নাগলিঙ্গমঃ লিসাইথিডেসিয়া গোত্রের দীর্ঘ চিরসবুজ আয়াহিনা বা ক্যানন বল নামক বৃক্ষটির আদি নিবাস উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ ক্যারাবিয়ান । আমেরিকা বা দক্ষিণ দ্বীপপুঞ্জে উৎপত্তি হলেও পৃথিবীর সর্বত্র এটি কম বেশি বিস্তৃত। উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম Couroupita guianensis যা ১৭৫৫ সালে ফ্রান্সের উদ্ভিদবিদ জে.এফ আবলেট প্রদান করেছিলেন। গত দুই তিন হাজার বছর ধরে ভারতে জন্মানোর কারনে অনেকে এর উৎপত্তিস্থল হিসেবে ভারতকেও বিবেচনা করে থাকেন।
বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মানোর কারণে এটি ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। ভারতের শিবা মন্দিরে জন্মানোর কারণে হিন্দিতে এটি শিব কামান, তামিল ভাষায় নাগলিঙ্গম এবং বাংলা ভাষায় নাগকেশর নামে পরিচিত। শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং অন্যান্য বৌদ্ধ মন্দিরে এটি রোপণ করতে দেখা যায়। ক্যানন বলের মত ফল ধারণকারী এই বৃক্ষ ২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। অধিকাংশ এলাকায় এই গাছগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি এবং আকর্ষণীয় ফুলের জন্য রোপণ করা হয়। ফুলগুলো কমলা,উজ্জ্বল লাল গোলাপি বর্ণের এবং তিন মিটার দীর্ঘ মঞ্জুরিতে ফুটে থাকে। ফুলগুলো ঊর্ধ্বমুখী স্থুল ডিস্কের সাথে যুক্ত থাকে। ফুলগুলোতে তীব্র সুগন্ধযুক্ত , কমলা লাল বর্ণের দীর্ঘ ছয়টি পাপড়ি বিদ্যমান।
অনিন্দ্য সুন্দর নাগলিঙ্গম ফুল।এই গাছের ফুলের দারুন অদ্ভুদ মাদক সুগন্ধ। অনেকক্ষন ধরে ফূল ফোটা গাছের নীচে বসে থাকলে মাথা ঝিম ঝিম করতে পারে। ছয়টি লাল অথবা গোলাপি পাপড়ির মাঝখানে পরাগগুচ্ছ সাপের ফণার মতো বাঁকানো থাকে। শাখায় নয়, ফুল ফোটে গাছের গুড়ির দিকে । গুড়ি ফুড়ে বের হয় ছড়া। তারপর ফুল। পুরো গ্রীষ্মকাল ফুল ফোটার সময়, বর্ষা ও শরতে কম ফুটলেও সারা বছরই ফুল থাকে। ফুল ফোটার সময় শিউলী ফুলের মত অনেক ফুল নীচে ঝড়ে যায়। ফুলে কোন নেকটার নাই,শুধু মাত্র গন্ধে পোকারা আকৃষ্ট হয়ে এর পলিনেশনে সহায়তা করে।
এর পরাগায়ণ বাতিক্রমধর্মী যেখানে মৌমাছি বাহক হিসেবে কাজ করে। উৎপন্ন ফল দীর্ঘ, গোলাকার যার সাথে মিল রেখেই গাছটির নামকরণ। পরিপক্ক ফল মাটিতে পড়লে ফেটে যায়, মৃদু শব্দ সৃষ্টি করে এবং বাতাসে ঝাঁঝালো গন্ধের সৃষ্টি করে। বীজগুলোতে আলাদা আলাদা চুলের মত আস্তরণ থাকে যা এদেরকে প্রতিকূল অবস্থা থেকে নিয়ন্ত্রণ করে।
নারিকেল গাছের মত এটি রাস্তার পাশে রোপণ করা হয় না কারণ এর পরিপক্ক ভারী ফল যে কোন মুহূর্তে দুর্ঘটনা সৃষ্টি করতে পারে। ফলগুলো ২০ সে.মি. পর্যন্ত হয় এবং নয় মাসের মধ্যে পরিপক্ক হয়। প্রাণীদের খাবার হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়। আমাজান বনের সামান জনগোষ্ঠীর এটি একটি প্রিয় খাবার কিন্তু অন্যান্যদের জন্য এটি ক্ষতিকারও হতে পারে। শক্ত খোলস অলংকার বা বিভিন্ন দ্রব্য বহনে ব্যবহার করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত এই উদ্ভিদটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক।
এর ফুল, পাতা এবং বাকলের নির্যাস ঔষধ হিসেবে বহুল প্রচলিত। এটি এনটিবায়েটিক, এনটিফাঙ্গাল এবং এনটিসেপটিক হিসেবে অনেকে ব্যবহার করে থাকেন। পেটের পীড়া দূরীকরণে এর ভূমিকা ব্যাপক। পাতা থেকে উৎপন্ন জুস ত্বকের সমস্যা দূরীকরণে খুবই কার্যকর। দক্ষিণ আমেরিকার সামানরা এর পাতা ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করে থাকে। বহুল গুণ সম্পন্ন এই উদ্ভিদের সংখ্যা এখন পৃথিবীতে খুবই কম। বাংলাদেশে হাতে গোনা ১০-১৫ টি নাগলিঙ্গম উদ্ভিদ বিদ্যমান, তবে সমস্ত পৃথিবীতে এই উদ্ভিদটি বিলুপ্তির পথে।
★★★ তথ্যসুত্রঃ সংগৃহীত, উদ্ভিদ চত্বর।
★★★ ছবিঃ মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা থেকে আমার তোলা।
মেহেরপুর বেড়িয়ে চলে আসার সময় একটা ফুল তুলে নিয়ে আসতে মন চাইল। আমাদের কারোই ক্ষমতা হয়নি ফুলটি ছেঁড়া!! পরে পাশের চায়ের দোকানী চাকু দিয়ে কেটে দিয়েছিল ফুলটি
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:১৮