somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাওসার চৌধুরী
জন্মসূত্রে মানব গোত্রভূক্ত; এজন্য প্রতিনিয়ত 'মানুষ' হওয়ার প্রচেষ্টা। 'কাকতাড়ুয়ার ভাস্কর্য', 'বায়স্কোপ', 'পুতুলনাচ' এবং অনুবাদ গল্পের 'নেকলেস' বইয়ের কারিগর।

দি টেল-টেইল হার্ট (The Tell-Tale Heart); "এডগার এলান পো"-র (Edgar Allan Poe) বিখ্যাত হরর গল্পের বাংলা অনুবাদ।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘটনা কিন্তু সত্যি! আমি অসুস্থ ছিলাম, খুবই অসুস্থ। কিন্তু তোমার কেন মনে হলো এখন আমি আত্ম নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি? কেন তুমি আমাকে পাগল ভাবছ? তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না আমি একদম সুস্থ? বলতে পার, আগের চেয়ে ঢের বেশি সুস্থ আমি। আর কি প্রমাণ চাও তুমি? সত্যি কথা বলতে কি; এই অসুস্থতা আমার মনোজগৎ, আমার অনুভূতি, আমার স্মৃতিশক্তি এবং আমার উপলবদ্ধিকে আরো তীক্ষ্ণ করেছে। বিশ্বাস কর, আমি এখন যত পরিস্কার শুনতে পাই; অসুস্থ হওয়ার আগে তা মোটেও ছিল না। শুধু কি তাই? আমি স্বর্গ-নরক থেকে কোন শব্দ ভেসে আসলেও ঠিক শুনতে পাই!

এবার শুন! মনযোগ দিয়ে শুন; ঘটনাটা কিভাবে ঘটেছিল সেই গল্পটা তোমাকে বলবো। শুনার পর তুমিও স্বীকার করতে বাধ্য হবে, সে সময়টাতে আমি মানসিকভাবে কত সুস্থ ছিলাম।

তবে এটা বলা খুবই দুরুহ যে; কবে, কখন, কিভাবে এই খুনের পরিকল্পনা আমার মাথায় এসেছিল। আর এর পেছেন নির্দিষ্টভাবে বলার মত কোন কারণও ছিল না। আমি বুড়ো লোকটিকে মোটেও ঘৃণা করতাম না। বলা যায় তাকে আমি পছন্দ করতাম। তিনি কখনো আমার কোন ক্ষতি করেন নাই। তার টাকা-পয়সার প্রতিও আমার কোন লোভ ছিল না। তবে আমার মনে হয় ঘটনাটার পেছনে তার একটা চোখের দায় আছে। চোখটা একদম শকুনের চোখের মত ছিল। বিষয়টা অনেকটা এরকম, যখন কোন শিকার সন্ধানী পাখি দূর থেকে তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মৃত পশুদের প্রতি লক্ষ্য রাখে কিংবা পশুদের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষায় থাকে এবং পাওয়ার পর খুব হিংস্রভাবে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে পঁচা-ভাসি মাংসের টুকরোগুলোকে খাবলে খাবলে পেটে চালান করে ঠিক সেরকম কিছু।

যখন বুড়ো লোকটা শকুনের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাতো তখন নিজের মধ্যে এক ধরনের ঠান্ডা, শীতল অনুভুতি হত; এমনকি আমার রক্ত পর্যন্ত হীম হয়ে আসত। আর এজন্যই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যেভাবেই হোক বুড়োটাকে খুন করবো এবং চিরদিনের মত তার এই বিভৎস দৃষ্টিকে নিভিয়ে দেব। তাকে হত্যা করার এটাই আসল কারণ।

