আমার এক বন্ধু, কেউ তাকে অমি ডাকে, কেউবা অমিত, আবার কেউ কেউ ভল্লুক। এই ভল্লুক নামের পেছনে ছোট্ট একটা ইতিহাস আছে, একদিন আমাদের বাসায় এক বন্ধু বেড়াতে এসে ঘরে, বাথরুমে সবখানে প্রচুর কালো পশম দেখতে পেয়ে ছ্যা-ছো শুরু করে, তোমরা এতো নোংরা কেন, অন্য কেউ এলে কি ভাববে, ইত্যাদি। তখন আমাদের ঘরের বাকি সদস্য এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বললো, ছ্যা-ছো করছো কেনো, ঘরে ভল্লুক থাকলে তো এমন হবেই, ভল্লুকের শরীরের লোমের খবর তো কোনো সাংবাদিকের না জানার কথা না, এক ন্যানো সেকেন্ডে এক সহস্রাধিক লোমের পতন ঘটে, নিষ্কৃতির একমাত্র উপায় হলো সার্বক্ষনিক একজন ঝাড়ুদার নিয়োগ দেয়া, যে তার গতিপথ ধরে দিন-রাত ব্যস্ত থাকবে। এরপর নামটি ছড়িয়ে পড়তে বেশিদিন লাগেনি, সে নিজেও তা মেনে নিয়েছে।
তো আমাদের এই বন্ধুর নারী সৌন্দর্যের প্রতি রয়েছে দুর্নিবার আকর্ষণ। এ রকম কোনো টোপ দিয়ে তাকে ভারখয়নস্কেও নিয়ে যাওয়া যেতে পারে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। আমার ঘরের বাকি সদস্য বন্ধু, যে একটি আইএনজিওতে কাজ করে, প্রায়ই তার এক সহকর্মীর গল্প বলে, যে কিনা প্রবাস-পরিবার ছেড়ে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেয়ার মহান দায়িত্ব নিয়ে নেমে পড়েছে এবং প্রায়ই কিছু না কিছু করার চেষ্টা করছে। এই সহকর্মী আবার অনিন্দ্য সুন্দরী। আমাদের আলোচিত বন্ধু নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে একদিন ঠিক ঠিক গিয়ে হাজির হলো তাদের অফিসে। এনজিওর বন্ধু পরিস্কার জানিয়ে দিলো, আমার গেস্ট হিসেবে তোমাকে ঢুকতে দেব না, অন্য কারো গেস্ট হয়ে ঢুকতে পারলে ঢুকো। বেচারা শুরুতেই একটা হোচট খেল, তত্ক্ষনাৎ পরিচিত এক বড় ভাইয়ের কথা মনে পড়ায় সুড়ঙ্গের প্রান্তে আলোকবর্তিকা দেখতে পেল। সুড়ঙ্গের শুরুতেই রিসেপশনের ফরমালিটিস।
: ভাই কোত্থেকে এসেছেন?
: ক্যানওয়াস (মৃদু ও অস্পষ্ট)
: ভাই কোত্থেকে এসেছেন?
: ক্যানওয়াস (খানিকটা উচ্চ, অস্পষ্ট)
: ভাই কোত্থেকে এসেছেন, বল্লেন?
: ক্যানওয়াস (উচ্চ, কিছুটা স্পষ্ট)
: আপনার দেশ কোথায়?
: অবশ্যই বাংলাদেশ, কেন?
: তাহলে আপনি এভাবে উচ্চারণ করছেন কেন, স্পষ্টভাবে বলতে পারেন না?
সুড়ঙ্গের শুরুতেই মোটামুটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে অস্থির, তরুনী রিসেপশনিস্ট কাঙ্ক্ষিত ভাইয়ের কাছে ফোন করে তার মেহমানের কথা জানালো। ওই ভাই আবার জানতে চাইলো, মেহমান ' ক ' সেলুনের অমি কি না। তরুনী মুখ থেকে ফোন সরিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
: আপনি কি ' ক ' সেলুনে কাজ করেন?
ভেতরে ভেতরে তেলে-বেগুনে জ্বলে-পুড়ে, এখান থেকেই কেটে পড়বে কি না, সেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে ভুগে, শেষমেষ স্বীকার করলো, হ্যাঁ আমি ওখান থেকেই এসেছি। উল্লেখ্য, আমাদের আলোচিত বন্ধুটি ক্যানওয়াস নামক ফ্যাশন ম্যাগাজিনে কাজ করে, যেটি ' ক ' গ্রুপের মেম্বার, আবার ' ক ' বেশি পরিচিত তার সেলুনের জন্য। পাশেই দাঁড়ানো ছিলো আমাদের বাকি সদস্য, অচেনা মানুষের মতো। তার দিকে একবার কটমট করে তাকালো, চিবিয়ে খাওয়ার উপায় থাকলে এক মুহূর্ত দেরি করতো না। এবার সে মোটামুটি আশাহত, সুড়ঙ্গের ওপাশের আলোকবর্তিকা এখন তার কাছে কৃষ্ণগহ্বর হয়ে গেছে। প্রবাসী সুন্দরীর সাক্ষাৎ পাবার তাগিদ সে পুরোপুরি হারিয়ে ফেললো। গালিব বলেছেন, “সুন্দরী হলো তসবীহর দানা, এক একটি দানা জপ করি আর ইবাদত হয়ে যায়”। আমার বন্ধুর ইবাদতটা বাকিই থেকে গেল।
ইদানিং সে নাকি একজনের সাথে গভীর সম্পর্কে ডুবে আছে। গালিব থাকলে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছা যেত, এক দানাতে থিতু হলে ইবাদতে কোনো গাফিলতি হয় কি না। সে যে এক দানাতেই স্থির থাকবে সে বিষয়ে অবশ্য আমরা কেউই নিশ্চিত না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৫:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





