী? জানালাম এখন বেশ ভালো। তিনি জানালেন আমি যাওয়ার আগে যখন ওর খুব কষ্ট হচ্ছিলো, তখন তিনি নাকি ওর পাশে বসে সুরা ইয়াসিন পাঠ করেছিলেন। উনি পুরোটা পারেন না বলে কিছু অংশ পাঠ করেন আর সেই পাঠের কারণেই নাকি ও এখন সুস্থ। মেজাজ সহজে গরম করি না, কিন্তু ওনার এমন জোরে জোরে গলায় আনন্দ নিয়ে বলা কথার কারণে ওর ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে বলে ওনাকে চুপ করতে বললেও উনি ওনার আনন্দ প্রকাশ করেই যাচ্ছিলেন। শেষে বললাম- এখানে যেহেতু সব বিছানায় একজন করে রোগী আছেন, আর রোগীরা সবাই বেশ বেশি-ই অসুস্থ, আপনি বরং সব বিছানার পাশে গিয়ে সুরা ইয়াসিন পুরোটা পাঠ করে করে সবাইকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। আপনি পুরোটা না পারলে বলেন আমার মুখস্ত আছে। আমি শিখিয়ে দেবো। আর পড়তে চাইলে বলেন আমার ফোনে আছে। বলার পরে সে যেন কী বলতে যাচ্ছিলেন দেখে আমি ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে কিচ্ছুক্ষণ বাইরে থেকে আবার আমার বন্ধুর কাছে যাই।
আমি অনেক দেখেছি অনেক মানুষ বুকে ব্যথায় পড়াপানি খেয়ে সুস্থ হতে গিয়ে মরে গেছে। হয়তো তাঁদের হার্ট অ্যাটাক হয়েছিলো। আবার দেখেছি অনেক মেধাবী এবং চিন্তা ও গবেষণায় পারদর্শী অনেক শিক্ষার্থীকে শুধুই ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং বিশ্ব পরিচালনা তত্ত্বে বিশ্বাস করে বিজ্ঞানকে ও বিজ্ঞানের আবিষ্কারকে আরও কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। কিন্তু তাঁদের বিশ্বাসে যদি ঈশ্বর না থেকে বরং তাঁরা নিজেদেরকেই নিজেদের একমাত্র অবলম্বন ভাবতো, তাহলে হয়তো অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু, অনেক অপরাধ, অনেক অভাব পৃথিবীতে স্থান পেতো না। হয়তো বিজ্ঞান আজ অনেক এগিয়ে যেতো, হয়তো মানুষ পেতো আরও সমৃদ্ধশালী কোন সমাজ। ওই জার্মান ভদ্রলোকের তত্ত্বকে পশ্চিমারা কিছুটা হলেও বিশ্বাস করেছে এবং বাস্তবিক জীবনে প্রয়োগ করেছে বলেই হয়তো আজ ওরা অনেক এগিয়েছে। আজ ওরা আমাদের পৃথিবীর মতো গ্রহ খুঁজে বেড়ায়। আমাদের বসবাসের জন্য আর একটু সুবিধা ওরা নিয়মিত খুঁজে পেতে চায়। মানুষের শারীরিক দুর্বলতা ও অসুখের আক্রমণ থেকে বাঁচতে ওরা উন্নত চিকিৎসা ও শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কৃত্রিম যোগান দেয়ার চেষ্টা করে যায় এবং ওরা ক্রমাগত সফল হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে আমরা এখনও ওই তত্ত্বে বিশ্বাস করি না বলে এখনও মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকা মানুষটির জন্য বাঁচার পথ তৈরি করার বদলে, তাঁর জন্য উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার বদলে পাশে বসে সুরা ইয়াসিন পাঠ করি। বিজ্ঞানের ছাত্র এখনও এখানে বিগ ব্যাং এর আগে কী হয়েছিলো খুঁজতে গিয়ে বলে বসে এটা মনে হয় আমাদের না জানলেও চলবে। কারণ, ঈশ্বর সব পরিচালনা করেন এবং তিনি সব জানেন।
হয়তো ঈশ্বর আছেন, হয়তো তিনি-ই সব পরিচালন করেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি তিনি নেই। তিনি মারা গেছেন। আমি কারো কাছে আত্নসমর্পণ করতে পারব না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৪০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×