এখনো তুমি আমাকে পাগল ভাবছ, তাই না? তুমি নিশ্চয়ই আমার সাথে একমত হবে যে, পাগলরা কোন পরিকল্পনা করতে পারে না। আর হত্যার পরিকল্পনা তো নিশ্চয়ই নয়। এবার দেখবে আমি কত সুক্ষভাবে পরিকল্পনা করেছিলাম। খুন করার আগে পুরো সপ্তাহ জুড়ে আমি লোকটার সাথে খুব ঘনিষ্টভাবে, ভীষণ আন্তরিকতার সাথে মিশেছিলাম এবং তাকে ভালবাসার মিথ্যা অভিনয় করেছিলাম।

প্রতিদিন ঠিক মধ্যরাতে আমি খুব সাবধানে তার দরজার হুড়কা খুলেছি। দরজাটা সামান্য ফাঁক করে খুব সাবধানে প্রথমে নিজের হাঁত, তারপর মাথা ঢুকাতাম। যাতে কোন আলোর প্রতিবিম্ব লোকটার উপরে না পড়ে সেজন্য আমার হাতে ধরা লন্ঠনটি একটা কাপড় দিয়ে আবৃত করে রাখতাম। আমি খুব নিরিবিলি সেখানে দাঁড়াতাম। তারপর খুব সতর্কতার সাথে লন্ঠনের উপর থেকে একটু একটু করে কাপড় সরিয়ে নিতাম; এতে ছোট্ট একটা আলোকরশ্মি লোকটার বিভৎস শকুনি চোখের উপর গিয়ে পড়ত।

সাত-সাতটা রাত এভাবেই কাঁটলো; কম কথা, সা-ত-টা- রাত! ঠিক মধ্য রাতে এভাবেই খুব সতর্কতার সাথে যেতাম। বিষ্ময়কর বিষয় হল, প্রতি রাতেই লোকটার চোখ বন্ধ থাকতো; এজন্য আমার উদ্দেশ্য সফল করতে পারতাম না। কারণ, বুড়ো লোকটার উপর তো আমার কোন রাগ নেই; আমার সব রাগ তার বিস্ফোরিত শকুনি চোখটার উপর।

কিন্তু প্রতিদিন সকাল বেলা আমি লোকটার ঘরে গিয়ে খুব আন্তরিকতার সাথে জিজ্ঞেস করতাম, "রাতে ভাল ঘুম হয়েছে তো?" এমন চতুরতার সাথে অভিনয় করতাম যেন আগের রাতে কিছুই ঘটে নাই! লোকটি কখনো কল্পনাও করেনি যে, প্রতি মধ্য রাতে ঘুমানোর পর আমি তাকে চুপিচুপি পর্যবেক্ষণ করতাম; খুন করার পরিকল্পনা করতাম!

অষ্টম রাত্রিতে দরজার হুড়কা খোলার সময় আরেকটু অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করেছিলাম। ঘড়ির মিনিটের কাটা ঘোরার আগেই আমি কাজটা সেরে ফেললাম। আমি সেদিন এমন একটা অদৃশ্য শক্তি অনুভব করেছিলাম, যে ক্ষমতা সম্বন্ধে আগে মোটেও ওয়াকিবহাল ছিলাম না। এই ঐশ্বরিক শক্তির ফলে আমি নিশ্চিত সফল হলাম।


বুড়ো লোকটা স্বপনেও কল্পনা করেনি আমার চিন্তা আর পরিকল্পনার গভীরতা সম্বন্ধে; এ কথা ভাবতেই আমি মৃদু হাসলাম এবং বোধহয় লোকটা তা শুনতে পেয়েছিল। হঠাৎ লোকটি একটু নড়ে উঠলো। আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি ভয় পেয়ে গেছি! কিন্তু না, মোটেও ভয় পাই নাই। ঘরটা ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমি যে দরজাটা খুলছি লোকটা নিশ্চয়ই তা বুঝতে পারবে না। আমি খুব ধীরে-সুস্থে, সতর্কতার সাথে দরজাটা খুলতে লাগলাম। প্রথমে মাথা, তারপর হাত ঢুকালাম আর সাথে কাপড় দিয়ে ঢাঁকা লন্ঠন। হঠাৎ দেখি লোকটা ভয়ে আৎকে উঠলো, বিছানায় উঠে বসলো, চারিদিকে সতর্ক দৃষ্টি দিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে উঠল, "কে ওখানে? কে??!"

