somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সম্পাদক (ছোট গল্প)

১৭ ই এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার একটা গুহা আছে। আজকালকার পত্রিকা অফিসগুলোতে পায়রার খোপের মত জায়গা বরাদ্দ থাকে এক একজনের জন্য। এতে নাকি গাল গল্প কমে, কাজ ভালো হয় । আসলে সব ধাপ্পাবাজি। একজনকে একটা খুপড়ি দিলে সেই বেচারা একা একা চা সিঙ্গাড়া খেতে পারে। তা না হলে এক কাপ চা খেতে সারা অফিস শুদ্ধ সবাইকে খাওয়াতে হয়। খরচা বেড়ে যায়। এমনিতেই পত্রিকার চাকরিতে বেতন কম। তাও বছরে বার তিনেকের বেশি পায় কি পায় না তার ঠিক নেই। এতো খরচা করে পোষায়?
তবে আমার জন্য গুহাটা মহা দরকারি জায়গা। গুহার ভেতরে আমার টেবিলে বসে আমি খবর প্রসব করি। মাথার উপর একটা ফ্যান আছে একদম আমাদের সম্পাদকের মতন। মানে বাতাস দেয় যতটুকু কোথ পাড়ে তার চেয়েও বেশি। আমি সারাদিন টেবিলে বসে বসে খবরের নখ কাটি,চুল কাটি,দাঁতের ধার বাড়াই কমাই। কয়দিন ধরে পেটের মধ্যে একটা নতুন খবর হাত পা ছোড়া ছুড়ি করছে। যেকোন সময় প্রসব বেদনা উঠবে। তাই আমি মনে মনে তৈরি হচ্ছিলাম। এমন সময় ফোনটা ককিয়ে উঠলো - কে? ইমদাদ? একটু আমার ঘরে আসোতো।
সম্পাদকের ফোন। আমি একটু বিরক্ত হই। এই অসময়ে ডাকা মানে খামাখা কতক্ষন ভ্যাজর ভ্যাজর করবে। আজকে আবার সাথে করে মাথা ধরার বড়িও আনি নাই। ধুর! যন্ত্রনা।
সম্পাদকের লালবাতি জ্বলছে। থুড়ি সম্পাদকের ঘরে লালবাতি জ্বলছে। মিটিং করছে বোধহয় কারো সাথে। আমি টুক করে ঢুকে গেলাম। সম্পাদকের এসি নষ্ট। ছাড়ার পর ঘন্টা খানেক ঠান্ডা বাতাস দেয়, তারপরে বন্ধ। এই ঘরের দরজাটা তাই বেশিক্ষন খুলে রাখা যায় না। আমি ঢুকে দেখি ভেতরে একটা লোক বসা। লোক না বলে মাল বলাই ভালো। পরনে এ ওয়ান কাপড়ের স্যুট। গলায় চেইন, হাতে গোটা দশেক আংটি। জুতো জোড়া এমন ঝা চকচকে দেখলে মন চায় একটা কামড় দেই। দরজার শব্ধ শুনেও সম্পাদক আমার দিকে তাকায়নি। বুঝলাম এই ব্যাটা হোমরা চোমরা কেউ। আমি একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ি। সম্পাদক একটা গলা খাকারি দিয়ে শুরু করলেন।
- সাংবাদিকদের একটা দায়িত্ব আছে। সেইটা জানো? মরালিটি মরালিটি...তুমিতো মনে হয় কিছুই জানো না।
আমি কিছু বলি না। কিছু বলতে হয় না। সম্পাদক যখন আমার জায়গায় ছিলেন তখন তিনিও কিছু বলতেন না। আমি আবার যেদিন তার জায়গায় যাবো সেদিন বলবো।
- এই ভদ্রলোকরে চেনো তুমি?
