somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তধারা লাইব্রেরী

২৬ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুরান ঢাকায় শ্যাম বাজার এলাকায় মুক্তধারা প্রকাশনীর একটি বড় প্রেস ছিল। প্রতিদিন এই প্রেসের পাশ দিয়ে হেঁটে স্কুলে যেতাম। এই প্রেসের মুখে একটি বিরাট লোহার গেট ছিল। এখান দিয়ে যাওয়ার সময় সব সময়ই ভেতরে যেতে ইচ্ছে করতো। কিন্তু মোটা মোছে দারোয়ান দেখে অন্তর শুকিয়ে যেত। ভেতরে ঢোকার প্রশ্নই ওঠে না।

তখন মুক্তধারার অনেক নামডাক। প্রতি বছর স্কুলের পাঠ্য বইয়ের তালিকায় মুক্তধারার বেশ কয়েকটি বই থাকত। এছাড়া, গল্প উপ্যনাসের বই গুলোও এখানে প্রকাশ হত। বিশেষ করে কলকাতার লেখকদের বেশ বড় একটি অংশ মুক্তধারা থেকেই বই করতেন। সুনীলের কবিতার বই, বা সমরেষ মজুমদারের গোয়েন্দা কাহিনী সবই পাওয়া যেত।

বাংলা বাজারে এই বই গুলো পাওয়া যেত। নতুন বই কিনে প্রথম যে কাজটি করতাম সেটি হল- নতুন বইয়ের ঘ্রাঁন গ্রহন করা। কতকাল বাংলাদেশের সেই পুরোনো পরিচিত বাংলা বইয়ের দোকানে যাওয়া হয়নি সেটি আজ আর মনে পড়ে না। তাই নতুন কোথাও গেলে লাইব্রেরী খোজ করি। মানুষ বোধ হয় সব সমই তার সুখের স্মৃতিতে ফিরে যেতে পছন্দ করে। সে জায়গাটি থেকেই এবার যখন নিউইয়র্কে গেলাম, খুঁজতে থাকলাম এখানে কি কোন বাংলা লাইব্রেরী আছে কি না। একজন বলেছিল এখানে মুক্তধারার একটি লাইব্রেরী আছে, জ্যাকসন হাইটসএ।



[ছবি: ইন্টারনেট সার্চ রেজাল্ট]

এখানে একদিন সকাল সকালে জ্যাকসন হাইটসে গেলাম সেই লাইব্রেরীর সন্ধানে। ইচ্ছে করেই গুগোল ম্যাপ ইউস করলাম না। এখানে কি নেই , একেবারে ঢাকার নিউ মার্কেট। সবই পাওয়া যায়। কয়েকটি দোকান ঘুরে কিছু প্রোয়জনীয় জিনিস কিনে, পথে একজন দোকানীকে খোজ করলাম মুক্তধারা লাইব্রেরীর কথা।
ভদ্রলোক বাংলাতে কথা বলেন, বয়স ষাটের মত।
-চাচা, এখানে একটি বাংলা লাইব্রেরী আছে না? সেটি কোথায়।
-আমি জানি না, বিরশমুখে আমার দিকে তাকিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘোড়ালেন।
-আপনি কতদিন এখানে ব্যাবসা করছেন?
-তা প্রায় ১০ বছর।
আমি বেশ অবাক হলাম।

এরপরে একজন রোস্তরার বেয়াড়াকে বললাম, ভাই এখানে না একটি বাংলা বইয়ের দোকান আছে? সেটি কোথায়?
না বাই, এইহানে এই নামে কোন দোহান নাই, আমাগোর এইহানে ম্যালা খাওনের দোহান আছে।

এরপর একজন লোকাল বাসিন্দার কাছে জানতে চাইলাম। সে একজন অল্প বয়স্ক তরুণী। বাংলাতে বললেন, সরি, আমি জানি না, আপনি ফোনে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন। একথা বলেই সময় নস্ট না করে, দ্রুত হেটে চলে গেলেন। তখন বুঝলাম, আধুনিক শহুরে মানুষের ব্যাস্ততা অনেক বেশী। বই পড়ার সময় কোথায় তাদের। লাইব্রেরী তো সে অনেক পরের ব্যাপার। নাকি এটি শুধু বাংলাদেশী মানুষের বেলায় প্রযোজ্য- কে জানে?

