somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলার গত আড়াই দশকের রাজনীতি নিয়ে একটা সাধাসিধা বর্ননা। প্রিয় ব্লগার রা , একবার অন্তত: আমরা নিজেদের সৌল সার্চ (soul search) করি

২১ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ৭:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেজেহুমো এরশাদ যখন ক্ষমতা দখল করেন, সেই দিন টার কথা আমার একটু মনে আছে। তবে বোঝার মত বয়েস হ্য়নি তখনো। প্রথম যে ঘটনা টা মনে দাগ কেটেছিলো, তা হলো মজিদ খান এর শিক্ষিনীতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাসদ এর মিছিল এ পুলিশের ট্রাক তুলে দিয়ে জয়নাল, ফারুক ও দীপালি সাহার মৃত্যু। তিনজনই ছিলেন জাসদ এর কর্মী। ঐ ঘটনার সূত্র ধরে বড়দের আলোচনা থেকে জাসদ এর প্রতি আমার ছোট্ট মনে বিশাল শ্রদ্ধা জন্মালো।মনে হলো, বড় হলে আমি জাসদ এর কর্মী হব.. এ রকম ভাবে অন্যের অধিকার রক্ষার জন্য জীবন দান করতে পারলে সার্থক হবো
তো জাসদ এর কর্মী হওয়ার আগেই দেশ এর রাজনীতি তে অনেক খেলা দেখলাম। ৮৬র নির্বাচন, এরশাদ কে ঠেকানোর জন্য দুই নেত্রী ডিসিশান নিলেন যে দুজনেই ১৫০ আসন করে মোট ৩০০ আসনে এরশাদ এর জাতীয় পার্টির প্রার্থি দের বিপক্ষে লড়বেন। এরশাদ তখন আইন করলেন যে একজন প্রার্থি ৫ আসনের বেশি প্রার্থি হতে পারবেন না। প্রতিক্রীয়ায় দু নেত্রী নির্বাচন বর্জন করলে। হাসিনা বক্তব্য দিলেন, যে এই নির্বাচনে অংশ নেবে সে জাতীয় বেইমান। তার সম্ভবত: ঠিক দু,দিন পর হাসিনা নিজেই নির্বাচনে অংশ নিলেন। কিছু দিন চললো চাপান উতোর.. বিএনপি আওয়ামী লীগ কে বলে জাতীয় বেইমান, দেশের অধিকাংশ লোক ও তাই বলে.. আর আওয়ামী লীগ বলে যে বিএনপি ও নির্বাচনে যোগ দেয়ার কথা ছিলো, কিন্ত শেষ মুহূর্তে বেইমানি করেছে। যতদুর মনে পড়ে, আমরা সাধারন জনতা, লিগ এর এই কথায় হেসেছিলাম।

দুবছর সংসদ চলার পর গন আন্দোলন আবার চাংগা হলো বিএনপির নেতৃত্বে। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সংসদ থেকে পদত্যাগ করে এবং এরশাদ সরকার সংসদ ভেংগে দেয়।

ঐ দুই বছরের এরশাদ বিরোধি আন্দোলন অলমোষ্ট পুরোটাই চালিয়েছিলো খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি। সংসদ ভাংগার কাছাকাছি সময়ে (সম্ভবত: ঠিক পরপরই) চিটাগং এ লালদিঘি তে আওয়ামী লীগ এর মিছিলে পুলিশ এর গুলিতে ২৪ জন কর্মী মারা যান। শেখ হাসিনা নিজেও ছিলেন সেই মিছিলে। এই ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন ঢাকায় সর্বদলীয় বিক্ষোভ মিছিল ডাকা হয়েছিলো, তাতে দুই নেত্রী থাকার কথা থাকলেও শুধু মাত্র খালেদা এসেছিলেন, হাসিনা আসেননি। তার পর হলো ৮৮র প্রহসনের নির্বাচন। যে জাসদ এর রাজনীতি তে যোগ দেব বলে এত স্বপ্ন, তা ধুলায় মেশালাম রব সাহেব এর নির্লজ্জ দালালি দেখে। তখনকার উদীয়মান তরুনদের অনেকের মত পড়া শুরু করলাম মার্কস, মাও, গোর্কি , রুশো (বুঝে বা অনেক ক্ষেত্রে না বুঝে), একটু চিন্তা ভাবনা ও করতে শিখলাম। এতে সবচেয়ে বড় লাভ হয়েছে যে আমি সযতনে বাংলাদেশ এর তখনকার কম্যুনিস্ট আন্দোলন থেকে দুরে সরে যেতে পেরেছিলাম। আদর্শ গত কারনে নয়, বরং যখন বই এর পড়ার সাথে যখন পার্টি গুলার কাজ মেলাতে চাইলাম, আস্তে আস্তে তাদের অন্ত:সার শুন্যতা চোখে ভেসে উঠলো। আর তথাকথিত ত্যাগি নেতাদের আপাত: আয়হীনতার সাথে তাদের চালচলন মিললোনা। একটু নীতিবোধ তখনো অবশিষ্ঠ ছিলো, তাই আর কোন একটিভ রাজনীতি তে আর আমার স্থান হলোনা।
৮৯-৯০ তে বাংলাদেশ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এর স্বর্নযুগ। ষে সময় তোপখানায় বিডিআর এর গুলি থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়া, পুলিশ এর তাড়া আর সায়দাবাদ এ আর্মির পিটুনির হাত থেকে বাচলাম। ১০ই নভেম্বর ৯০ তে প্রেসক্লাব এর সামনে গিয়ে শুনলাম ড: মিলন মারা গেছেন টি এস সি তে। উত্তাল ঢাকার রাজপথ। অবশেষে লেজেহুমোর পতন ৪ঠা ডিসেম্বর রাতে। সেদিন ঢাকায় ছিলাম না, কিন্ত আমাদের ছোট্ট মফস্বল শহরে সারারাত মিছিল করে কাটিয়েছিলাম। অনুভুতি প্রায় দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জনের।

ঢাকায় ফিরলাম পরদিন ভোরের গাড়িতে। তরুন মনে অনেক আশা, দেশ দুর্নীতিবাজ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছ, গনতন্ত্র ফিরবে, এরশাদ এর অপকর্মের বিচার তো হবেই, সাথে সাথে রাজাকার দের বিচার , বন্গবন্ধুর হত্যাকারি দের বিচার সব হবে, সাথে সব অত্যাচার অনাচার দুর হবে....

তখন দেশ এ আমার মত স্বপ্নবাজ বোকার অভাব ছিলোনা।


(বাকিটা বেঁচে থাকলে কালকে)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ৭:৫১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×