স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
জাতীয়
ঢাকা: অনলাইনে ব্যাংকিং সেবার নামে বিপুল সংখ্যক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করলেও তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক। এতে অ্যাকাউন্টে রাখা অর্থ হারাচ্ছেন গ্রাহক। আর সে অভিযোগ নিয়ে ব্যাংকে গিয়েও পাচ্ছেন না কোনো সদুত্তর বা সুরাহা। অনলাইন ব্যাংক ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ ব্যাংকটির বিরুদ্ধেই আনছেন অভিযোগ। বলছেন, ব্যাংকটির কর্মকর্তারাই সরাসরি এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত।
একাধিক ভুক্তভোগী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হোল্ডার বাংলানিউজের কাছে তাদের অভিযোগ জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র জানিয়েছেন সোমবার তার অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০ হাজার টাকা হারিয়েছেন।
মিজানুর রহমান নামের এই গ্রাহক জানিয়েছেন বোববার বিকেলে অনলাইনে একটি পেমেন্ট দেওয়ার চেষ্টা চালাতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, তার অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে এবং পাসওয়ার্ড পাল্টে দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে বিষয়টি ধরা পড়লে তিনি দ্রুত নিকটস্থ এটিএম বুথে গিয়ে টাকা তোলার চেষ্টা করে দেখতে পান অ্যাকাউন্টে ৫০ হাজার টাকার বেশি থাকার কথা থাকলেও সেখানে রয়েছে মাত্র ২০০ টাকা।
মিজানুর রহমান জানান, তার ব্র্যাক ব্যাংক আ্যাকাউন্ট নাম্বার ২৪০১১০২৪৩৩১২৯০০১। অনেক কষ্ট করে রাত জেগে কাজ করে এই অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা জমান। কিন্তু ব্র্যাক ব্যাংকের দূর্বল নিরাপত্তা ব্যাবস্থার জন্য তা খোয়া গেছে।
তিনি বলেন, রোববার রাত দশটার দিকে একটা পেমেন্ট দিতে গিয়ে বিষয়টি প্রথম ধরা পরে। পেমেন্ট দেওয়ার জন্য লগইন করতে চেষ্টা করে বারবার ভুল পাসওয়ার্ড দেখাতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং লকড হয়ে যায়। নিজের পাসওয়ার্ড ভুল হওয়ার কোনো কারণই ছিলো না। কিন্তু তখনও জানতাম না ইতোমধ্য আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে।
মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং এর মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফার হলে মোবাইল ফোনে মেসেজ আসে, যেহেতু কোন মেসেজ আসেনি তাই ভয় পাবার কোন কারণ দেখলাম না।
কিন্তু ইমেইল ওপেন করে দেখি ব্র্যাক ব্যাংক থেকে নতুন মেইল: Dear Customer, Your A/C:2401102433129001 has been Debited by Tk 50000 For credit to A/C:1532102559472001
মিজানুর রহমান বলেন, এই মেইল দেখে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল। রাতেই দ্রুত ছুটে গেলাম এটিএম বুথে। অ্যাকাউন্টে মাত্র ২০০ টাকা আছে। দ্রুত ব্র্যাকের হেল্প লাইন ১৬২২১ এ ফোন দিলাম। তাৎক্ষণিকভাবে তারা iBanking বন্ধ করে রাখলো।
মিজানুর রহমান জানান, সোমবার দুপুরে ব্র্যাক ব্যাংকে গিয়ে তিনি কোনো সদুত্তর পাননি। এসময় তিনি ব্যাংকটির আই-ব্যাংকিংয়ের নিরপত্তাহীনতার কথাও তুলে ধরেন। মাহবুব জানান, আই ব্যাংকিংয়ে প্রতিবার লগইন করলে ফোনে বা ইমেইলে ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো যেতো কিন্তু ব্র্যাক ব্যাংক তা করছেনা। ফান্ড ট্রান্সফারের সময়ও কোনো ভেরিফিকেশন কোড চেয়ে পাঠানো হয়না। এছাড়াও ব্র্যাক ব্যাংকে ইউজারনেম পরিবর্তন করা যায় না। পাসওয়ার্ড নিরাপদ করতে বিশ্বজুড়েই স্পেশাল ক্যারেক্টার, ইংরেজি অক্ষর ও সংখ্যার একটি মিশ্রণ রাখা হয়। ব্র্যাক ব্যাংকে তা হয় না। এখানে পাসওয়ার্ড কেবলই সংখ্যায়। এবং তা সর্বোচ্চ ৮ সংখ্যার।
মিজানুর রহমান বলেন, আমি মনে করি এতে পাসওয়ার্ড অবশ্যই অনিরাপদ থাকে।
মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, ব্যাঙ্কের কোনো অসাধু কর্মকর্তা এই ঘটনার সাথে জড়িত। এছাড়া অন্য কোনভাবেই ডাটা লিক হবার কথা নয়।
কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকে পড়তে পারে এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে মাহবুব বলেন, রোববার রাত থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিছানায় যাইনি। ৬ টা এন্টিভাইরাসের আপডেটেড ভার্সন দিয়ে ফুল পিসি স্ক্যান করিয়েছি। একটি ভাইরাসও পাইনি।
এদিকে আরও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া, অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে, নমিনির নাম না দিয়ে, ভূয়া ফোন নম্বর বা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিমনম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট করা এবং সেই অ্যাকাউন্টে আই-ব্যাংকিং করার ঘটনা অহরহ ঘটছে ব্র্যাক ব্যাংকে।
মিজানুর রহমান আলম একজন ফ্রিল্যান্সার। তিনি বলেন, আমি রাতের ঘুম হারাম করে সৎপথে উপার্জন করি। আমাদের অনেক কষ্টের টাকা। ব্র্যাক ব্যাংকের অনিরাপদ ব্যবস্থার কারণেই কষ্টে অর্জিত অর্থ হারালাম।
তিনি বলেন, শুধু আমি একা নই, অসংখ্য ফ্রিল্যান্সারই এই সমস্যার ভুক্তভোগী।
মিজানুর রহমানের এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়েছেন অন্যরাও। তাদের কেউ কেউ ব্র্যাক ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিতে চাইছেন। কেউ বলছেন, বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানো উচিত।
রুবেল আহমেদ নামে একজন ফ্রিল্যান্সার বলেছেন, এটা হ্যাকারের কাজ নয় কোন ব্যাংক কর্মকর্তা করেছেন। কারণ টাকা পাঠানোর মেসেজ মোবাইল ফোনে না এসে শুধু ইমেইল এসেছে।
অন্য ব্যাংক আগে মোবাইল ফোনে কোড পাঠায় সেই কোড ব্যবহার করে টাকা পাঠাতে হয় জানিয়ে রুবেল আহমেদ প্রশ্ন তুলেছেন, ব্র্যাক ব্যাংক কেন এই সিস্টেম চালু করে না?