আমি বিচলিত না হয়ে তখনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। প্রায় ঘন্টাখানেক কোন নাড়াচাড়া না করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। লোকটা কি এবার শুয়ে পড়েছে? মনে হয় না। শুয়ে পড়লে নিশ্চিত শব্দ পেতাম। মনে হচ্ছে লোকটা কান দু'টি খাড়া করে ভয়ে ভয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছে। আমাকে ভাবনার মধ্যে রেখেই লোকটা হঠাৎ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদতে লাগলো। এবার নিশ্চিত হলাম লোকটা ভয়ে মুষড়ে গিয়ে কাচুমাচু হয়ে বিছানায় বসে আছে। আমরা দু'জনেই নিশ্চিতভাবে জানি আমি তার দরজায় দাঁড়িয়ে আছি। লোকটা আমাকে দেখতে পাচ্ছে না, আমার উপস্থিতির কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছে না; কিন্তু অনুভব করছেন আমি আছি এখানে। এখন লোকটা জানে যে, মৃত্যু দূত তার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তবে এই মৃত্যু দূত যে আমি তা সে জানে না।

ধীরে ধীরে খুব সতর্কতার সাথে লন্ঠনের কাপড়টা একটু একটু সরাতে লাগলাম, যতক্ষণ না সরু তীর্যক আলোক রশ্মিটা তার ভয়ঙ্কর শকুনি চোখে গিয়ে না পড়ে। ও মোর খোদা! বুড়োর চোখ দেখি খোলা; একদম খোলা। তার চোখের দৃষ্টি আমার উপর পড়তেই রাগটা বেড়ে গেল বহুগুণে; অপলকে স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে রইলো বুড়োটা। আমি তার মুখটা দেখতে পেলাম না; আমার দৃষ্টি শুধু তার চোখের দিকে, কেবল তার নীল পর্দা দিয়ে আবৃত উজ্জ্বল চোখটা দেখছিলাম। হালকা নীলাভ অসহ্য এ পর্দাটা আমার অস্থিমজ্জা শীতল করে দিচ্ছিল। যেহেতু লন্ঠনের চিকন একটা আলোকরশ্মি কেবল তার চোখে ফেলেছিলাম সেহেতু তার মুখ কিংবা শরীরের বাকি অংশগুলো দেখা যাচ্ছিল না।

আমি তো তোমাকে আগেই বলেছি, আমার শ্রবণ শক্তি আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়ে গেছে? আমি এখন খুব চিকন শব্দ, এমনকি খুব আস্তে আসা শব্দও স্পষ্ট শুনতে পাই, অনেকটা দেয়াল ঘড়ির শব্দ ওয়ালের ওপর পাশ থেকে শুনার মত। আমি নিশ্চিত ছিলাম ওটা বুড়ো লোকটার হৃদকম্পনের শব্দ ছিল; কারণ, এই শব্দের সাথে আমি পরিচিত ছিলাম। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করলাম কিন্তু যত সময় যাচ্ছে শব্দটা তত বাড়ছিল। নিশ্চয় লোকটার ভয় আগের চেয়ে বহুগুণে বেড়ে গেছে। এদিকে লোকটার হৃদকম্পন বাড়ার সাথে সাথে আমার রাগও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে; এতে বিদঘুটে এ শব্দটা আর যন্ত্রনাদায়ক মনে হল। এটি রাগের চেয়েও বড় কিছু ছিল। নীরব নিস্তব্ধ আর অন্ধকার রুমটাতে আমার রাগটা ধীরে ধীরে ভয়ে রূপ নিল; আর আমার হৃদকম্পন এত জোরে হচ্ছিল যে, মনে হতে লাগলো কেউ না কেউ তা শুনছে।

