২০০৮ সালের ৯ আগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে আয়োজিত শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রা শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে সমাবেশে দীপু মনি আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষার পক্ষে বক্তব্য দিয়েছিলেন। কিন্তু আদিবাসীদের স্বীকৃতির প্রশ্নে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের অবস্থান এখন উল্টো পথে।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর পাশাপাশি আদিবাসী শব্দটিরও উল্লেখ ছিল। আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় বাড়তি উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল।
কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের অবস্থান এর বিপরীত। সরকার বলছে, তিন পার্বত্য জেলার অবাঙালি অধিবাসীরা আদিবাসী নয়, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি গত ২৬ জুলাই এক সভায় উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি ও কূটনীতিকদের তিন পার্বত্য জেলার অধিবাসীদের আদিবাসী সম্বোধন করতে বারণ করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওই সভা হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই সভায় দেশের সংবিধান, ঐতিহাসিক বিভিন্ন দৃষ্টান্ত ও আন্তর্জাতিক তথ্য-উপাত্তের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলায় কোনো আদিবাসী নেই। ওই এলাকার অধিবাসীরা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী। তাদের যে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করা হবে, সেটি একটি মীমাংসিত বিষয়। সভায় উপস্থিত ইউরোপের একটি দেশের রাষ্ট্রদূত বিষয়টি নিয়ে আবার আলোচনার ইচ্ছা পোষণ করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে আর আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টির মীমাংসা হয়েছে আগেই।
জাতিসংঘের আদিবাসীবিষয়ক স্থায়ী ফোরামের (ইউএনপিএফআইআই) এক প্রতিবেদনের পর সরকার কঠোর অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মে মাসে তৈরি ওই প্রতিবেদনে আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত সেনাসদস্য ও সেনা ইউনিটকে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে বারণ করা হয়।
নির্বাচনী ইশতেহারে যা আছে: ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ আদিবাসী শব্দটি উল্লেখ করেছে। ওই ইশতেহারে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, অনুন্নত সম্প্রদায় ও অনগ্রসর অঞ্চল প্রসঙ্গে ১৮-এর দুই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। অনগ্রসর অঞ্চলসমূহের উন্নয়নে বর্ধিত উদ্যোগ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, আদিবাসী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের অধিকারের স্বীকৃতি এবং তাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনধারার স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ ও তাদের সুষম উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। বস্তি, চর, হাওর, বাঁওড়, উপকূলসহ সব অনগ্রসর অঞ্চলের মানুষের জীবনের মান উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





