ঢাকা তোমায় ভালোবাসি: বাহাদুর শাহ পার্ক
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আমার ইংরেজ বন্ধু অলিভার কানুপকে ঢাকা শহরটা ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলাম। যাচ্ছি সদর ঘাটের দিকে। হাতের বায়ে পড়ল বাহাদুর শাহ পার্ক। পার্কের মাথা উচু মনুমেন্টটা দেখে ও প্রশ্ন করলো হঠাৎ Ôহেই ডুড! হোয়াট ইজ দিস প্লেইস? মানে হল গিয়ে আরে দোস্ত ! এইটা কোন জায়গা?
বাহাদুর শাহ পার্ক mসম্পর্কে‡Ü ঠিকঠাক জানতাম না। ভাসা ভাসা ভাবে জানি ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের সময় এখানে দেশী সৈনিকদের ফাসি দিয়েছিল ইংরেজরা। তাই বললাম- দিস ইজ দ্যা প্লেস হয়ার ইওর পিপল কিলড মাই পিপল।
ব্যাস, বাগড়া বেধে গেল এটুকুতেই। উত্তর শুনে কেমন যেন ঠান্ডা মেরে গেল সে। তারপর সেই যে গেল আর এলো না। এমনকি সেদিনের পর আর কোনদিন আমার সাথে যোগাযোগও করেনি অলিভার। ভাবলাম-যাহ বাবা! আমি এমন কি বললাম যে ব্যাটা †Mv¯গোস্বাv হয়ে গেল!
খানিকটা রাগ নিয়েই বইপত্র ঘাটাঘাটি শুরু করলাম। দেখি ভুল কিছু বলিনি আমি।
এ উপমহাদেশের অন্তত দেড়শো বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসের সাথে ভিষন ভাবে জড়িয়ে আছে বাহাদুর শাহ পার্ক। সাক্ষী হয়ে আছে অসংখ্য ঘটনার।
আঠার শতকের শেষের দিকে এখানে ছিল ঢাকার আর্মেনীয়দের ক্লাব। ক্লাবে চলতো তাদের বিলিয়ার্ড খেলার আসর। বিলিয়ার্ডের বল ছিল দেখতে অনেকটা ডিমের মতন, বিশেষ করে সাদা বলটা। আর এখানকার স্থানীয়রা ডিমকে বলতো আন্ডা। তাই স্থানীয়দের মুখে মুখে বিলিয়ার্ড খেলার সেই ক্লাবটির নাম হয়ে গেল আন্টাঘর। উপনিবেশিক ইংরেজরা উনিশ শতকের গোড়ার দিকে আন্টাঘর কিনে নেয় এবং জীর্ন হয়ে আসা ভবনটি ভেঙে তারা জমিটাকে ফাকা করে ফেলে। সেই থেকে ওটার নাম হয়ে যায় আন্টঘরের ময়দান।
আগেই বলেছি আন্টাঘরের ময়দান এর সাথে এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তার শুরুটা হয়েছিল আসলে ১৮৫৭ সালে। উপনিবেশিক শাসক গোষ্ঠীর শোষন, বৈষম্য আর হঠকারিতার বিরুদ্ধে প্রথম সোচ্চার প্রতিবাদ জানায় ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর দেশী সৈন্যরা। সশস্ত্র বিপ্লবে গর্জে ওঠে সিপাহীরা। যদিও সেই বিপ্লব ব্যার্থ হয়ে যায় নানান ষড়যন্ত্রের কারনে। কিন্তু সেটাই ছিল ¯স্বাধীনতারvaxbZvi প্রথম উদ্যোগ, প্রথম প্রেরনা। এই বিপ্লবের সূত্র ধরেই পরবর্তীতে রাজনৈতিক উপনিবেশিকতা থেকে মুক্ত হই আমরা। কিন্তু ইংরেজ শাষকরা সেই মহান বিপ্লবের শরীরে বিদ্রোহের রং চাপিয়ে তথকথিত বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করায় দেশী সিপাহীদের। একরকম নির্বিচারেই ফাসি দেয়া হয় তাদের। সেই সিপাহীদের মধ্য থেকে কয়েকজন বিপ্লবীকে ফাসি দেয়া হয় এই আন্টাঘরের ময়দানে।
তখনকার দিনের একটি স্থানীয় ইংরেজী পত্রিকাতে এই খবর ছাপা হয়েছিল ফলাও করে - বৃহষ্পতিবার সকালে, ঠিক সাতটার সময় চারজন বিদ্রোহী, যাদের ধরা হয়েছিল রোববার অপরাহ্নে, এবং জজ এবারকোম্বি যাদের মৃত্যুদন্ডাদেশ দিয়েছিলেন , তাদের ফাঁসীতে ঝোলানো হয়েছিল গীর্জার উল্টোদিকে ফাঁকা জায়গায় তৈরি ফাঁসীকাঠে। ফাঁসীর মঞ্চের ডানদিকে ছিল নাবিকরা, সমানের দিকে ছিল সেচ্ছাসেবী পদাতিক ও অশ্বারোহী বাহিনী। তিনজন বিদ্রোহী নিজেরাই গলায় দড়ি ঝুলিয়ে মৃত্যুবরন করলো সাহসের সঙ্গে। চতুর্থজন ভয়ে অজ্ঞান হয়েগিয়েছিলেন এবং তাকে ঝোলাবার জন্য সাহায্যের দরকার হয়ে পড়েছিল। তাদের আহত সাথীদের হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল এ দৃশ্য দেখানোন জন্য। যারা বিশ্বস্ত ছিল তারাও ছিল সেখানে।
