আমার এলাকার এক মসজিদ নির্মাণার্থে অর্থ সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে একজন বিজ্ঞ বক্তাকে আনা হল। বিভিন্ন এলাকার লোকজন সেই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বক্তার বক্তব্য শুনতে এল। আমিও কিছু বন্ধু-বান্ধবের সাথে গেলাম। তাঁর বক্তব্য শুনতে লাগলাম। তিনি দোযখের আযাবের বর্ণনা দিয়ে লোকজনকে কাঁদালেন। অবশেষে নির্মাণাধীন মসজিদে দানের জন্য মুসল্লিদের উৎসাহ দিতে লাগলেন। তিনি এমন কথাও বললেন যে, যিনি এই মসজিদে দান করবে তিনি নিশ্চিতভাবে বেহেশতে প্রবেশ করবে। তিনি আরো বললেন, "যদি আপনি বেহেশতে প্রবেশ না করেন তবে তার দায়-দায়িত্ব আমার। আমাকে ধরবেন। আল্লাহকে আমার কথা বলবেন।
কিন্তু আমরা জানি হযরত হাসান বসরী (রহঃ), হযরত জাফর সাদেক (রঃ) প্রমুখ আউলিয়াগণ অ্যাতো বড় পূণ্যবান হয়েও তিনি নিজে বেহেশতে স্থান পাবেন কি-না তা ভেবে সারাক্ষণ ইবাদাত করতেন ও ক্রন্দন করতেন।
তাহলে আমাদের দেশে তথাকথিত আন্তর্জাতিক বক্তা কিভাবে অন্যকে বেহেশত পাইয়ে দেন টাকার বিনিময়ে?
পরে অবশ্য জেনেছিলাম সেই বক্তা ৩০ হাজার টাকার চুক্তিতে বক্তব্য দিতে এসেছিলেন। এদেরকে ভাড়া করে আনতে হয় ইসলামিক বক্তব্য দিতে। আর তারা টাকা তুলতে মিথ্যা ও ছলনার আ্শ্রয় নেন অনায়াসে। মনে হয় সাধারন মানুষজন আল্লাহর আযাবকে ভয় করলেও এরা করে না।
ভাড়া করা গানের শিল্পী বা নৃত্য শিল্পীও টাকার বিনিময়ে মানুষকে গান শোনাতে বা নাচ দেখাতে যান এবং তা-ই করেন যা করার কথা। কিন্তু এরা মানুষের বিশ্বাসের সাথে বেঈমানী করেন।
সে-ই যুক্তিবাদী বক্তা হযরত ওমর (রাঃ) ও উট চালকের পালাক্রমে সমান সুবিধাও কষ্ট ভোগ করে পথ চলার ঘটনাও বর্ণনা করেন আর সরলপ্রাণ মুসল্লীদের মন গলাতে থাকেন। কিন্তু আমার মন গলে না। গলে না এজন্য যে, দর্শক শ্রোতাদের মাথার উপর ঠান্ডা বাতাস দেয়ার জন্য বৈদু্তিক ফ্যান না থাকলেও ঐ বক্তার মাথার উপরে, সামনে পিছনে ছিল বিশাল আকারের ফ্যানের সমাহার। তারপরও ঐ বক্তার দুই দিকে দুইজন সেবক বিরাট আকৃতির ঝালর লাগানো হাত পাখা (রাজকীয় স্টাইলের) দিয়ে বক্তাকে বাতাস করছে অবিরত। যদি ঐ সুন্দর ঝালর লাগানো হাতপাখা বাতাস প্রদানের চেয়ে বক্তার রাজকীয় ভাবই বেশি প্রকাশ করছিল। অন্যান্য মুসল্লীদের চেয়ে সম্ভবত আমার মনই বেশি বিগলিত হতো যদি দেখতাম হযরত ওমর (রাঃ) ও উট চালকের ঘটনাটি বলার পর বক্তা তাকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে থাকা ব্যক্তিতে তার নিজের আসনে বসিয়ে নিজে তাকে বাতাস করতেন আর বলতেন, "ভাই এবার তুমি একটু থামো। আমার আসনে (সিংহাসনে) বসো এবং আমাকে তোমার পাখা দাও, আমিও তোমাকে একটু বাতাস করি।"
কিন্তু না আমাদের দেশের ধর্ম ব্যবসায়ীদের চাতুরীর শেষ নেই। চাতুরী করে তারা জিরো থেকে হিরো হয়ে যান শুধুমাত্র আমাদের ধর্ম ও ধর্মীয় কার্যাবলী সম্পর্কে অজ্ঞতার কারনে।
এমন আমাদের দেশের অনেক নামকরা "পীর" আছেন যাঁদের সামনে শিষ্যরা ঝুঁকে পড়ে, আর তারা ঝুকে পড়েন নোংরা রাজনীতিবিদ বা ধনী ব্যক্তির সামনে।
সম্মানিত ভাই-বোনগণ, কারো অন্তরে কষ্ট দেয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। শুধু একটি কথা মনে রাখবেন- "এক ও অদ্বিতীয় স্রষ্টা ব্যতীত অন্য কোন সৃষ্টির মুখাপেক্ষী যদি কোন অলি, আউলিয়া, পীর, ফকির, দরবেশ বিপদকালেও হয়ে থাকেন তবে তাঁর নাম অলির দপ্তর থেকে কাটা হয়ে যায়।"
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করুন।
নাছিরুল ইসলাম, ০১৬৭০-১৪০৩৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