মাথা ঝাকালাম,মানে চিনি না।
- ইনি হইতেছেন ঝুট মুট গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজের মালিক বরকত হুসেন। গেলো শনিবার তিন নম্বরi পেইজে তুমি তার নামে একটা নিউজ করছো নায়িকা কুনকুনরে জড়ায়া। ঘটনা শুইনা তার বউ তারে ডিভোর্সের হুমকি দিছে। সাথে নাকি বাচ্চা দুইটারেও নিয়া যাবে।
তার দিকে ফিরে তাকালাম। ভদ্রলোক খুব ঘামছিলেন। রুমাল দিয়ে ঘাম মুছলেন। বুঝলাম ওষুধে কাজ দিয়েছে। সম্পাদক আবার বললেন -
- সমাজের প্রতি আমাদের একটা দায়িত্ব আছে বুঝলা? মানি মানুষের মান নিয়া ঠেলা ধাক্কা করাটা আমাদের কাজ না।
- আমরাতো মিথ্যা কিছু লেখি নাই। ঘটনাতে সত্যতা আছে। উনারে আর কুনকুনরে একসাথে দেখা গেছে।
- একসাথে দেখা গেলেই হইলো নাকি? তুমি সেইটা নিউজ কইরা ফেলাবা?
- উনারা দুইজন একসাথে কক্সবাজারে বেড়াইতে গেছেন।
বরকত সাহেব ক্ষেপে ক্ষুপে অস্থির - আরে কি বলেন এইসব? আ...আ...আ...মিতো...
মুখে একটা সবজান্তা মার্কা হাসি ঝুলাই আমি। লোকটা তাই দেখে খাবি খেয়ে যায়।
- আমার কাছে প্রমান আছে। আপনারা দুইজনে একই বাস স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে ছিলেন সেই ছবি তোলা আছে...
- আরেহ! ক্ক... কি কইতাছেন আপনে...? আমিতো তারে চিনিই না।
- কিন্তু ছবিতো তা বলে না। ছবি বলে আপনে যারে চেনেন না বলতেছেন তার সাথে হাসি ঠাট্টা করতেছেন। একই ডাবের ফুটায় দুইজনে দুইটা ষ্ট্র ভরে পানি খাচ্ছেন...ছবি বলে আপনে তারে চেনেন...শুধু যে চেনেন তাই না খুব ভালো করেই চেনেন...
এবার সম্পাদক বাধ সাধে - আচ্ছা হইছে। যাই হইছে হইছে এখন এইটার সমাধান কি সেইটা বল। আমাদের একটা দায়িত্ব আছেতো...।
- সমাধান আর কি, কালকে আর একটা নিউজ করে দেবো যে যা ছাপা হয়েছে তা ভুল করে ছাপা হয়েছে আসলে ঘটনা অন্য...।
- হ্যা হ্যা, সেইটাই কর। ঠিক আছে বরকত সাহেব,যান তাইলে। গরমে মেলা কষ্ট করলেন হে...হে...হে এসিটা নষ্ট হয়ে গেছেতো। আমারেও গরমে কষ্ট করতে হয় হে...হে...হে...।
বরকত সাহেবে কপালে রুমালের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন - কয় টনের এসি লাগবে আমাকে বলেন। আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি। মিস্ত্রী এসে লাগিয়ে দেবে।
- কি যে বলেন না ভাই হে...হে...হে। আচ্ছা দিয়েন, দেড় টনের একটা দিয়েন, কেমন?
বরকত হুসেন ঘাম মুছতে মুছতে চলে গেলেন। সম্পাদক আমার দিকে ফিরলেন এবার - আর একটা খবর পয়দা করতো ইমদাদ। বাসার টিভিটা কয়দিন ধরে ডিসটাব দিতেছে। তোমার ভাবীও বায়না ধরছে একটা নতুন কালার টিভির জন্য।
কোন জবাব দিই না আমি। কোন আপত্তিও করি না। চুপচাপ ফেরত চললাম আমার গুহায়। পেটটা কেমন ব্যাথা ব্যাথা করছে। আর একটা খবর পয়দা করার সময় হয়ে এলো বলে।

(সাংবাদিক আঁতা সরকারের কলাম অবলম্বনে Aej¤‡b)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১২:২৫
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×