সময় ঘনিয়ে আসলো! আমি তাড়াহুড়ো করে ঘরটির ভেতরে ঢুকলাম। স্পষ্ট শুনতে পেলাম, লোকটা প্রচন্ড ভয়ে কাবু হয়ে কাঁদছে "আমি মরে যাচ্ছি।" আমি যত বেশি ঘনিষ্ট হচ্ছি বুড়োটা তত ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছিল; লোকটা বিছানার চাঁদরটা মাথার উপর শক্ত করে ধরে একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরীর চেষ্টা করলো। একদম কাছে চলে আসায় তার হৃদকম্পন স্পষ্ট শুনা যাচ্ছিল। এদিকে শিকার খুব কাছে থাকায় আমি সফলতার গন্ধ পাচ্ছিলাম। আমি যখন তার হৃৎপিন্ডে প্রচন্ড আঘাত করলাম, তখনও বেশ কয়েক মিনিট পর্যন্ত তার হৃদকম্পন শুনা গেলে; তবে কোন গোঙানীর শব্দ শুনা নেই। তাহলে কি মানুষের আত্মা দেহত্যাগ করলেও হৃৎপিন্ডের মৃত্যু হতে আরেকটু বেশি সময় প্রয়োজন পড়? আমাকে ভাবনার সময় দিয়েই হঠাৎ করে বুড়োর হৃদকম্প থেমে গেল।

হ্যা, বুড়ো লোকটা মারা গেছে। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিছানার চাঁদরটা সরিয়ে তার বুকের যে পাশে হৃদয় প্রকোস্ট অবস্থিত ঠিক সেই স্থানে কান লাগালাম। নাহ! কোন সাড়াশব্দ নেই। নিশ্চিতভাবে লোকটা মারা গেছে। শরীরটা একদম পাথরের মত শক্ত হয়ে গেছে। ভয়ংকর শকুনি চোখটা আর আমাকে বিরক্ত করবে না!


তবুও তুমি বলবে আমি পাগল? তুমি নিশ্চয় আরো অবাক হবে যখন শুনবে আমি কত সতর্কতার সাথে তার লাশটা লুকিয়ে রেখেছি, কেউ যাতে টের না পায়। একদম ঠান্ডা মেজাজে প্রথমে তার মাথাটিকে কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করলাম, তারপর যথাক্রমে হাত ও পা টুকরো করলাম। এ সময়টাতে আমি খুবই সতর্ক ছিলাম, যাতে একফোটা রক্ত মেঝেতে না পড়ে। এভাবে সারা শরীর কেটেকুটে সাইজ করে কাঠের তৈরী ঘরের মেঝের তিনটি টুকরো খুলে নিলাম; সাথে সাথে বুড়োর দেহের খন্ডিত অংশগুলো সেখানে স্তুপ করে জমিয়ে রাখলাম। এবার তার উপরে কাঠের টুকরোগুলো আগের মত বসিয়ে দিলাম, যাতে মানুষের দৃষ্টিগোচর না হয়।

যেই না সফলভাবে কাজটা শেষ করে একটা তৃপ্তির হাঁসি দেব; ঠিক তখনই বাইরের দরজায় কে যেন নক করল। সময় তখন ভোর চারটা; তবে অন্ধকার তখনো কাটে নাই। আমি মোটেও ভয় পেলাম না; নির্ভয়ে দরজাটা খুলে দেখলাম তিনজন পুলিশ অফিসার দরজায় দাঁড়িয়ে আছে!

