২০১৩ সালে সাভারে সমকামী এক কওমী মাদ্রাসা শিক্ষকের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছে ৯ বছরের শিশু শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বী। এ ঘটনায় আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক হাফেজ মাওলানা মোশাররফ হোসেন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, অর্থের অভাবে গার্মেন্টস কর্মী কালাম ও নাহারের একমাত্র ছেলে রাব্বীকে হাফেজী পড়াশোনা করতে ভর্তি করেন মাদ্রাসায়। ৩ জুন হঠাৎ ছেলের অসুস্থতার খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে গিয়ে কালাম জানতে পারেন, তার একমাত্র সন্তান আর বেঁচে নেই। প্রথম পর্যায়ে এটি আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা হলেও, ঘটনার দুইদিন পর পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে রাব্বীর ওপর অমানবিক নির্যাতনের বিষয়টি। এরপর দোষী শিক্ষককে আটক করে আদালতে পাঠানো হলে, সেখানেই সে হত্যার পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয়। রাব্বীকে যৌন নির্যাতনের পরে সে এই ঘটনা তার বাবা মায়ের কাছে প্রকাশ করার কথা বললে, মোশাররফ তাকে গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেন।
অপর দিকে ১৩ বছর বয়সী এক মাদ্রাসা ছত্রকে বলৎকারের অভিযোগে সিরাজগঞ্জে এক মাদ্রাসা শিক্ষককে স্থানীয় জনতা মারপিট করে পুলিশে সোর্পদ করেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুস সবুর (৩৮) শহরের মালসাপাড়া কবরস্থান আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম কওমী মাদ্রাসার বাংলা শিক্ষক ও কাজিপুর উপজেলার সোনামুখি ইউনিয়নের পরানপুর পশ্চিমপাড়ার মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে। ২০১৪ সালে সোমবার রাতে এ ঘটনার পর ওই ছাত্রের মা রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
জানা যায়, শহরের ধানবান্ধি জেসি রোডের বাসিন্দা ওই ছেলেকে ৩ বছর আগে সিরাজগঞ্জ পৌরসভার তত্বাবধানে পরিচালিত ওই মাদ্রাসায় হাফিজি পড়ার জন্য ভর্তি করা হয়। ১৭ই ডিসেম্বর রাতে শিক্ষক আব্দুস সবুর ওই ছাত্রকে চায়ের কাপ ধুয়ে দেয়ার কথা বলে তার রুমে ডেকে নিয়ে দরজা আটকে জোরপূর্বক বলৎকারের চেষ্টা করে।
এদিকে হাটহাজারী পৌরসভার ফটিকা গ্রামের আবু হুমায়রা আর্দশ হেফজখানার এক ছাত্রকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তার মা বাদি হয়ে এক শিক্ষকের বিরদ্ধে মামলা করেন ২০১৩ সালে। শফিক হাটহাজারী উপজেলার বাগানবাজার ইউনিয়নের পুরান রামগড় গ্রামের কাজী বাড়ির করিমুল হকের ছেলে। নির্যাতনের শিকার মাদ্রাসা ছাত্র গত ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ওই মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। হাটহাজারী থানার উপ-পরিদশর্ক (এসআই) নজরুল ইসলাম জানান, গত ৬, ২০১৩২ জুলাই ঘটনাটি ঘটে।
অপর দিকে বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা কত আর এর শিক্ষার্থী সংখ্যাই বা কত এর কোন আনুষ্ঠানিক হিসেব নেই। নানা দল-উপদলে বিভক্ত কওমি মাদ্রাসাগুলোর রয়েছে অন্তত ১৯টি আলাদা বোর্ড যা তারা নিজেরাই গঠন করে নিয়েছে। বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বলছে এসব বোর্ডের ওপর সরকারেরও কোন নিয়ন্ত্র¿ণ নেই। আর সে কারণেই কওমি মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষা পদ্ধতি বা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর কোন ব্যবস্থাও নেয়া সম্ভব হয়না বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত। বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসাগুলোকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় এনে সরকারী নজরদারী বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তাহলেই মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্র নির্যাতন অনেকাংশে হ্রাস পাবে। এছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষকদেরকে দ্রুত বিচার আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করলে হয়তো কওমী মাদ্রাসায় ছাত্র নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ হবে।