somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ ফয়সল
“আমি ধর্মকে মেনে চলে অসাম্প্রদায়িক ধার্মিকতাকে বুকে লালন করি কিন্তু আমি ধর্মান্ধ মোটেও নই!” ❤

সবর (ধৈর্য্য) আর মুসলমান

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিটি মুমিনের জীবনই দুই অবস্থাকে ঘিরে আবর্তিত। কখনো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাকে দুঃখ, দুর্দশা দিয়ে পরীক্ষা করেন কখনওবা প্রশান্তিময় নিয়ামত ও সুখের অনুগ্রহ দিয়ে। সুখ ও দুঃখ এই দু'টো অবস্থাই আল্লাহর নিয়ামত, আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পরীক্ষা।

যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সূরা আম্বিয়া : ৩৭)

জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই তাই অনেক মূল্যবান, আল্লাহর কাছে নিজেকে সৎ ও কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে প্রমাণের এক অমূল্য সুযোগ। সুখ-দুঃখের আবর্তনে, আনন্দ-বেদনায় উভয় পরিস্থিতিতে রবের নৈকট্য ও সন্তোষ অর্জনে এবং দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণ আহরণ করত হবে।

কারন মানুষ তার সহজাত প্রবণতায় আনন্দের সময় আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়ে যায় অহংকারে লিপ্ত হয়, দুঃখের সময় হতাশ হয়ে পড়ে। আমাদের রব্ব তাঁর বান্দাকে সবচেয়ে ভালো জানেন। যেমন আল্লাহ্‌ বলেছেন,

‘আর অবশ্যই যদি আমি মানুষকে আমার রহমতের আস্বাদ গ্রহণ করতে দিই, অতঃপর তা তার থেকে ছিনিয়ে নেই, তাহলে সে হতাশ ও কৃতঘ্ন হয়। আর যদি তার ওপর আপতিত দুঃখ-কষ্টের পর তাকে সুখ ভোগ করতে দিই, তবে সে বলতে থাকে, আমার অমঙ্গল দূর হয়ে গেছে। আর সে আনন্দে আত্মহারা হয়, অহংকারে উদ্ধত হয়ে পড়ে।’ (সূরা হুদ : ৯-১০)

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করি, তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং পার্শ্ব পরিবর্তন করে। আর যখন তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করে, তখন সুদীর্ঘ দোয়া করতে থাকে।’ (সূরা ফুসসিলাত : ৫১)

মানুষেরর সহজাত প্রবণতাই এমন যখন অনুগ্রহ স্বরূপ সুখ পায় তখন প্রাপ্তিতে এমন আনন্দে ডুবে যায় যে আল্লাহর স্মরণ বিমুখ হয়ে পড়ে, অহংকার তার অন্তরে স্থান নেয়। ভুলে যায় এ কেবল আল্লাহরই দান। আল্লাহ চাইলে চোখের পলকে তা ছিনিয়ে নিতেও পারেন।

‘যখন মানুষকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে একাগ্রচিত্তে তার পালনকর্তাকে ডাকে, অতঃপর তিনি যখন তাকে নেয়ামত দান করেন, তখন সে কষ্টের কথা বিস্মৃত হয়ে যায়, যার জন্য আগে ডেকেছিল এবং আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করে, যাতে অপরকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করে।’ (সূরা জুমার : ৮)

পক্ষান্তরে আল্লাহ যখন মানুষকে বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন, তখন সে হতাশ ও অসন্তুষ্ট হয়ে যায়। তাকদ্বীর নিয়েও প্রশ্ন তোলে। বেমালুম ভুলে যায় আল্লাহর দেয়া অজস্র নিয়ামতের কথা যাতে সে ডুবে আছে।

আল্লাহ ঠিক এই অবস্থাই কুরআনে বলছেন, ''যদি তাকে অমঙ্গল স্পর্শ করে, তবে সে সম্পূর্ণ রূপে নিরাশ হয়ে পড়ে।’ (সূরা ফুসসিলাত : ৪৯)

আরও বলেন, ‘আর যখন তাকে পরীক্ষা করেন, অতঃপর রিজিক সংকুচিত করে দেন, তখন বলে : আমার পালনকর্তা আমাকে হেয় করেছেন।’ (সূরা ফজর : ১৬)

অথচ আমাদের জন্য ভালো ও খারাপ এই দু'টো সময় দিয়েই আল্লাহ্‌ পরীক্ষা করেন। এই দুই অবস্থাতেই আমাদের কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কঠিন সময়ে সবরের মাধ্যমে ও সুখের সময়ে শুকরিয়ার মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দার হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে আমরা আল্লাহর বান্দা তাঁর দাসত্বের জন্যই আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।

তারাই প্রকৃত মুমিন যারা অনুধাবন করেছে যে, তাদের ওপর আল্লাহর সাগ্রহ দাসত্ব পাওনা যেমন সুখে-আনন্দে, তেমন দুঃখ ও বিষাদেও। তারা উভয় অবস্থায় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে।

যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন, ‘তবে যারা ধৈর্য ধারণ করেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান রয়েছে।’ (সূরা হুদ : ১১)

যারা বিপদে সবর করে এবং সুখের দিনে শুকরিয়া আদায় করে আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট হয় উভয় অবস্থাতে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলাও তাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। আমাদের উচিত বিপদ ও সুখ দুই অবস্থাতেই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করা সবর ও শোকরিয়ার মাধ্যমে। এই দুই অবস্থাতেই মুমিনের কল্যাণ রয়েছে।

রাসূল ﷺ বলেছেন, তিনি বলেন, ‘মুমিনের অবস্থা কতই না চমৎকার! তার সব অবস্থায়য়ই কল্যাণ থাকে। এটি শুধু মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য যে, যখন সে আনন্দের উপলক্ষ পায়, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। ফলে তা হয় তার জন্য কল্যাণবাহী। আর যখন সে কষ্টের সম্মুখীন হয়, তখন সবর করে এবং ধৈর্যে অটল থাকে। ফলে এটিও তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।’

আল্লাহ্‌ আমাদের প্রকৃত মুমিন বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৯
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×