পৃথিবী তোমার হয়েছে কি? না কি পৃথিবীর মানুষগুলোর হয়েছে কি বুঝতে পারছিনা।
স্কুল ভালো না লাগলে আমরা স্কুলে যেতাম না। বড়জোড় স্কুল পালাতাম। বন্ধুদের সাথে সমস্যা হলে কথাকাটাকাটি। একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ হতো কিল ঘুষিতে। আজ আর সেই যুগ নেই। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এক পত্রিকায় দেখলাম সামান্য কিছু টাকা আর সেলফোনের জন্য -অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক বন্ধু তার প্রিয় বন্ধুকে জবাই করে খুণ করেছে। এই ছবিটি দেখেন , কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা। পন্চমশ্রেণীতে পড়া নিউজার্সীর এই ছেলেটি বোমা তৈরী করেছে পুরো স্কুল ঘর বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার জন্য। কারণ- ওর স্কুল ভালো লাগেনা।
গতবছর একটা ঘটনা পড়েছিলাম। মনে হয় ভার্জিনিয়া অথবা অন্য কোনো রাজ্যে। কয়েকটি কিশোর ছেলে-কালাশনিকভ রাইফেল নিয়ে ইচ্ছেমতো গুলি করে সাত আটজনকে মেরে ফেললো। কারণ হলো- ছুটির দিনে ঘরে বসে থাকতে থাকতে ওদের আর ভালো লাগছিলোনা।ওদের মন চাচ্ছিলো উত্তেজনাকর কিছু একটা করতে। এইরকম ঘটনাগুলো বলতে গেলে বিরামহীন ভাবে ঘটেই যাচ্ছে।
আরেকটি ছবি দেখুন- আদরের পোষা কুকুরটিকে শিশুর সাথে এক ঘরে রেখে মা বাইরে গিয়েছিলেন অল্প সময়ের জন্য কেনাকাটা করতে।ঘরে ফিরে দেখেন-মেঝেতে চোপ চোপ রক্ত। তাড়াতাড়ি শোয়ার ঘরে দৌড়ে গিয়ে মা দেখেন- পোষা কুকুরের মুখে রক্তের দাগ আর চারবছরের সন্তানের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ কয়েক টুকরো হয়ে এদিকে ওদিকে পড়ে আছে। পোষাকুকুরের হাতে এভাবে খুণ হওয়া ঘটনাগুলোও কম নয়। প্রায় শুণা যায়। পোষা কুকুর যতই পোষা হোক ও তো কোনোদিন শিশু হবেনা।
এইযে, গত কয়েকদিন আগের ঘটনাটি দেখুন। ২৭ আর ২৮ বছরের দম্পতি। ঘরে আছে ৬ মাসের ফুটফুটে আদরের সন্তান। এই সন্তানকে পৃথিবীতে একা ফেলে রেখে এরা তরতাজা ১৪ জন মানুষকে মেরে ফেললো। এই মানুষগুলো ছিলো কারা মা-কারো বাবা। কারো ভাই, কারো স্নেহময়ী সন্তান। ওরা মারলো, নিজেরাও মরে গেলো।
কিছুদিন আগে সৌদি সরকার সমকামীতার অভিযোগে একটি ঘোড়াকে মেরে ফেললো। এই অন্চলে এতো নবী রাসুল পাঠানো হলো-তারপরও এই বর্বরগুলো আর মানুষ হলোনা।
আমেরিকার মানুষগুলোর বন্দুকপ্রীতি আর কুকুরপ্রীত কমলো না। আপনি যতই যুক্তি দেখান- পৃথিবীর সব যুক্তিগুলো একসাথে করলেও কুকুরের কামড়ে মর্মান্তিকভাবে খুণ হয়ে যাওয়া এই হতভাগা শিশুটি আর কোনোদিন মায়ের কোলে ফিরে আসবেনা। রাইফেলের গুলিতে খুণ হয়ে যাওয়া এই মানুষগুলো পৃথিবীর আলো বাতাসে আর কোনোদিনও নিঃশ্বাস নিবেনা।
গত কয়েকবছরের ভিতরে জাপানে বন্দুকজনিত খুনের ঘটনা একটাও ঘটেনি। সৌদিতে কুকুরে কামড়ে কোনো মানুষ মারা যায়নি।
কারণ- জাপানে বন্দুক আর বন্দুকের গুলি পাওয়া রীতিমতো পাতালের গহীনে নেমে স্ফটিক পাথর কুড়িয়ে আনার মতো কঠিন। ঠিক তেমনি সৌদিতে পিটবুল জাতীয় বিপদজনক কুকুরগুলো সম্পূর্ননিষিদ্ধ। এই গত মাসের ১২ তারিখের এ্যংলোইনফোতে লিখা-"Dangerous breeds of dogs are not allowed to enter"
অথচ, এই আমেরিকায় দোকানে গিয়ে ক্যান্ডি কিনে মুখে দেয়া যেমন সোজা। ঠিক তেমনি গানস্টোরে গিয়ে রাইফেল কিনে বন্দুকে গুলি ভরাও সোজা।ক্যান্ডি চুষতে চুষতে ভালো লাগলো না। মুখ থেকে ফেলে দিলেন। ঠিক তেমনি -বন্দুক নিয়ে খেলতে খেলতে ভালো লাগলো না এদিক ওদিকে শ্যুট করে বসলেন। এইতো গতমাসে একটি ছোট শিশু বন্দুক নিয়ে খেলতে খেলতে নিজের বাপকে গুলি করে বসলো। বন্দুকের গুলিতো আর বুঝেনা কে বাপ আর কে ভাই।
যেকোনো পশু প্রাণীর প্রতি সদয় হওয়া এক কথা । আর বিপদজনক পশুকে সন্তানভেবে নিজের শিশুর সাথে খেলতে দেয়া, ঘুমোতে দেয়া, খাবার দেয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। মানুষের মন হুটহাট বিগড়ে যায়। ভালো মানুষ সাইকোতে পরিণত হয়। আর কুকুরতো কুকুরই।
এই কয়দিনে ঘটে যাওয়া- ছোট শিশুর বোমা তৈরী করা, আরেকটি হতভাগা শিশু কুকুরে কামড়ে মারা যাওয়া, একটি অবুঝ পশুকে খুণ করে মেরে ফেলা, প্রতিষ্ঠিত দম্পত্তির গুলিতে নিরীহ মানুষগুলোর প্রাণ হারানো- সবকিছু মিলে যেন এক অসস্থিকর অবস্থা চারপাশে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৩১