somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দরিয়া-ই-নূর (নবাবদের রত্ন)

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দরিয়া-ই-নূর (শাব্দিক অর্থ: আলোর নদী বা আলোর সাগর) ছিল নবাবদের রত্নরাজির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও মূল্যবান অলংকার। ব্রিটিশ জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানি জানিয়েছে, প্রাকৃতিক ও বিশুদ্ধ হীরকখণ্ডটি টেবিল আকৃতির, সমতল পৃষ্ঠ এবং মূল পাথরটি বর্ণহীন। মূল হীরাটির চারদিকে ছোট ছোট আরও ১০টি ডিম্বাকৃতির হীরকখণ্ডকে সোনার ফ্রেমের সাহায্যে মূল হীরার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।


দরিয়া-ই-নূর বাজুবন্ধরূপে ব্যবহার করা হতো। দরিয়া-ই-নূর প্রথমে দীর্ঘদিন মারাঠা রাজাদের অধিকারে ছিল। এরপর তা হায়দরাবাদের নবাব সিরাজুল মুলকের পূর্বপুরুষদের হাতে আসে এক লাখ ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে। এরপর দিল্লির মোগল সম্রাট খুব সম্ভবত হায়দরাবাদ থেকে এই হীরকখণ্ডটি হস্তগত করেন।


১৭৩৯ খ্রিষ্টাব্দে পারস্যের বাদশাহ নাদির শাহ দিল্লি আক্রমণ করে ময়ূর সিংহাসন, কোহিনূরসহ মূল্যবান ধনরত্ন লুট করে পারস্যে নিয়ে যান। বলা হয়, সে সময়ে কোহিনূর ও অন্যান্য রত্নরাজির সঙ্গে দরিয়া-ই-নূর চলে যায় পারস্যে। পারস্যের নাদির শাহের পর পর্যায়ক্রমে তা আহমদ শাহ-দুররানি লাভ করেন। আহমদ শাহ দুররানির মৃত্যুর পর তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র মাহমুদ শাহ জোর করে ক্ষমতা দখল করলে জ্যেষ্ঠপুত্র শাহ সুজা কোহিনূরসহ মূল্যবান ধনরত্ন নিয়ে কাশ্মিরে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন। সেই সময় রণজিত্ সিংহ শাহ সুজার কাছ থেকে দরিয়া-ই-নূর হীরাটি লাভ করেন।
রণজিত্ সিংহের মৃত্যুর পর দরিয়া-ই-নূর শেষ পর্যন্ত নাবালক রাজা দীলিপ সিংহের অধিকারে আসে। নাবালক রাজা দীলিপ সিং ১৮৪৯ সালে পাঞ্জাব যুদ্ধে ব্রিটিশদের কাছে হেরে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। ব্রিটিশরা দীলিপকে কোহিনূর, দরিয়া-ই-নূরসহ অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ তাদের কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য করে। ১৮৫০ সালে লর্ড ডালহৌসি কোহিনূর, দরিয়া-ই-নূরসহ কিছু মূল্যবান অলংকার লন্ডনে হাইড পার্কের বিখ্যাত মহামেলায় প্রদর্শনের জন্য প্রেরণ করেন। ব্রিটিশদের সঙ্গে মহারাজ দীলিপ সিংহের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী শিখ রাজার সম্পদের ওপর ব্রিটিশদের অবৈধ হস্তক্ষেপ নিয়ে ১৮৫১ সালে প্রশ্ন তোলা হয়। এর পরই কোহিনূর ও কিছু মুক্তার মালা রানির জন্য রেখে দরিয়া-ই-নূরসহ অন্যান্য অলংকার ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ১৮৫২ সালে।
এরপর ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে কলকাতায় হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানি সেগুলো ১৮৫২ সালের নভেম্বর মাসে নিলামে বিক্রি করে দেয়। ওই সময় খাজা আলিমউল্লাহ ৭৫ হাজার টাকায় দরিয়া-ই-নূর কিনে নেন। ভারতে এটি হ্যামিল্টন কোম্পানির হেফাজতে রাখা হয়েছিল। ভারত ভাগের পর তা ঢাকায় এনে ইম্পেরিয়াল ব্যাংক ইন্ডিয়ার ঢাকার শাখায় রাখা হয়। ১৯৬৬ সাল থেকে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান (পরে সোনালী ব্যাংক)-এর সদরঘাট শাখার লকারে রাখা হয় দরিয়া-ই-নূর।
এখানে উল্লেখ করা দরকার, দরিয়া-ই-নূর নামেই পারস্যের সম্রাটেরও একটি হীরা ছিল। সেটি এখন তেহরানে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইরানে রক্ষিত আছে। এটি আকারে ঢাকার নবাবের দরিয়া-ই-নূরের চেয়ে বড় এবং হালকা গোলাপি রঙের। দুটোই ‘টেবল ডায়মন্ড’ হলেও এদের মধ্যে কোনোরকম মিল নেই।


সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ২:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×