আমি জানি আমার লেখার শিরোনাম দেখে অনেকেই এ লেখাটা পড়বেনই না। কারণ বর্তমানে শিক্ষিত যুবক শ্রেণি দু'ভাগে বিভক্ত। একভাগ রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার, আর অপরভাগ রাজনীতিকে করে চরম ঘৃণা। কিন্তু অন্যের হাতের পুতুল হওয়াও যেমন যুবকদের মানায় না তেমনি রাজনীতিকে ঘৃণা করাও যুবকদের উচিত না। চিরদিন সমাজ পরিবর্তনে যুবকরাই রেখেছে অগ্রনী ভূমিকা। যুবকদের গণতন্ত্রের মর্ম অনুধাবন করে ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহৎ স্বার্থে দেশের কাজে এগিয়ে আসা উচিত।
একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতে, রাষ্ট্রপরিচালনার যতগুলো পদ্ধতি আছে তার মধ্যে গণতন্ত্র সবচেয়ে সেরা পদ্ধতি, যদি জনগণ গণতন্ত্রের মর্ম বা অর্থ বোঝে। আর যদি জনগণ গণতন্ত্রের অর্থ না বোঝে তাহলে গণতন্ত্রই সবচেয়ে বাজে পদ্ধতি তাদের জন্য। এখানে জনগণ বলতে কিছু সংখ্যক সচেতন লোকের কথা নয় বরং সে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কথা বলা হয়েছে।
আমাদের এই বাংলাদেশেরও বৃহৎ জনগোষ্ঠী গণতন্ত্রের অর্থ বোঝে না বলে দেশের গণতন্ত্রের আজকের এই হাল। এই দেশের গণতন্ত্রের আড়ালে চলছে পরিবারতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সৈরতন্ত্র ও একশ্রেণির পীরতন্ত্র। বাংলাদেশের ইসলাম ধর্ম যেমন কয়েকজন পীর ও তাদের মুরিদরা তাদের নিজের দলের করে নিয়েছেন, তেমনি বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্যও কয়েকটি রাজনৈতিক পীর ও তাদের মুরিদরা কুক্ষিগত করে নিয়েছেন। এই পীর ও তাদের মুরিদরাই ঠিক করেন কোন স্টাইলের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশ চালাবেন। তাদের হাতেই রচিত হয় গণতন্ত্রের কাঠামো।
আমরা জানি সেই সন্তানই পরিবারের কাজে লাগে যে সংসারের খায়, এসংসারেই থাকে, সংসারই যার আপন। সেই সন্তান সংসার সাজাতে, গোছাতে নিজ পরিশ্রম, অর্থ, মেধা সবই ব্যয় করে। সে জানে যে এ সংসারটি তার নিজের, একান্ত আপনজন এখানে থাকে। তাদের সবার দেখাশুনার ভার তার উপর। তাদের ভাল মন্দকে সে নিজের ভালমন্দ হিসেবে ভাবে।
আর যেই সন্তান পরিবারের খায়, পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে নানা রকম উপকার গ্রহণ করে কিন্তু নিজে থাকে অন্যখানে। নিজের পরিবারের চেয়ে অন্য আরেকটি স্থান তার কাছে ভাল লাগে। সে স্থানটিকেই আপন করে নেয়। পরিবার থেকে শুধু সুবিধাগুলো আদায় করে নেয়, কিন্তু পরিবারকে আপন ভাবে না। এমন সন্তান পরিবারের কথা কেন ভাববে।
আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতাদের দিকে তাকালে আমরা দ্বিতীয় টাইপের সন্তানই বেশি দেখতে পাই। এরা দেশের খায়, দেশের পড়ে (ভুল হল দেশের পড়ে না, বাহিরের পোষাক পড়ে), কিন্তু তাদের সকল সুখ শান্তি দেশের বাহির তৈরি করে নেয়। এরা এদেশের টাকা বিদেশের ব্যাংকে জমা করে। বিদেশে বাড়ি গাড়ী কেনে। বিদেশ তাদের অন্তরে, দেশ থাকে তাদের ঠোঁটের আগায়। দেশ দেশ বলে চিৎকার করে (বাংলালিংক দেশের মতো) কিন্তু দেশকে প্রকৃত অর্থে ভালোবাসে না।
আমি কয়েকটি প্রশ্ন করছি-
প্রশ্ন-১।
ক) এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে গিনিপিগ পর্যায়ে রেখে দেয়ার কারণ কী?
খ) বছরের মাঝে এসেও নতুন পদ্ধতির প্রচলন করা হয় কেন আমাদের দেশে?
গ) কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদের রাজনীতির স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার বানিয়ে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা হয় কেন?
প্রশ্ন-২।
ক) বাংলাদেশের জন্মের ৪০ বছর পরও কেন আরেকটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বানানো গেল না?
খ) এদেশের চিকিৎসা সেবা কেন এখন চিকিৎসা ব্যবসায় পরিণত হল?
গ) ভূয়া ডাক্তার ও ভূয়া ক্লিনিকে ভরে গেছে দেশ, সাধারন মানুষ হচ্ছে প্রতারিত। কিন্তু সরকার কেন নিরব?
এরকম হাজারো প্রশ্ন আছে আমার মতো অনেক সাধারন নাগরিকের।
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর-
উত্তর-১। এদেশের রাজনৈতিক শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের আদরের সন্তানরাতো এদেশে পড়ালেখা করে না। তারা পড়ালেখা করে বিশ্বের নামীদামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। তারপর তারা পড়ালেখা শেষ করে এদেশে আসে আর আমরা এদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত যুবকরা তাদেরকে আমাদের নেতা করে মাথায় তুলে রাখি। (কারণ রাজার ছেলে তো রাজাই হয়, আর প্রজার ছেলে হয় প্রজা)।
উত্তর-২। এদেশের শিক্ষার মতো স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি করে লাভ কি? যাদের দায়িত্ব এগুলো করার তারা এবং তাদের পরিবারবর্গ উন্নত সেবা নিতে বিদেশে যান। তাদের বিদেশ গমনের সময় আমরা অনুগতের দল চোখের জলে তাদের বিদায় দিই। আবার সেসব উন্নত দেশের উন্নত চিকিৎসা সেবা নিয়ে তারা যখন দেশে ফিরেন তখন আমরা ফুল নিয়ে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাই।
এই হল আমাদের দেশের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নেতা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক। এমন গণতন্ত্রের চেয়ে রাজতন্ত্রও শ্রেয়।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার হল Public Servant. কিন্তু আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আমরা সাধারন মানুষরাই রাজনৈতিক নেতাদের servant বনে গেছি।
আমরা কবে ভালোকে মাথায় তুলে নিতে ও খারাপকে ঘৃণা করে আছাড় মারতে শিখবো। যতদিন শিখবো না, আছাড় মারবো না ততদিন আমাদের জাতির ভাগ্যের উন্নতি হবে না।
মহান প্রভু আল্লাহ্ তা'আলার কাছে প্রার্থনা করি জাতির বোধদোয় ঘটুক। ভাল লোক রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হোক। মন্দকে মন্দ বলার বোধ সৃষ্টি হোক বাঙালি জাতির।
ধন্যবাদ সবাইকে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


