সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কাল রাতে। ছেলে ঘুম ভাঙালো। তখন রাত ১২টা। আমার ঘাড়ে ঝাঁকি দিয়ে সে হাসি মুখে আমাকে উইশ করে। তারপর আমার চোখ বুজে আসতে থাকে। ঘুমের ঘোরে শুনি পাশের ঘরে গিয়ে তার বোনকে ধমকাচ্ছে : আব্বুর জন্মদিন শুরু হইয়া গেছে, আর এখনো তুমি উইশ করো নাই?

সারাটা দিন সাদামাটাই গেলো। দুপুরে খেতে বসেছি সবাই। ছেলে বলে, আব্বু, আজকে কী বলেন তো?
আমি বলি, আজ শুক্রবার।
হ্যাঁ, শুক্রবার। কিন্তু মাসের কতো তারিখ?
আজ ৩১শে জুলাই, তাও জানো না? আমি ভর্ৎসনা করে বলি।
৩১শে জুলাই একটা বিশেষ দিন। সেটা কী বলেন তো?
এটা কোনো বিশেষ দিনই না।
ছেলে মিটিমিটি হেসে বলে, আব্বু, ভুলে গেলেন কাল রাতে আপনাকে উইশ করেছিলাম?
ছেলের কথায় মনে পড়লো।
হুট করে বউ বলে, চলো আজ বিকেলে শহরে যাবো।
এই কাল না শহর থেকে এলাম?
আজও যেতে হবে।
কেন?
আজ আমরা চাইনিজ খেতে যাবো।
আমি বলি, আজ না। রবিবারে যাবো।
না, আজই যেতে হবে।
আজ মাসের শেষ দিন। খালি হাতে চাইনিজে যাওয়া যাবে না।
খাওয়াবো তো আমি। বউ খুব জোর দিয়ে বলে, আজকের চাইনিজ আর রবিবারের চাইনিজ কি এক হলো? আজই চলো।
ছেলেমেয়েরা খুব উৎফুল্ল চাইনিজের কথা শুনে।
কিন্তু আমি বিছানায় গা এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

ছেলে বলে, আব্বু,আপনার সত্যিকার জন্মদিন কি ৩১শে জুলাই?
আমি বলি, না।
আসল জন্মদিন কোন্‌টা?
আমি জানি না।

আমার ছেলেমেয়েদের জন্মদিন যেভাবে লিখে রাখা হয়েছে, আমারটা সেভাবে লিখে রাখেন নি আমার লেখাপড়া-না-জানা মা-বাবা। সেদিন খুব তুফান ছিল দিনভর। সন্ধ্যার দিকে তুমুল বৃষ্টি। মাঝরাতের কিছু আগে আমি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলাম। এসব কথা আমার মা বলতেন। দাদিও বলতেন। মা মারা গেছেন ২৯ বছর, দাদি প্রায় ৩৫। মা জীবিত থাকাকালে চাঁদ আর ঝড়বৃষ্টির দিনের হিসেব করে জন্মদিন বের করার চেষ্টা করেছি খুব। কোনো সুরাহা হয় নি।


সন-তারিখ ভুল হতে পারে, আমার জন্মটা নিশ্চয়ই ভুল নয়। নিছক দাপ্তরিক কাজের জন্যই একটা জন্মতারিখ থাকতে হয় যদি ধরে নিই, তবে আমার জন্মতারিখটাও সেরকমই ধরে নেয়া আর কী।



কয়েক বছর আগে অনেক মানুষের উইশ পেতাম। আজ ঘরের বাইরে শুধু একটা ছেলে আমাকে উইশ করেছে- ওর নাম মাসউদ আহমাদ। রাজশাহী ভার্সিটির ছেলে। একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক। ওর প্রকাশিত গোটা পাঁচেক বইয়ের দুটি পাণ্ডুলিপি দেখে দেয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল বলে খুব গর্ব বোধ করি। এতো দূরের একটা ছেলে আমাকে উইশ না করলেও পারতো। কিন্তু মাসউদই বোধ হয় আমার খুব কাছের মানুষ, তাই ভোলে নি আমাকে। ওর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।


আমার অ-আসল জন্মদিনে আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা চাই।