অন্ধকারে পয়চারী করছি ৷ জানুয়ারীর শীত তেমন অনুভব হচ্ছে না। ঠান্ডা তেমন বেশী নেই। এজন্যই বাইরে হাঁটা যাচ্ছে ৷ আঁধ অন্ধকারে হাঁটতে ভালই লাগছে ৷ প্রসস্ত রাস্তাতে টিমটিমে বাতি জ্বলছে ৷ একটির পর একটি বন্ধ এমন করে বাতিগুলো জলছে ৷ একটি বাড়ির পেছনের বারান্দাতে কতগুলো বাতি জুলছে ৷ এখানে জোনাকী পোকা নেই ৷ বাতিগুলো জোনাকী পোকার মতই লাগছে ৷ পার্থক্য একটিই বাতিগুলো নিভছে না ৷ মনে হচ্ছে কতগুলো জোনাকী পোকা একসারীতে স্থির হয় বাতাসে ভেসে আছে ৷ এখন বেশ রাত ৷ আকাশে নক্ষত্রের মেলা দেখা যাচ্ছে। নাম না জানা মাইগ্রেন্ট করা পাখিরা মাঝে মাঝে ঝাঁক বেধে উড়ে যাচ্ছে ৷ ওদের কোন কান্তি হয় না ৷ সব কান্তি কেবল আমাদের , মানুষের ৷
রাস্তায় কয়েকটি গাড়ী পার্ক করে রাখা ৷ একজন মানুষ ও নেই রাস্তায় ৷ বহুদিন এমন একা হওয়া হয়ে উঠে না ৷ কথাটি ঠিক নয় ৷ আসলে আমরা সবাই একাই ৷ যত কোলাহলেই মানুষ থাকুক না কেন , সে আসলে একা ৷ এই যে একা একা পথ চলা, সেটি বেশ এক ঘেয়ামির কাজ ৷ সে পথ চলা আজ রাতের পরচারীই হোক বা জীবনের পথ চলাই হোক ৷ তবুও চলতে হয় সে পথ। কখনো জোনাকীর মত সে পথ চলাতে সাথী হয় কিছু আলোকিত মানুষ ৷ সে আলোয় দুর হয় মনের অন্ধকার ৷ আজ তেমনই একজনের কথা ভাবছি ৷
হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার শেষ প্রান্তে বড় ফাঁকা গর্তের কাছে চলে এসেছি ৷ একটু ভাল করে না দেখলে পরে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এখানে সাপটাপও নাকি আছে ৷ এই শীতে অবশ্য সাপেরা শীতনিদ্রা নিচ্ছে ৷ তবে দু একটা শেয়াল বা উলফের দেখা পাওয়া যেতেও পারে- দুর্ভাগ্য হলে ৷ আমাদের দুর্ভাগ্যের অবশ্য শেষ নেই। শিক্ষা শেষে চাকুরী না পাওয়া ৷ পিতামাতা মরে যাওয়ার পর সম্পত্তি আত্ত্বীয় স্বজনের (?) কব্জা হওয়া, প্রিয়জনের দুরে চলে যাওয়া ৷ এসবই দুর্ভাগ্য ৷ এগুলো ঘটলে মানুষ হিসেবে আমরা দুঃখিত হই ৷ তবে থেমে যাই না।
এই পথের শেষ প্রান্তে এসে ফিরে যাচ্ছি বাসায়। আমার নীড়ে ৷ আমার গন্তব্যে ৷ আলোর দিকে ৷ একটু একটু করে ৷ তবে পরম নিশ্চিন্তে ৷ আমাদের সবার চলার পথ যতই অনিশ্চিত হোক না কেন - সব পথেরই একটি গন্তব্য থাকে ৷ আমাদের সে গন্তব্যটি খুঁজে নিতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৭:০৪