পাশের ঘরের এক প্রতিবেশী এ ঘরে অনেক্ষণ ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ পেয়ে পুলিশে খবর দিয়েছিল; এজন্য তারা ঘরটা তল্লাশি করতে এবং ঘরের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসেছে।

আমি তাদেরকে ঘরে প্রবেশের অনুমতি দিলাম। বললাম, "কান্নাটা আমার ছিল; স্বপনে কিছু একটা কল্পনা করে ভয় পেয়ে ফুঁপিয়ে অনেক্ষণ কেঁদেছিলাম।" আর এ ঘরের বাসিন্দা বুড়ো লোকটা বাড়িতে নেই, তিনি তার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে গ্রামে বেড়াতে গেছেন। আমি তাদেরকে পুরো ঘরটা ভাল করে দেখালাম; তাদেরকেও ভাল করে খুজে দেখার আহ্বান করলাম। সবশেষে তাদেরকে বুড়ো লোকটার শয়নকক্ষে নিয়ে গেলাম। বসতে দিলাম, আর কিছু বলার আছে কিনা তাও জানতে চাইলাম।

আমার খুব স্বাভাবিক আর আন্তরিক কথাবার্তা তাদেরকে আশ্বস্ত করলো; তাৎক্ষণিক সময়ে বানিয়ে বলা গল্পটা তাদের বিশ্বাস হল। এভাবে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে আমাদের কথাবার্তা আগাচ্ছিল। ভাবছিলাম তারা সন্তুষ্ট হয়ে চলে যাবে।

হঠাৎ আমার মাথাটা কেমন যেন বিগড়ে গেল; একটা অস্বাভাবিক শব্দ কানে আসছে আমর;শব্দটি খুব পরিচিত! আমি দ্রুততার সাথে বেশি বেশি কথা বলতে লাগলাম; নিজের মধ্যে একটা অস্বস্তি টের পেলাম। যত সময় যাচ্ছে শব্দটা তত পরিষ্কার শুনা যাচ্ছিলো। পুলিশ তখনো চেয়ারে বসে কথা বলছে। তারা কি আমার এই মানসিক পরিবর্তনটা আন্দাজ করতে পেরেছে? এখনো ভোর হয়নি, ঘুটঘুটে অন্ধকারও কাটে নাই; নিশ্চয় তারা আমার মুখটা টিকমত দেখতে পাচ্ছে না।

হঠাৎ খেয়াল হলো শব্দটা আমার কানে বাজছে না; কি হচ্ছে এসব? মাথামুন্ডু কিছুই বুঝলাম না। টেনশনে মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। আমি তখনো উচ্চস্বরে দ্রুত বেগে কথা বলছিলাম। এবার অদৃশ্য শব্দটা আরো স্পষ্ট শুনতে পেলাম। শব্দটা খুব আস্তে ও দ্রুত আসছিল; দেয়াল ভেদ করে ঘড়ির কাঁটার শব্দ যেমন দেয়ালে মিশে একাকার হয়ে যায় শব্দটা অনেকটা সেরকম ছিল; এ শব্দটা আমার অনেক দিনের পরিচিতি। শব্দটা বাড়তেই থাকলো। পুলিশ কেন এখনো যাচ্ছে না? তাদের তো এখন চলে যাওয়া উচিৎ।

আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং সারা ঘর তন্ন তন্ন করে শব্দের উৎস খুজতে লাগলাম। ভয়ংকর এ শব্দটাকে পরাজিত করতে হাতের কাছের চেয়ারটা ধাম করে মেঝেতে ফেলে দিলাম যাতে আরো বেশি শব্দ হয়। আমি আরো জোরে কথা বলতে লাগলাম। পুলিশ তখনো শান্ত হয়ে বসে কথা বলছে, এমনকি হাঁসছেও! এটা কি বিশ্বাসযোগ্য যে, তারা কোন শব্দ পাচ্ছে না??

