ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাদের গণপদত্যাগ নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সোমবার রাতে শিবিরের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুলস্নাহ আল মামুনসহ ২৬ জন নেতা কার্যকরী পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
বাকিরাও দু’একদিনের মধ্যে পদত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিবিরের বর্তমান অবস্থান জানাতে রোববার জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে দেখা করতে যান শিবির নেতারা। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অবস্থান করলেও নিজামী তাদের সঙ্গে দেখা করেননি। এর পরই তারা পদত্যাগের সিদ্ধানত্ম নেন। এদিকে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীর সভাপতি রেজাউল করিমের পদত্যাগের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে শিবিরের শীর্ষ নেতারা। একই দাবিতে সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুলাহ আল মামুনসহ ২৪ নেতা পদত্যাগ করেন। এবং দুই জন বর্তমান সভাপতির প্রতি অনা'স্থা প্রকাশ করেন। এ দুজনও গতকাল পদত্যাগ করেছেন। শিবিরের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সভাপতি পদত্যাগ না করলে শিবিরের শীর্ষ নেতারা (সদস্য) পদত্যাগ করবেন। তারা রেজাউল করিমের জায়গায় একজনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। এদিকে শিবির নেতাদের গণপদত্যাগের প্রভাব পড়েছে জামায়াতের মধ্যেও। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের একচেটিয়া সিদ্ধান্তের বিরোধী করে জামায়াতের কয়েকজন রুকনও পদত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে। জামায়াতে ইসলামীর আমির আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে দায়ী করে শিবির ও জামায়াত নেতারা বলেছেন, মুজাহিদের হস্তক্ষেপের কারণে শিবিরের বর্তমান এ করম্নণদশা। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শিবিরের নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া থাকলেও ১৮ই জানুয়ারি মুজাহিদের সরাসরি হস্তক্ষেপেই রেজাউল করিমকে ফের সভাপতি করা হয়। সেই সঙ্গে সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিশির মোহাম্মদ মনিরকে বিদায় করা হয়। সবার প্রত্যাশা ছিল, শিশির মনিরই শিবিরের পরবর্তী সভাপতি হচ্ছেন। এদিকে কার্যকরী পরিষদ থেকে গণপদত্যাগ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ১৮ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শিবিরের সদস্য সম্মেলনে আগের সভাপতি রেজাউল করিমকে ফের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সভাপতি তার একক ক্ষমতাবলে ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন। এরপর থেকে শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা সন্দেহ-সংশয়ের সৃষ্টি হয়। শিবিরের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতির পদ নির্বাচিত হয়। বাকি পদগুলো কার্যকরী পরিষদের সদস্যদের পরামর্শক্রমে সভাপতি মনোনয়ন দেন। ওই সময় থেকে সংবাদ মাধ্যমে ‘সেভ শিবির’ শিরোনামে ই-মেইল ও ফ্যাক্স পাঠানো হয়। সেইসঙ্গে শিবির সভাপতির আর্থিক দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও নানা অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়। এমনকি তার পিএইচডি ডিগ্রি ও বই প্রকাশ নিয়েও প্রশ্ন তুলা হয়। বিষয়টি তদনেত্ম জামায়াতে ইসলামের পড়্গ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি আজ পর্যন্ত তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। সোমবার রাতে আকস্মিকভাবে ২৪ নেতার পদত্যাগ করায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নানা মহলে। ৮ই ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেনের হত্যার পর থেকেই দেশব্যাপী শিবিরের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান চালানোর নির্দেশ দেয় সরকার। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক শতাধিক শিবির ক্যাডারকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে শিবির নিষিদ্ধ করার বিষয়েও সরকারসহ নানা মহলে দাবি উঠেছে। এ সময়ে শিবিরের সর্বোচ্চ শাখা থেকে গণপদত্যাগের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে সব মহলে। অনেকে বলেছেন, রণকৌশলের অংশ হিসেবে শিবির নেতারা পদত্যাগ করেছেন। তাদের পদত্যাগের কারণ জানতে একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে সংগঠনের পদত্যাগী সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের কাছে পদত্যাগের কথা স্বীকার করে জানান, ব্যক্তিগত কারণেই তিনি পদত্যাগ করেছেন। এর বাইরে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ১৮ই জানুয়ারি থেকে শিবিরের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। সভাপতি রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে আগে থেকেই নানা অভিযোগ ছিল। তারপরও তিনি ফের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। তিনি বিবাহিত ও অছাত্র। এছাড়া অভিযোগ উঠেছে রেজাউল করিম ব্যক্তিগত খাতেও খরচ করেন শিবিরের ফান্ড থেকে। শিবিরের পদত্যাগী যেসব নেতার নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন, কেন্দ্রীয় অফিস ও দপ্তর সম্পাদক আহমেদ জাহেদুর আনোয়ার, অর্থ সম্পাদক আদুল জব্বার, পাঠাগার সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আনিছুর রহমান, বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার, মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখার সভাপতি মইন উদ্দীন, ঢাকা মহানগর পশ্চিম শাখার সভাপতি মাকসুদুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গোলাপ হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি তাফাজ্জল হোসেন রম্নমেল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাসুদ পারভেজ রাসেল, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেজবাহ উদ্দীন শিবলু, বগুড়া শহর শাখার সভাপতি নুরম্নল ইসলাম আকন্দ, ছাত্র আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক আহমেদ শিহাব উলস্নাহ, শিড়্গা বিষয়ক সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া, পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক শাকিল উদ্দীন, প্রচার সম্পাদক গোলাম মাওলা শিমুল, সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বেলায়েত হোসেন, ঢাকা উত্তর শাখার সভাপতি আতিকুর রহমান, দক্ষিণের সভাপতি আবু সালেহী, বরিশাল মহানগর শাখার সভাপতি সাইদুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি আবু সালেহী। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিবিরের কার্যকরী পরিষদের সদস্য সংখ্যা ৪১ সদস্য বিশিষ্ট। দুজন নেতা বর্তমানে দেশের বাইরে। ৩৯ জনের মধ্যে সাবেক ও বর্তমান সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক কার্যকরী পরিষদের সদস্য। ২৬ জন নেতা পদত্যাগ করায় আর বাকি রয়েছে মাত্র ১৩ জন। সভাপতি রেজাউল করিম পদত্যাগ না করলে ওই ১৩ জনও পদত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে।
স্টাফ রিপোর্টার: মানবজমিন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