পশ্চিমা দেশের শহর গুলোতে লাইব্রেরী কত বিশাল ভাবে বানানো হয়। মনে পড়ে একটি লাইব্রেরীতে গিয়েছিলাম, যেখানে, আটতলা ছাদে বিশাল ওক গাছ দেখেছিলাম, যার নিচে বসে কফি খাওয়ার ব্যাবস্থা আছে। একথা ভাবতে ভাবতে গুগোল ম্যাপে মুক্তধারার ঠিকানা দিয়ে, হাটতে লাগলাম। একটু সামনেই পেলাম দোকানটি। একটি ব্যাস্ত রাস্তার ধারে সরু অন্ধকার সিড়ি উঠে গেছে দোতালায়। উপরে উঠে বোঝার উপায় নেই দোকানটি কোথায়। শেষ পর্যন্ত যখন সারি সারি বইয়ের তাকের কাছে নিজেকে দাড় করালাম, মনে হল এই ব্যাস্ত নিউ ইয়র্ক শহরে, আমার এক টুকরো সোনালী অতীতকে খুঁজে পেলাম। সেই একই নতুন বইয়ের গন্ধ, সেই একই নতুন ধারনা। প্রতিটি বই যেন একটি মনকে মুক্ত করার নতুন একটি পথ। আমি ছোটবেলার মুক্তধারা এভাবেই এখানে খুজে পেলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১:১২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তেল আর জল কখনো এক হয় না......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩৫



জুলাই ছিলো সাধারণ মানুষের আন্দোলন, কোন লিডার আমারে ডাইকা ২৪'এর আন্দোলনে নেয় নাই। কোন নেতার ডাকে আমি রাস্তায় যাই নাই। অথচ আন্দোলনের পর শুনি আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড নাকি মাহফুজ। জুলাই বিপ্লবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্ল্যাং রেভলিউশন: ১৮+ সতর্কবার্তা ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩০


সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকে একটা ভাইরাল ভিডিও চোখে পড়লো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সদস্য সালাউদ্দিন আম্মার গণজাগরণ মঞ্চ ৩.০ তে উপস্থিত হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন: দেখতে পাইলে বাকশাল, শা*উয়া মা*উয়া ছিড়া ফেল/... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসেন জুলাই/ আগস্টের মিনি পোস্ট মোর্টেম করি।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:২৪





গল্প শুনেন বলি-

আমরা পড়ালেখা গুছগাছ কইরে চাকরীতে ঢুকছি।হঠাৎ বন্ধু গো ইমেইলের গ্রুপে মেসেজ (নাম ধরেন রফিক), রফিক যে পাড়ায় (রেড লাইট এরিয়া) যাইতো সেখানের একজন সার্ভিস প্রোভাইডাররে বিয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতাঃ হে বলবান

লিখেছেন ইসিয়াক, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪০

কে আছিস বলবান!
হ্ আগুয়ান।
দে সাড়া দে ত্বরা।
ধরতে হবে হাল,বাইতে হবে তরী, অবস্থা বেসামাল।

জ্বলছে দেখ প্রাণের স্বদেশ
বিপর্যস্ত আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
মানবিকতা, মূল্যবোধ, কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতির বাতিঘর।
সর্বত্র আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক ৩০০০ কোটী টাকার লোভেই দেশে ফিরেছে

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১০



তারেক এসেছে, বলেছে, I have a plan; তারেকের প্ল্যানটা কি? এই মহুর্তে তার প্ল্যান হতে পারে, নমিনেশন বাণিজ্য করে কমপক্ষে ৩০০০ কোটি টাকা আয়। ৩০০ সীটে গড়ে ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×