শুধু ফাঁসীই নয় মৃত্যুর পর কয়েকদিন পর্যন্ত তাদের লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয় ময়দানের গাছের সাথে, যাতে করে লোকের মনে ভয় ধরে যায়। কেউ যাতে আর বিপ্লবের নাম নেবার সাহস না পায়। ভয় ধরেছিল লোকের মনে ঠিকই, তবে সেটা বিপ্লবের ভয় নয়, ভূতের ভয়। আন্টাঘরের ময়দান নিয়ে ঢাকায় নানান ভৌতিক গল্প ছড়িয়ে পড়েছিল তখন। বাংলাবাজার, শাখারিবাজার এবং কলতাবাজারের লোকজন সন্ধ্যার পর এই ময়দানের ধারে কাছে ঘেষতো না।
১৮৫৮ সালে রানী ভিক্টোরিয়া সিদ্ধান্ত নেন এতো বড় ভূখন্ডের শাসন ভার কেবল মাত্র একটি কোম্পানীর হাতে ছেড়ে দেয়া ঠিক হচ্ছে না। তাই তিনি ভারতবর্ষের শাসন ভার নিজের হাতে তুলে নেবার ঘোষনা দেন। রানীর এই ঘোষনাপত্র তখন পড়ে শোনানো হয় এই ময়দানে। আর তারপর থেকেই আন্টঘর ময়দানের নাম হয়ে যায় ভিক্টোরিয়া পার্ক।
এরপর নওয়াব আব্দুল গনি নিজ উদ্যোগে পার্কের উন্নয়ন সাধন করেন। বলতে গেলে পার্কের আজকের যে চেহারা তার পুরোটাই আসলে নবাব সাহেবের অবদান। নবাব আব্দুল গনির নাতি খাজা হাফিজুল্লাহর মারা গেলে তার স্মরনে পার্কের ভেতর একটি অবিলিস্ক নির্মান করেন নবাবের ইউরোপীয়ান বন্ধুরা।
১৯৫৭ সালে সিপাহী বিপ্লবের একশো বছর পূর্তিতে এ পার্কে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মান করা হয় এবং নতুন করে এর নাম করন করা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক।
তবে এই পার্কের ইতিহাস ঘাটতে ঘাটতে আরো একটা কষ্টের ব্যাপার ধরা পড়লো আমার চোখে। শোষন আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রহসনের বিচার বসিয়ে ফাঁসীর শাস্তি দেয় বিপ্লবী সিপাহীদের। বিচারের সেই পুরো প্রক্রিয়াটা যাতে নিরঙ্কুশ ভাবে তাদের পক্ষে নেয়া যায় সেজন্য তারা এর নাম দেয় সিপয় মিউটিনি যার মানে হল সিপাহী বিদ্রোহ। আর্শ্চযের বিষয় আমরাও কথাটা মেনে নিয়ে দিব্যি বসে আছি। ইতিহাসে এই মহান বিপ্লবকে প্রায় সবাই নাম করন করছেন সিপাহী বিদ্রোহ হিসেবে। আমাদের দেশে এতো জ্ঞানী গুনী ইতিহাস বেত্তা বুদ্ধিজিবী আছেন, তারা একবারও ভাবলেন না যে বিপ্লব আর বিদ্রোহ কখনই এক জিনিস হতে পারে না। ¯স্বাধীনতাvaxbZv আন্দোলনের দাবানলে যারা প্রথম স্ফুলিঙ্গ, সবচেয়ে প্রিয় যে জীবন সেই জীবনকে যারা হাসি মুখে বিলিয়ে দিয়ে গেল মানুষের মুক্তির জন্য, এ মাটির সেইসব শহীদদের বিদ্রোহী নাম দিয়ে আমরা কি তাদের অপমান করছি না? কেউ কেউ আবার ব্যাখা দেয়ার চেষ্টা করেন - বিদ্রোহের উদ্দেশ্য যদি সফল হয় তাহলে তাকে বিপ্লব বলা যায়।
আমার কথা হচ্ছে এই বিদ্রোহের উদ্দেশ্য ছিল উপনিবেশিক শক্তির থাবা থেকে দেশকে মুক্ত করা, ¯স্বাধীন করা। দেরিতে হলেও সেটা কিন্ত শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়েছে। তাহলে এই বিপ্লবকে আমরা বিদ্রোহ বলব কেন? এমন নয় তো যে, আমরা স্বাধীনvaxb সে কথাটা আমাদের নিজেদেরই বিশ্বাস হয় না?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।
এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?
আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন
ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=
০১।
=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।
পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।
জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন