সংবিধানে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের যথাযথ স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য পঞ্চদশ সংশোধনী রিভিউ করার দাবি জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির নেতারা। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসকাবে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এ দাবি জানান তারা। আদিবাসী বিষয়ে সরকারের অবস্থানের প্রেক্ষিতে পার্বত্য আদিবাসীদের প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ১৮ ধারা ১ ও ২ উপধারায় বলা হয়েছিল ‘আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবিক অধিকার লংঘনের অবসান ঘটানো হবে।’ সরকার গঠনের পরও মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসীদের অবদানের কথা স্বীকার করে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ সম্প্রতি সরকারিভাবে বলা হচ্ছে- এ দেশে কোনো আদিবাসী নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবি করে তারা বহিরাগত। বাঙ্গালীরাই এদেশের আদিবাসী।
বিভিন্ন পর্যায়ে করা এসব মন্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় সাংবাদিক সম্মেলনে। নাগরিক কমিটির নেতারা বলেন, ১৯৭২ সালে সংবিধানে আমাদেরকে (আদিবাসী) অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছি। ৪০ বছর পর আরেকবার সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃত হবার সুযোগ পেয়েছি। তবে এবারও আমাদের বিমুখ করা হয়েছে। তবে মনে রাখা দরকার মূলধারার জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি আদিবাসীদের বিকশিত হওয়ার সুযোগ না দিলে দেশের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন ও উন্নয়ন সম্ভব নয়।
নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ানের সভাপতিত্বে সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আবু সাঈদ খান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরুপা দেওয়ান, ইউ কে জেন, যশেশ্বর চাকমা প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মুং সানু চৌধুরী।
গৌতম দেওয়ান বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অযৌক্তিক। আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী ১০৭ ও ১৬৯ ধারা অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সব অঞ্চলে বাঙ্গালী ছাড়া যেসব জনগোষ্ঠী রয়েছে তারা আদিবাসী হিসেবে পরিচিত হওয়ার সব যোগ্যতা রাখে।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক মুং সান চৌধুরী বলেন, চরম অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে আদিবাসীরা। চাঁদপুরের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী ও গাজীপুরের বর্মণ ও কোচ জনগোষ্ঠী ইতিমধ্যেই তাদের পোশাক ও ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, সরকার তাদের দ্রুত নৃগোষ্ঠী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে চাচ্ছে। নৃগোষ্ঠীর অর্থ হলো মানুষের উত্পত্তি ও বিকাশ সম্পর্কিত জনসাধারণ। এটা কোনো পরিচয় হতে পারে না। তিনি বলেন, সরকার কোনো জাতির উপর মনগড়া পরিচয় চাপিয়ে দিতে পারে না। এটা কখনই গ্রহণযোগ্য হবে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে আদিবাসীদের ভূমিসহ তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের নিশ্চয়তা দান, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে অবিলম্বে রোডম্যাপ ঘোষণা, পার্বত্য চুক্তি ১৯৯৭, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন সমূহ (১৯৯৮ সনে সংশোধিত) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন-১৯৯৮ এর সাংবিধানিক সুরাহা নিশ্চিত করা।
এদিকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে এথনিক কাউন্সিল ও সিএলএনবি’র যৌথ উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল সকালে মানববন্ধনে বক্তারা দাবি করেন, দেশের প্রত্যেক নৃ-গোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র জাতি সত্তার আলাদা জরিপ ও তাদের নামে সংরক্ষিত কোটা সকল নৃ-জাতির মধ্যে জনসংখ্যানুপাতে ভাগ করতে হবে। প্রত্যেক নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মাতৃভাষায় বাংলা বর্ণমালায় (যাদের নিজস্ব বর্ণমালা নাই) প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া। পাবত্য ভূমি কমিশনের মতো সমতলী নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন করা। দেশের মূলশ্রোতে অংশ নেয়ার জন্য তাদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সনাতনী নৃ-জাতি গোষ্ঠীর জন্য আলাদা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করাসহ পার্বত্য নৃ-জাতি বাঙ্গালী, সমতলী নৃ-জাতি বাঙ্গালীদের মধ্যে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা। বিদেশী এনজিও ও দাতা গোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া মতাদর্শের পরিবর্তে নৃ-জাতি গোষ্ঠীর নিজস্ব চেতনা ও ঐতিহ্য নিয়ে বাঁচা সরকারের নিশ্চিত করা ও তাদের জাতিসত্তা নিয়ে সকল দেশী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার দাবি জানায়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নৃ-জাতি পাহান কমিউনিটির নেতা নবীন পাহান, সিএলএনবি’র চেয়ারম্যান হারুনূর রশীদ, প্রবীণ পাহান নেতা কালীপদ পাহান প্রমুখ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





