somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেহাতি কুটুম

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




গ্রাম থেকে আসাদের যে মজা করে ফরেনার বলে সে কথাটা প্রথম শুনি মুনমুনের কাছে(ছেলেদের নামও মুনমুন হয়? আগে শুনি নাই! ওর ভাইয়ের নাম নাকি আবার শামসুন! ভাবেন দেখি অবস্থাটা!)। সেই মুনমুন একদিন বলল - বাসায় দুইটা ফরেনার আসছে গতকাল।
আমি ভাবলাম বুঝি বিদেশী কেউ বেড়াতে এসেছে ওদের বাড়িতে।
বললাম - কোনদেশের মানুষ? আমেরিকা নাকি?
- আরে নাহ! গ্রামের বাড়ি থেকে দুসম্পর্কের চাচা আর চাচার পোলা আসছে ঢাকা দেখতে। খবর নাই বার্তা নাই পাতি হাঁসের ঠ্যাং ধইরা দোলাইতে দোলাইতে বাসায় হাজির। আগেতো কোনদিন ঢাকায় আসে নাই। তাই বিরাট সমস্যা হয়ে গেছে।
- কি সমস্যা?
- যা দ্যাখে তাই নিয়েই প্রশ্ন করে। ড্রইং রুমের এ্যাকুরিয়াম দেখে আম্মারে জিজ্ঞাস করলো তোমাগো বাড়িতে ফিরিজ নাই? মাছ দেখি কাচেঁর বাক্সে জিয়াল দিয়া রাখছো। রাতে আমার ঘরে ঢুকে জিজ্ঞাস করলো কি কর ভাতিজা?নেটে এক বন্ধুর সাথে আড্ডা দিতেছিলাম, তাই কইলাম -চ্যাট করি। দেখি চাচা মুখ কালো কইরা গেলোগা। একটু পরে আম্মা আমারে কয় তুই তোর চাচারে গালি দিছিস কেন?রস বেশী হয়ে গেছে না? আসুক তোর বাপ আজকে। ছ্যাচা দিয়ে তোর রস আমি বাইর করবো। কি যন্ত্রনা বল দেখি! কই চ্যাট আর কই...।
- তারপর?
- চাচার ছেলেটা আমার সামনেই কার্পেটের ওপর ফোত ফোত করে সর্দি ঝাড়ে।ওদিকে চাচা ডিস্টেম্পার করা ওয়ালে পানের পিক ফালায়া যা একটা পেইন্টিং বানাইছে না, ভিঞ্চি-পিকাসো ফেইল। সাথে আবার সোনালী বিড়ির গোডাউন নিয়া আসছে,গন্ধের ঠেলায় ঘরে একটা মশাও ঢুকে না। তারচেয়ে বড় ঝামেলা হইলো দুইজনের কেউই পায়খানা কইরা কমোডে পানি ঢালে না। গাট্টি বোচকা নিয়া যেভাবে হাজির হইছে মনেতো হয় না এতো সহজে ফিরত যাবে। কি যন্ত্রনার মধ্যে পড়লাম দ্যাখতো!



