somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়ের জন্যে শিশু তানভীরের ভালবাসা : তোমার মাথার চুলের (সাদা) চেয়ে আমার মা বেশি ফর্সা ছিল।

২০ শে জুন, ২০০৭ সকাল ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সকাল প্রথম আলোতে একটা খবর পড়ে আপনাদের সাথে শেয়ার করার বড্ড ইচ্ছে ছিল, মাঝে ঝামেলা বাধলো লিংক নিয়ে।

মেজাজ এখনও বিলা হয়ে আছে। কারণ এখনও পারছি না।
এনি ওয়ে নিউজ টা কপি করে, পেস্ট করলাম। এই অধমকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

ঘরের ভেতর খাঁচা। খাঁচার ভেতর এক পা-দুই পা করছে একটি টিয়াপাখি। আর ঘরময় হাটি হাটি পায়ে হাঁটছে ছয় বছরের তানভীর। ঘরেফিরে চলে যায় খাঁচার কাছে। টিয়ার সাথে কথা বলে।

ঢাকার মোহাম্মদপুর তানভীরের নানাবাড়ির ফুল গাছে কোনো ফুল নেই। সব ফুল ছিঁড়ে তার ঘরে টাঙানো মায়ের ছবির ওপর টেপ দিয়ে লাগিয়ে রাখে সে।

ফাইয়াজ হক তানভীর নিহত নুশরাত হক শান্ত'র একমাত্র ছেলে। শিশুতোষ কথাবার্তা সে কমই বলে। কিছু কথা ওর মুখে এমনই অবিশ্বাস ঠেকে যে না শুনলে উপলদ্ধি করা যাবে না।

মায়ের হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী সে। বয়স তখন সোয় দুই বছর। আদালত অনেক জেরার পর এ শিশুর দেখা খুনের ঘটনার সাক্ষ্য বর্ণনা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কাঠগড়ার টুলের ওপর দাড়িয়ে সে খুনি হিসেবে বাবা-দাদা-দাদিকে শনাক্ত করেছে।


গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পৌনে দুইটায় চট্রগাম থেকে ফোনে শান্ত হত্যা মামলার রায়ের খবর জানান তানভীরের নানা মজিবুল হক শামীম। নানি গুলশান আরা রোজী রায় শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তানভীর জানতে চায়, 'নানু কাঁদছ কেন? আজকে বিচার হয়নি?' নাতিকে বুকে টেনে নিয়ে নানু বলেন, সবুজের (তানভীরের বাবা) ফাঁসি হয়েছে, ওর বাবা-মায়ের যাবজ্জীবন।'

সঙ্গে সঙ্গে তানভীর এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চায়, যাবজ্জীবন কী? যাবজ্জীবন সাজার অর্থ বুঝিয়ে দিলে সে - 'না না হবে না। দিদা আর দাদুকে যেন জেলে খেতে দেওয়া না হয় তা লিখবা তোমরা।'

নানু বলেন, 'এই বয়সেও ছেলেটার কাছ থেকে কিছুই লুকানো যায় না। কোন কিছু একটু ঘুরিয়ে বললেই বলে, 'ও আমাকে বোকা বানাচ্ছ! মামলার কোনা কথা শুনলেই বলতে থাকে -'সবুজের ফাসি চাই।'

গত ৪ ফেব্রুয়ারি মায়ের খুনি বাবা ও দাদা-দাদির বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষী দিয়েছে ইংরেজি মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীতে পড়ুয়া তানভীর। সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তানভীরের বয়স ছিল পাঁচ বছর ছয় মাস। আদালতে তানভীর বলেছে, আব্বু বাথরুম থেকে এসে আম্মুকে চড় মারে। আম্মু পড়ে যায়। আব্বু আম্মুর বুকে পাড়া দেয়। দিদা অন্য রুম থেকে এসে আম্মুর চুল ধরে উঠায়, গলা টিপে ধরে। দাদু আম্মুর গলায় ওড়না পেচিঁয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলায়। আবার দাদুই ফ্যান থেকে আম্মুকে নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। দিদা আম্মুর মাথায় পানি ঢালে। তাসলিমা (কাজের মেয়ে) তখন আমাকে সুজি খাওয়াচ্ছিল। আমি তখন কাঁদছিলাম। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে দেওয়া খুনের ঘটনার বর্ণনার সাথে তার এই বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়।

বিচারক এ এইচ এম ম মুস্তাক আহমেদ শিশু তানভীরের এই সাক্ষ্য শোনার পর ওর স্মরণশক্তি ও বুদ্ধিমত্তা বোঝার জন্য নানারকম প্রশ্ন করেন। মামলার ভাষায়, 'এই জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিচারক তানভীরের স্মরণশক্তি ও বুদ্ধিমত্তা প্রখর বলে মন্তব্য করেন।

বিচারক তাঁর আদেশে বলেছেন, তানভীরের কথাবার্তা স্শর্ষ্ এবং আদালতে তার বাবা-দাদা-দাদি ও কাজের লোককে দেখেই শনাক্ত করে ফেলেছে। তানভীরের নানি বলেন, আমরা খুব চিন্তায় ছিলাম, প্রায় সোয়া তিন বছর বাবা-দাদা-দাদিকে দেখেনি। ওর মা খুন হওয়ার পর ওকে কাজের মেয়ের কাছে ফেলে বাড়ির সবাই পালিয়ে যায়। সেই থেকে আমাদের কাছেই আছে ও। কিন্তু আদালতে সে ওদের দেখেই চিত্কার করে বলে, 'ওরাই মাকে মেরেছে।'

আসামিপক্ষের আইনজীবী জেরায় বলেছিলেন, তোমার মার কথা কি তোমার মনে আছে এতদিন পরে? তোমার মাথার চুলের (সাদা) চেয়ে আমার মা বেশি ফর্সা ছিল। তানভীরের এই উক্তি তখন পত্রিকায় ছাপাও হয়।

২০০০ সালে শান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে (হিসাববিজ্ঞান) ভর্তি হন। তিনি ভালোবেসে সাখাওয়াত হোসেন সবুজকে বিয়ে করেন। স্বামীর সাথে চলে যান চাঁদপুরে শ্বশুরবাড়িতে। কিছু দিন পর থেকেই শ্বশুর-শাশুড়ি ও বেকার স্বামী যৌতুক চাইতে থাকেন। যৌতুন না পেয়ে শুরু হয় নির্যাতন। শেষমেষ তাকে খুন করা হয়।

গতকাল নানার বাসায় তানভীরের ছবি তুললে সে প্রথম আলোর আলোকচিত্রীকে বলে, 'যদি কালার না আসে, তাহলে পেন্সিল দিয়ে রঙ করে নিয়ে এসো। আমি আম্মুর ছবির পাশে লাগিয়ে রাখব। ফেরার সময় তানভীর বলে, 'আমার গান শুনে যাও। আমার নানাভাই যখন ছোট ছিল, তখন এই গানটা গাইত। আমিও শিখেছি। মধুর আমার মায়ের হাসি, চাঁদের মতো ঝরে, মাকে মনে পড়ে আমার, মাকে মনে পড়ে . . . !
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০০৭ সকাল ৯:৫০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×