বর্তমান সরকার উগ্র জাতীয়তাবাদী
ইত্তেফাক রিপোর্ট | শনি, ৩ ডিসেম্বর ২০১১, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪১৮
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সমাবেশে
সন্তু লারমার আল্টিমেটাম
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত গণসমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেছেন, বর্তমান সরকার উগ্র জাতীয়তাবাদী। পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে এ সরকারের সামপ্রদায়িক, অগণতান্ত্রিক রূপ প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৯৭ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ‘গালভরা’ আশা দিয়ে পার্বত্য চুক্তি করেছিলেন, কিন্তু এবার ক্ষমতায় এসে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে আদিবাসীদের সমস্যা সমাধানের কোন চেষ্টাই তিনি করেননি। সন্তু লারমা সরকারের প্রতি আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, আগামী মার্চের মধ্যে পূর্বঘোষিত ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়ন না হলে মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে দেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠী কঠোর আন্দোলন শুরু করবে।
সন্তু লারমা সরকারের উদ্দেশে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার প্রকৃত রাজনৈতিক সমাধান ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে চুক্তি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য সময় বেধে দিয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানান।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের যৌথ উদ্যোগে পার্বত্য চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়। সারাদেশ থেকে ক্ষুদ্র ও নৃ-জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এ সমাবেশে যোগ দেন। এতে সন্তু লারমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ, এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, সিপিবির সহ-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, তথ্য কমিশনার অধ্যাপক সাদেকা হালিম, ড. ডালেম চন্দ্র বর্মন, নারীনেত্রী রোকেয়া কবীর, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, শামসুল হুদা, রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা।
রাশেদ খান মেনন বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে গড়িমসির কারণে আদিবাসীরা সরকারের প্রতি আস্থাহীনতায় ভুগছে। আদিবাসীদের সংগ্রাম তাদের একার সংগ্রাম নয়। এটা জনগণের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম। তিনি আদিবাসীদের আন্দোলনের প্রতি ও ১৯ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তা বাস্তবায়নের দাবি জানান।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সরকার চাইলে ছয় মাসের মধ্যে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে পারে। কিন্তু নানা কমিটি গঠন করে প্রকৃত অর্থে চুক্তি বাস্তবায়ন পেছানো হচ্ছে। তিনি বলেন, বিজয়ের চল্লিশ বছরেও বৈষম্যহীন, ধর্মনিরপেক্ষ, বাঙালি, অবাঙালি ও আদিবাসীদের সমঅধিকার নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। বাংলাদেশ শুধু বাঙালিদের, মুসলমানদের রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, আদিবাসীদের বাঙালি বানানোর অপচেষ্টা চলছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠী আশা, আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে সরকারের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তাদের আশাহত করবেন না।
অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, পার্বত্য চুক্তির ১৪ বছর পূর্তি আদিবাসীদের জন্য আনন্দের দিন হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ১৪ বছর পরেও তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে পথে নামতে হচ্ছে। পার্বত্য চুক্তি ছিল একক জাতিতত্তের হিসাব থেকে বেরিয়ে বহুত্ববাদের স্বীকৃতি। আদিবাসীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা প্রদানের স্বীকৃতি। কিন্তু তা বাস্তব রূপ লাভ করেনি।
ড. ডালেম চন্দ্র বর্মন বলেন, চুক্তির ১৪ বছর পরে যেখানে আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে সামগ্রিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হওয়ার কথা সেখানে তাদের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নামতে বাধ্য করা হ্চ্ছে। এটা দুঃখজনক।
সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি হওয়ার ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও শান্তি প্রতিষ্ঠা পায়নি। কমিউনিস্ট পার্টি সবসময় আদিবাসীদের সঙ্গে রয়েছে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
সঞ্জীব দ্রং বলেন, বিগত তিন বছরে বর্তমান সরকার সন্তু লারমার সঙ্গে কার্যকর কোন আলোচনা করেনি। সরকার যদি মনে করে যে, আদিবাসীরা আলোচনার জন্য সরকারের কাছে ধর্ণা দেবে তবে তারা ভুল করছে। প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
(কপি পেস্ট)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