নাহ! তারা অবশ্যই শুনছে। আমি শতভাগ নিশ্চিত তারা শব্দটা শুনতে পাচ্ছে। আমি যে একটু আগে লোকটাকে খুন করেছি তা তারা নিশ্চিত হয়ে গেছে! তাহলে তারা কি জেনেও না জানার ভান করছে? আমার সাথে মশকরা করছে? তাদের হাঁসি আর অদৃশ্য শব্দটা আমার কানে ফলার মত বিধতে লাগল। হঠাৎ শব্দটা থেমে গেল। আমি মেঝের কাঠের বোর্ডের দিকে আংগুলি নির্দেশ করে বিলাপ করতে লাগলাম; হ্যা! সত্যি সত্যি আমি বুড়ো লোকটাকে খুন করেছি। কাঠের বোর্ডটা সরালেই তোমরা তার টুকরো করা দেহটা খুজে পাবে। আমিই লোকটাকে খুন করেছি। কিন্তু কেন লোকটার হৃদকম্পন বন্ধ হয় নাই?

কেন!?
শব্দটি কী এখনো কানে বাজছে?!



লেখক পরিচিতি -

'Edgar Allan Poe' ১৮০৯ সালের ১৯শে জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে (Boston) জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি একাধারে একজন লেখক, সম্পাদক এবং সাহিত্য সমালোচক ছিলেন। 'এলান পো'-কে 'detective fiction' এর আবিষ্কারক বলা হয়; এছাড়া সাহিত্যে 'science fiction' লেখার ধারণাটা তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ থাকলেও 'ছোট গল্প' লিখেই তিনি বিশ্ব সাহিত্যে নিজের আসন পোক্ত করেন। সমালোচকদের দৃষ্টিতে তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গল্পকারদের অন্যতম ছিলেন। এছাড়া আমেরিকান সাহিত্যে ছোট গল্পের একটা শক্ত অবস্থান তাঁর হাত ধরেই রোপিত হয়। তিনি প্রথম আমেরিকান লেখক যিনি বই লেখে জীবিকা নির্বাহ করেছিলেন। মূলত; আর্থিক অনটন থেকে বাঁচতেই তিনি লেখালেখি করতেন। 'The Narrative of Arthur Gordon Pym of Nantucket' তাঁর একমাত্র কমপ্লিট উপন্যাস।

১৮৪৯ সালের ৭ই অক্টোবর মাত্র ৪০ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।


জীবনের শেষ বছরটা লেখক এ বাড়িতে বসবাস করতেন। (Bronx, New York)। যুক্তরাষ্ট্র

তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগুলোর মধ্যে আছে -

 The Tell-Tale Heart
 The Black Cat
 The Cask of Amontillado
 A Descent into the Maelström
 The Facts in the Case of M. Valdemar
 The Fall of the House of Ushe
 The Gold-Bug
 Hop-Frog
 The Imp of the Perverse
 Ligeia
 The Masque of the Red Death
 Morella
 The Murders in the Rue Morgue
 The Oval Portrait
 The Pit and the Pendulum
 The Premature Burial
 The Purloined Letter
 The System of Doctor Tarr and Professor Fether.


ফটো ক্রেডিট,
গুগল।

চাইলে পড়তে পারেন-

আমার সবচেয়ে পঠিত পোস্ট।
সবচেয়ে লাইকপ্রাপ্ত গল্প-ধূমকেতু
ধর্ষণ ও ধর্ষক (বাংলাদেশ/বহির্বিশ্ব)
অনুবাদ গল্প-(দি নেকলেস)
দি গিফট অফ দ্যা ম্যাজাই
গল্প লেখার সহজ পাঠ
সবচেয়ে পঠিত প্রবন্ধ।
আধুনিক কবিতার পাঠ (সমালোচনা)
আলোচিত ফিচার 'দি লাঞ্চিয়ন'।
ব্রিটেনের প্রবাস জীবন- স্মৃতিকথা।
সবচেয়ে পঠিত গল্প।
ছবি ব্লগ (লন্ডনের ডায়েরি-১)।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:২৬
৫৩টি মন্তব্য ৫৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×