আমি ধন্য যে আমার সোনার বাংলায় জন্ম কিন্তু আমি দুঃক্ষিত যে আমি বাস্তবতার কাছে পরাজিত। আমার জন্ম থেকে মৃত্যু আমি যে কাজ করেছি তা মৃত্যুর পর আমকে কষ্ট দেয় আমাকে বুঝিয়ে দেয় আমার জাতি আমার মান রাখতে পারে নাই আর আমি আমার জাতির মান রাখতে পারি নাই।
আমি মৃত মানুষ হয়ে শুধুই ভাবি আমার জ়ন্ম থেকে মৃত্যু আমার গল্পটা কেমন হবে ? যদি অনেক কিছুই লুকিয়ে বলি তাহলে অনেকটা এরকম হয়- - -
বাংলাদেশের একটি ছোট শহরে আমার জন্ম।আমার বাবা খুব ছোট ধরনের ব্যবসায়ী।আমার জন্ম হয়েছিল সরকারী একটি হাসপাতালে।আমার জন্মের সময় আমার মা যখন প্রচন্ডে কষ্টে সীটের অভাবে হাসপাতালের বারান্দায় কাতরায় তখন তারই মত আরও দুজন হাসপাতালের বারান্দায় কাতরায়। আল্লাহর রহমতে আর ছোট একটি ম্যাজ়িকে আমি হাসপাতালের সীট পেলাম বাকিরা পেল না।
এই ছোট ম্যাজ়িকটির নাম ঘুষ ।আমার বাবা ঘুষ নামক এই ম্যাজ়িক দেখিয়ে আমাকে ভাল ভাবে জন্ম নেবার সুজগ করে দিল।শুধু ঘুষ নামক এই ম্যাজ়িক নয় আমার এক বড় মাপের ডাক্তার চাচুর ফোন আমাকে হাসপাতালের সীট দিয়েছিল আর বাকিদের রেখেছিল হাসপাতালের বারান্দায়।আমার জ়ীবনের শুরুটা হয়েছিল এভাবে।
আমি যখন হাটিহাটি পা পা করি তখন একবার ভিষণ অসুখে পরি।আমার অসুখে পরার কারন ছিল মেয়াদ ছাড়া টিকা ব্যবহার। আমি সরকারি হসপাতাল থেকে সবগুলো টিকা নিয়েছিলাম আর সে হাসপাতালের ডাক্তার যারা সমাজের নামিদামি মানুষ তারা ভাল টিকা বাইরে বিক্রি করে দিয়েছিল আর আমাদের জন্য রেখেছিল মেয়াদ ছাড়া টিকা।যে ম্যাজিকে আমার জন্ম এরকম আরেক্ ম্যাজিকে আমার অসুখ। এই অসুখ সামলে আমি সুস্থ হই।
এবার আসি আমার স্কুল জীবনের কথায়।আমি শহরের এক নামি স্কুলে চান্স পাই শুধু আমার বাবাকে ঘুষ নামক ম্যাজ়িক ব্যবহার করতে হয়। যে শিক্ষক আমার আদশ সে আমার বাবার ম্যাজিকে সারা দিয়ে অনেক ছাত্রকে বাদ দিয়ে আমাকে চান্স দেন, আমি তার আদশে অনুপ্রানিত।
আমি যখন বিশ্যবিদ্যালয়ের ছাত্র হবার চেস্টা করি তখন আমার এক পরিচিত বড় ভাই যে কিনা রাজনীতি করে সে তার সম্মানীত শিক্ষকের সাহায্যে প্রস্নপত্র ফাঁস করে এবং আমি ম্যাজিক দেখিয়ে বিশ্যবিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে যাই। বিশ্যবিদ্যালয়ের ছাত্রজীবন আমাকে আরও বেশি ম্যাজিক(দূনিতি) করতে শিখায়।বিভিন্ন নেতার জন্মদিন,মৃত্যুদিন অথবা দেশের বিশেষ দিনে কিভাবে চাঁদা নিতে হয় আর অনুষ্ঠান আয়োজনের নামে কিভাবে টাকা মারা যায় তা আমি হাতে-কলমে শিখি বিশ্যবিদ্যালয়ে।আমার ছাত্র জীবনে আমার বড় ভাইদের কাছে এবং আমার শিক্ষকের কাছে আমি যা শিখেছি তা আমাকে পরের জীবনে অনেক সাহাজ্য করে।
বিশ্যবিদ্যালয়ের ছাত্রজীবন শেষে আমি সরকারি চাকরীর চেষ্টা করি এবং এতে আমার রাজনীতির অবদান এবং ছটবেলা থেকে শিখে আসা ম্যাজিক কাজে আসে।আমি বড় নেতার নাম ভাঙ্গায় আর একটু ঘুষ দিয়ে ভাল সরকারী চাকুরী পাই।তারপর আর পিছে তাকাতে হয় নাই।।
এরপর আমি সরকারের চাকুরীজিবী হিসেবে অনেক জনসেবা করেছি।বিভিন্ন মানুষকে চাকুরী পাইয়ে দিয়েছি, কাজ পাইয়ে দিয়েছি। আমার হাত দিয়ে সরকার অনেক অনেক কাজ করিয়েছে আর আমি সবার দোয়ায় কিছু কিছু ঘুষ খেয়েছি।সরকারের টাকায় যখন এসি চালাতাম,যখন সরকারের দেয়া গাড়ীতে আমার সব আত্মীয়কে নিয়ে ঘুরে বেরাতাম তখন শুধু জানতাম সরকারি সবকিছু আমার অধিকার।সরকারকে দেবার আমার কিছু নাই শুধু আছে নেবার।অল্প পে-স্কেলের বেতন হবার পরেও আমার বাকি সবার মত বাড়ী-গাড়ি সবিই আছে।আমি ভাল মানুষ তাই আমার সব টাকাই সাদা। আমি সুধু একটু ঘুষ খেতাম কিন্তু তা কে বলতে পারে আমি সরকারি চাকুরিজীবি।আমি সমাজের ভাল মানুষ।
চাকুরি ছাড়ার পরে যোগ দেই ব্যবসায়।বড় ব্যবসায়ীর যত খারাপ গুন আমি তা পারি। ব্যবসায় ভাল কাজ কিন্তু ব্যবসায়ী হিসেবে আমার কাজ ছিল খারাপ।আমি চোরা-কারবারি করতাম আর পুলিশ-প্রশাসন সবাইকে ঘুষ দিতাম।আমার জন্ম যে ঘুঘ নামক ম্যাজিক দিয়ে হয়েছিল সেই ঘুষ আমাকে অনেক সম্পদ দিল।আমি যে শিক্ষা জন্ম থেকে পেয়েছি তা আমার জীবন বদলে দিয়েছে আমাকে দিয়েছে অনেক অনেক সম্পদ।
মরনের পর আমর ছেলেমেয়ে আমাকে সমাজের নামিদামি মানুষ হিসেবে কবর দিল বুদ্ধিজিবী কব্রস্থানে এবং আমার বউয়ের জন্য আগে থেকে আমার পাশের স্থান কিনে রাখল যা কিনা ঘুষ দিয়ে কিনতে হয়।আমার জন্ম থেকে মরন আমি ঘুষ নামক ম্যাজিক ব্যবহার করে সফল বাঙ্গালি।আমি জানি আমার মত অনেকে এরকম ম্যাজিক নিয়ে বেচে আছে কিন্তু মরে গেলে কি হবে আমি জানি না ।।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



