প্রতিবছর ৯ আগস্ট পালিত হয় আদিবাসী দিবস। ৩০ জুন সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। আর ১০ জুন ভূমি অধিকার দিবস। এসব দিবস পালনের অর্থটা কি দাঁড়ায় যদি আমাদের বিবেকের ঘুমন্ত চোখ না খোলে, চেতনা সচেতন না হয়। আদিবাসীরা ক্রমাগতভাবে বৈষম্যের শিকার, দ্বন্দ্ব আর চরম দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত। নিজের ভূমি থেকে তারা ক্রমাগত উচ্ছেদ হচ্ছে, জীবিকা বিপর্যস্ত হচ্ছে, বিচ্যুত হচ্ছে নিজ আবাসস্থল থেকে। ২০০১ সাল থেকে এদেশে জাতীয়ভাবে আদিবাসী দিবস পালিত হচ্ছে, কিন্তু সরকারীভাবে নয়। রাজনৈতিক সরকার তো নয়ই তত্ত্বাবধায়ক সরকারও এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। দিনবদলের অঙ্গীকার নিয়ে নতুন সরকার এসেছে, তাদের কাছেই এখন আমাদের সব প্রত্যাশা।
বাংলাদেশের দীর্ঘ ইতিহাস পরিক্রমার ধারাবাহিকতার ফল আজকের বাংলাদেশ। এই দীর্ঘ পরিক্রমায় বিভিন্নকালে বিভিন্ন স্থান থেকে বহু জাতির মানুষ এদেশে এসেছেন এবং বসতি স্থাপন করেছেন। নৃতাত্ত্বিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক দিক থেকে এদেশ তাই বহু ধারার মিলনমেলা। এদেশের আদিবাসীরা জাতিতাত্ত্বিকভাবে সমতলের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বাঙালীদের থেকে পৃথক ও প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের অধিকারী। প্রায় ৪৬টি পৃথক আদিবাসী জাতিসত্তার বসবাস হাজার বছর ধরে নদী-নালা-বন-জঙ্গলের এই বাংলাদেশে। এই আদিবাসীদের একাংশের তিব্বত থেকে থাইল্যান্ড এই বিশাল অঞ্চলের প্রাচীন জনগোষ্ঠীর সাথে বিশেষ শারীরিক সাদৃশ্য রয়েছে। আদিবাসীদের অধিকাংশই সংলগ্ন বনাঞ্চলের অধিবাসী, যদিও কিছু সংখ্যকসমতলে বাস করেন। চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করেন মূলতঃ চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তনচংঙা, ম্রো, বম, লুসাই, পাংখোয়া, চাক, সুমি, খিয়াং। সিলেট জেলার পাহাড়ী অঞ্চলের সম্মুখদিকে খাসিয়া এবং জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে খাসিয়া ও মণিপুরীরা বসবাস করেন। গারো, হাজং, ভালু, বানাস এবং বর্মন একত্রিতভাবে বসবাস করেন ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা। এবং টাঙ্গাইল জেলায়। এরা মূলত বসবাস করেন গারো পাহাড়ের পাদদেশে এবং বনাঞ্চল পরিবেষ্টিত উচ্চ ভূমিতে। সাঁওতাল, ওরাও, মান্দি, রাজবংশীসহ অন্যান্য আদিবাসী বসবাস করেন বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, পাবনা এবং রাজশাহী জেলায়। (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান জরীপ, ১৯৯১)
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট আদিবাসী জনসংখ্যা হচ্ছে ১২,০৫,৯৭৮ জন যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা মাত্র ১.০৩ ভাগ। আদিবাসীদের অনেকে অবশ্য মনে করেন তাদের সংখ্যা আনুমানিক ৩০ লক্ষ। সরকারি পরিসংখ্যানে আদিবাসী জনসংখ্যার মধ্যে ৬,১৬,৮৭৮ জন পুরুষ এবং ৫,৮৯,১০০ জন মহিলা। লিঙ্গভিত্তিক অনুপাত হচ্ছে ১০৪ জন পুরুষঃ ১০০ জন মহিলা (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান জরীপ ২০০১)। দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি আদিবাসী জাতি বসবাস করেন। এরপর দেশের ঘনবসতিপূর্ণ আদিবাসী অঞ্চল হচ্ছে সিলেট ১৯%, রাজশাহী ১১%, দিনাজপুর ৬% এবং ময়মনসিংহ ৬.৮%। রংপুর, বগুড়া, খুলনা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা এবং চট্টগ্রাম জেলাতে আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে যার সংখ্যা ১০ থেকে ৫০ হাজার। সরকারি পরিসংখ্যানে ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তিতে আদিবাসীদের প্রকরণ হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ৪৩.৭%, হিন্দু ২৪.১%, খ্রীস্টান ১৩.২%, এবং অন্যান্য ১৯.০%। আদিবাসী জনগণের স্বাক্ষরতার হার ১২.৪% সেখানে সারাদেশে স্বাক্ষরতার হার ১৯.৭%। (বাংলাদেশে পরিসংখ্যান জরীপ, ১৯৯১)। দেশের মোট আদিবাসী শ্রমশক্তির সংখ্যা ৩,০০,৩২৩ জন যার মধ্যে ২,৩৭,৯৫২ জন পুরুষ (৭৯.২%) এবং ৬২.৩৭১ জন মহিলা (২০.৮%)। আদিবাসী শ্রমশক্তি দেশের মোট শ্রমশক্তির শতকরা ১.৩% ভাগ। মোট, আদিবাসী শ্রমশক্তির মধ্যে ১,৮৮,৮৭৪ জন অর্থাৎ ৬২.৯% নিয়োজিত রয়েছেন কৃষিকাজে, ৮৮৩৬ জন বা ২.৯% নিয়োজিত অ-ফসলি কৃষিকাজে, ২৩,০০২ জন বা ২৩.৪% অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। অধিকাংশ আদিবাসী পুরুষ কৃষি ও কুটির শিল্পে নিয়োজিত।
(পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করুণ)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