এতো গেল চাচা ভাতিজার সমস্যা। আরেকজন বিপদে পড়েছেন তার নানাকে নিয়ে। নানাজান শহরে তশরিফ রেখেছেন বহুদিন বাদে। এখন নাতির কাছে তার একটাই আবদার তাকে বই দেখাতে হবে। পড়ুয়া নাতিতো মহা আনন্দে নানাকে নিয়ে গেল আজীজ সুপার মার্কেট বই দেখাতে। কিন্তু সারি সারি বইয়ের দোকান দেখে নানাজান বললেন - তুই না আমারে বই দেখাইতে নিয়া যাবি? এইখানে দেখি খালি কিতাব আর কিতাব। এতোদিন বাদে শহরে আইছি ভাবলাম শাবানা আফার নতুন দুই একখান বই দেইখা যাই...
নাতি তার ভুল বুঝলো, এ বইতো বই নয়,এ বই হল সিনেমা। বেচারা ভুল শোধরাতে নানাকে নিয়ে ঢুকলো সিনেমা হলে। কিন্তু হালের ঢাকাই সিনেমার যে কি হাল সেটাতো আর নানাজান জানেন না। তাই ইন্টারভ্যালের আগেই তার হার্ট এ্যাটাক হয়ে গেল। শেষে হাসপাতাল ,আই সি ইউ করে করে সে যাত্রায় বেঁচে গেলেন। এদিকে প্রাইভেট হাসপাতাল বলে কথা। এখানে সেবার চেয়ে পয়সা সব সময়ই একশো কদম আগে থাকে। নানাকে ছাড়িয়ে নিতে গিয়ে হাসপাতালের বিলে টাকার অংক দেখে নাতি বেচারার হার্ট এ্যাটাক হবার জোগাড়। ভাগ্যিস বয়স কম, হার্ট এখনো শক্ত। নইলে একটা কেলেংকারি হয়ে যেত আরকি।
এবার একটা জোকস বলি। গ্রাম থেকে শহরে বেড়াতে এসেছে এক লোক। ঢাকা শহরের এদিক সেদিক ঘুরে টুরে সে ফিরে গেল তার গ্রামে। গ্রামের লোকজন সভাবতই তাকে ঘিরে ধরলো- কিরে শহর থেকে কি আনলি দেখাবি না?
লোকটা একজোড়া রবার গ্লাভস বের করলো। তারপর বললো- এইটা খুবই কামের জিনিস। এইটা পইরা হাত ধুইলে হাত ধোয়া হয় ঠিকই কিন্তু হাত একটুও ভেজে না।
গ্রাম থেকে আসা মানুষদের সরলতা আর বোকামি নিয়ে এমনি আরো অনেক জোকস চালু আছে আমাদের এই শহরে। চালু আছে m‡¤সম্বোধনেরva‡bi নানান রকম কায়দা। বেশি চালু m‡¤m‡¤সvabম্বোধন হল -দ্যাশের বাড়ির লোক। অবশ্য আমাদের এই দেহাতি কুটুমদের কেউ কেউ অন্য নামেও সম্বোধনvab করেন। যেমন ধরেন - মদন,মফিজ, আবুল,ফরেনার,ভো... ইত্যাদি।
আমরা যারা ঢাকায় থাকি তাদের অনেকের কাছেই হয়তো দেহাতি কুটুম একটা বিরক্তির বস্তু। স্পঞ্জের একজোড়া স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে, মাথায় একটা কাঠাঁল নিয়ে মহাউৎসাহে হৈ হৈ করতে করতে ঢাকায় চলে আসেন তারা। কিন্তু আসার পর পড়ে যান বিপাকে। কারন গৃহকর্তীর হাসি মুখে আন্তরিকতার ছোয়াঁচ নেই একটুও। কথায় কেমন একটা টান টান ভাব। অফিস ফেরত গৃহকর্তা মাসের ২৫ তারিখে বাসায় মেহমান দেখে মুখ কালো করে ফেলেন। দু একটা ভদ্রতার কথা ছাড়া তার মুখ থেকে আর তেমন কিছুই বেরোয় না। বাধ্য হয়েই তখন বাচ্চাগুলোর সাথে খাতির জমানোর চেষ্টা করতে হয়। তবে শহুরে পোলাপান বলে কথা। এতো সহজে কি আর ধরা দেয়। মিছা মিছি ভুতের কেচ্ছা ফেদে আর সাস্থ্যবান শহুরে শিশুদের পিঠ বাকানো ওজন সহ্য করে ঘন্টার পর ঘন্টা হাতি হাতি খেলে বহু কষ্টে তাদের মন পাওয়া যায়। তাতে কিছুটা শান্তি পায় মেহমান। কিন্তু সে শান্তি নিমিষেই উড়ে যায় রাতের বেলা শক্ত সিমেন্টের ফ্লোরে পাতা বিছানা দেখে। তাদেরই বা দোষ কি? শহরের এই ঘিঞ্জি ঘিঞ্জি বাড়ির ছোট্ট ছোট্ট রুমে নিজেদেরই শোয়ার জায়গা হয় না, তার উপর আবার মেহমান। শহরের সব কিছুতেই যেন কমতি। গ্রামের থাল থাল পান্তা খাওয়া পেট তাই সকালের নাস্তায় দুটো পরোটা দিয়ে ভরে না। লজ্জায় খিদের কথা মুখ ফুটে বলাও যায় না। প্রতীক্ষায় থাকতে হয় কখন দুপুরে কটা ভাত বেশি খাওয়া যাবে। এমন করেই দিন কয়েক কেটে যায়। তারপর হুট করেই হয়তো একদিন বাজারের থলিটা এগিয়ে দেন গৃহকর্তী। দেহাতি কুটুম বুঝে ফেলেন তার বোঝাটা এ সংসারে বড্ড ভারি হয়ে গেছে। এবার তল্পি তল্পা গোটাও বাপ। মন চল রুপের নগরে। চিড়িয়াখানাটা দেখা হয় না। বোটানিক্যাল গার্ডেনটাও অদেখা রয়ে যায়। তবুও ঢাকা শহর বেড়াবার আশ মিটে যায় তার। তারপর একদিন বিদায় টিদায় নিয়ে ‘দ্যাশের বাড়ির’ লোকটা ফিরে যায় নিজের ঠিকানায়, ‘দ্যাশের বাড়িতে’। সুবিশাল এই ঢাকা শহর পড়ে থাকে কোন এক দেহাতি কুটুমের এক মুঠো উচ্ছিষ্ট ¯স্বপ্ন নিয়ে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×