উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অথবা জাতিসত্তা নয়, আদিবাসী হিসেবেই সংবিধানে স্বীকৃতি দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে সংবিধানে ষোড়শ সংশোধনী আনতে হবে। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি সোমবারও একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দেশে কোনো আদিবাসী নেই। কিন্তু ২০০৮ সালের এই দিনে তিনি নিজে শহীদ মিনারের পাদদেশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। ক্ষমতায় যাওয়ার পর তিনি কি সে কথা ভুলে গেছেন?
প্রধান অতিথি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আদিবাসীদের আত্মপরিচয় লঙ্ঘনের যে অপচেষ্টা সরকার চালাচ্ছে, মানবাধিকার কমিশন সেই চেষ্টায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের সুপারিশ করবে।
সরকারের বিভিন্ন মহল আন্তর্জাতিক আইনের ভুল ব্যাখ্যা করছে উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, ‘২৫ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক আইন পড়িয়েছি, আদিবাসীদের অধিকারের কথা বলেছি। আজ আদিবাসীদের অস্তিত্ব অস্বীকার করলে নিজের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।’
সুলতানা কামাল বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনার থেকে আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের নতুন সংগ্রাম শুরু করতে হবে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সনদ-১০৭ সই করেছিলেন, তিনিও তখন বলেননি যে দেশে কোনো আদিবাসী নেই। উটপাখির মতো বালিতে মাথা গুঁজে রেখে সরকার আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার দায়দায়িত্ব এড়াতে পারে না।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও দেশের আদিবাসীরা শোষণ-বঞ্চনার শিকার। আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করেছিল। ১৩ বছর ধরে আদিবাসীরা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু সরকার এখনো কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সন্তু লারমা বলেন, আদিবাসীরা তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য যা যা করা দরকার, আদিবাসীরা তা করবে।
গণফোরাম নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, এ সরকার দেশের অসহায়, দরিদ্র, শোষিত জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিপীড়ন চালাতে চায়। তারা আদিবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চায়।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাসদের সভাপতি সাংসদ হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা, সিপিবির সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের এদেশীয় পরিচালক ফারাহ্ কবির, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, অধ্যাপক ডালেম চন্দ্র বর্মণ, আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ সরেন, সিলেটের খাসি জনগোষ্ঠীর প্রধান নেরলা তংসং প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শোভাযাত্রা: বেলা দুইটার দিকে সমাবেশ শেষ হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গারো, ওরাঁও এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা নিজস্ব সংস্কৃতির নৃত্য পরিবেশন করে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে আদিবাসীরা শহীদ মিনার থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। সকাল থেকে আদিবাসীদের বিভিন্ন সংগঠন মিছিল করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে জড়ো হতে থাকে। এদের মধ্যে ছিল হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, বম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, ত্রিপুরা ছাত্র ফোরাম, মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, গারো স্টুডেন্টস ইউনিয়ন প্রভৃতি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





