আমাদের জীবনটা না কেমন জানি। গল্পের জীবন। সেই গল্পের ভিতর আরো অসংখ্য গল্প । কখনো কখনো সে গল্প আমাদের অনুভূতিকে ছুঁয়ে যায়। কখনো আবার আমাদের তীব্র বেদনাবোধে বেঁধে ফেলে। সেই বেদনাবোধ হয়তো আবার কোন একটা গল্পের জন্ম দেয়। একসময় চৈত্রের দুপুরগুলো কেমন উদাস করা অনুভূতি দিত। চুপচাপ প্রকৃতির এই সৌন্দর্য দেখে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারতাম, এখন আর সেসব হয় না।
সবাই যখন বলতো, এবার তোমার কথা বলো, ম্লান হেসে বলতাম.... নাথিং স্পেশাল। লাইফ গোজ অন।
আসলেই কি কিছু বলার ছিল না..... উহু, আমার একটা গল্প আছে। সেই গল্পে অসংখ্য চরিত্র। এর মধ্যে অদ্ভুত ভাবে নিয়তির স্রোতে সামান্য এক দিনমজুর দম্পতি এসে পড়ে। নাহ, তাদেরকে আমি কখনো দেখিনি, কথা বলিনি, তারা আমার রক্তের সম্পর্কের কিংবা আত্মিক সম্পর্কের ও কেউ না। তবুও কেন জানি তাদের উপর আমার মাঝে মাঝে খুব রাগ হয়, কেন হয় আমি জানিনা।
কত রাত সবাই ঘুমিয়ে গেলে আমি টেবিল ল্যাম্প এর হালকা আলোয় গল্পটা নিয়ে কাটাকুটি করেছি। লিখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু একবার ও হয়নি। কখনো সংলাপ মিলাতে পারিনি, কখনো ফ্ল্যাশব্যাক এ গিয়ে চরিত্রগুলোতে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছি, কখনোবা ঝাপসা চোখে তাকিয়ে থেকেছি। যে গল্প নিয়তির স্রোতে স্বয়ং ইশ্বর লিখেছেন সে গল্পে শেইপ দেয়ার সাধ্য কার আছে।
ঝুম বৃষ্টিতে গাড় সবুজের মোহনীয় রুপ ধরা পরে আমার পলেস্তারা খসা ভাঙা জানালায়, পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর বৃষ্টি বোধহয় পাহাড়ের ঢালের এই ছোট্ট জানালায় দেখা যায়। আমার তখন খুব খুব ইচ্ছে হত ধোয়া ওঠা খিচুড়ির প্লেট সামনে নিয়ে সেই মানুষটার চোখে চোখ রেখে বলি, আমার একটা গল্প আছে তুমি কি শুনবে?
তারপর আমাদের জীবনে একেকটা মানুষ আসে, কেউ আমাদের ছেড়ে চলে যায়। কাউকে আমরা ছেড়ে আসি। জলরঙের মত কেউ ভালো আবার কেউ খারাপ অনুভূতির ছাপ রেখে যায়। প্রায়শই সেই অনুভূতি নিয়েও আমরা তালগোল পাকিয়ে ফেলি। অনুভূতি গুলোকে কিনশিপ টার্ম দিয়ে ডিফাইন করতে গিয়ে আমরা আদতে কিছু বেদনাবোধ খরিদ করি, যা শুধুই শুণ্যতাই বয়ে আনে। আচ্ছা, আমরা কেন পারিনা অনুভুতিগুলোকে স্রেফ অনুভূতি হিসেবেই দেখতে। কেন সবকিছুর এত ডেফিনেশন খুঁজি? এটা কি আসলেই আমাদের একাকিত্বের ভয় নাকি অন্যকিছু।
আমারনা আজকাল খুব বিকেলের ম্লান আলোয় বসে বেগুনি রং এর জারুলের সাথে মিশে যাওয়া সেইসব দিনের গল্প লিখতে ইচ্ছে করে। কর্ণারের সেই সোনালু ফুল গাছগুলোর মত সেইসব কবেই হারিয়ে গেছে। চোখের সামনে নাগালিঙ্গম গাছটা রেখে কত জায়গায় খুঁজেছি। দুপুরের ঘুম ঘুম চোখে আরেকবার লাল সাদা চুড়িদারে লাইব্রেরীর করিডোরে কারো জন্য অপেক্ষা করতে ইচ্ছে জাগে। তারপর বায়োলজির ব্রীজের উপর পা ঝুলিয়ে শতাব্দীর সেই পুরনো নিস্তব্দ রজনীতে বলতে ইচ্ছে জাগে," আমার একটা গল্প আছে ", তুমি কি শুনবে?
এমনি করে দিন পেরিয়ে বছর পেরিয়ে যায়। একটা জীবন ফুরিয়ে যায় কেবলই আক্ষেপ, হতাশা আর দীর্ঘশ্বাসে। আর ভালবাসা মরে যায় দ্বিধায়.....
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১২:০৫