somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন দাবি

১০ ই আগস্ট, ২০১১ সকাল ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অথবা জাতিসত্তা নয়, আদিবাসী হিসেবেই সংবিধানে স্বীকৃতি দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে সংবিধানে ষোড়শ সংশোধনী আনতে হবে। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি সোমবারও একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দেশে কোনো আদিবাসী নেই। কিন্তু ২০০৮ সালের এই দিনে তিনি নিজে শহীদ মিনারের পাদদেশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। ক্ষমতায় যাওয়ার পর তিনি কি সে কথা ভুলে গেছেন?
প্রধান অতিথি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আদিবাসীদের আত্মপরিচয় লঙ্ঘনের যে অপচেষ্টা সরকার চালাচ্ছে, মানবাধিকার কমিশন সেই চেষ্টায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের সুপারিশ করবে।
সরকারের বিভিন্ন মহল আন্তর্জাতিক আইনের ভুল ব্যাখ্যা করছে উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, ‘২৫ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক আইন পড়িয়েছি, আদিবাসীদের অধিকারের কথা বলেছি। আজ আদিবাসীদের অস্তিত্ব অস্বীকার করলে নিজের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।’
সুলতানা কামাল বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনার থেকে আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের নতুন সংগ্রাম শুরু করতে হবে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সনদ-১০৭ সই করেছিলেন, তিনিও তখন বলেননি যে দেশে কোনো আদিবাসী নেই। উটপাখির মতো বালিতে মাথা গুঁজে রেখে সরকার আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার দায়দায়িত্ব এড়াতে পারে না।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও দেশের আদিবাসীরা শোষণ-বঞ্চনার শিকার। আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করেছিল। ১৩ বছর ধরে আদিবাসীরা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু সরকার এখনো কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সন্তু লারমা বলেন, আদিবাসীরা তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য যা যা করা দরকার, আদিবাসীরা তা করবে।
গণফোরাম নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, এ সরকার দেশের অসহায়, দরিদ্র, শোষিত জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিপীড়ন চালাতে চায়। তারা আদিবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চায়।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাসদের সভাপতি সাংসদ হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা, সিপিবির সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের এদেশীয় পরিচালক ফারাহ্ কবির, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, অধ্যাপক ডালেম চন্দ্র বর্মণ, আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ সরেন, সিলেটের খাসি জনগোষ্ঠীর প্রধান নেরলা তংসং প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শোভাযাত্রা: বেলা দুইটার দিকে সমাবেশ শেষ হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গারো, ওরাঁও এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা নিজস্ব সংস্কৃতির নৃত্য পরিবেশন করে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে আদিবাসীরা শহীদ মিনার থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। সকাল থেকে আদিবাসীদের বিভিন্ন সংগঠন মিছিল করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে জড়ো হতে থাকে। এদের মধ্যে ছিল হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, বম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, ত্রিপুরা ছাত্র ফোরাম, মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, গারো স্টুডেন্টস ইউনিয়ন প্রভৃতি।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×