somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রকৃতির প্রতিশোধ

০১ লা আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুরবানি আমি দেখি না। দেখার ইচ্ছে ও নেই। এসব আমার সয় না। কলিজা কেঁপে উঠে, ঘুমাতে পারি না। পায়ের নিচে পড়ে ছোট্ট তেলাপোকা মারা যাওয়ায় দু'রাত ঘুমাতে পারিনি আর এতো বড় পশু চোখের সামনে ধড়ফড় করে মরতে দেখলে তো বুক ফেটে যাবে।
আমি সচরাচর মনের আনন্দে ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে গোরুর হাটে ও যাই না কারণ অবলা পশুটাকে মার ধোর করা ও আমার সহ্য হয় না। সুমন ভাই আমাকে জোর করে নিয়ে গেছে। বারবার বলেছি যাবো না তারপর ও জোর করে নিয়ে গেছে। সুমন ভাই আমাদের বাড়ির নিচতলায় থাকে এবার আমাদের গোরু আনার দায়িত্ব তার উপর। অনেক পরিবারের বাচ্চা কিংবা বড়দের মতো উল্লাস উচ্ছ্বাসে হৈ হুল্লোড় করে আমি কুরবানির পশু আনতে হাটে যাই না। আমার কাছে বিষয়টা অনৈতিক মনে হয়। একটা জল জ্যান্ত পশুকে জবাই করে কেটে কুটে খাবো আর তাকে আনতে যাবো মনের আনন্দে ! যে পশুটাকে খানিক বাদে কেটে খাবো তাকে বরণ করবো ফুলের মালা দিয়ে ! বিষয়টা আমার কাছেই একেবারেই নৈতিক মনে হয় না।
তাই বলে পশু কেটে খাওয়াকে আমি অনৈতিক বলছি না। প্রকৃতি জীব জগতকে স্তরে স্তরে চক্রাকারে সাজিয়েছে যাকে বলে বাস্তুসংস্থান। বাস্তুসংস্থানের এ চক্রে টিকে থাকতে হলে এক প্রজাতি আরেক প্রজাতিকে মেরে খুন করে তবেই টিকে থাকতে হবে। এটাই জগতের নিয়ম। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।

গোরু দেখবে ভালো কথা সুমন ভাই হাঁটের সমস্ত গোরুর পাছায় খুব জোরে জোরে থাপ্পড় মেরে কিছু একটা যাচাই করে দেখছেন। সম্ভবত মাংসের পরিমাণ যাচাই করছেন। তাই বলে এতো জোরে জোরে থাপ্পড় মেরে দেখতে হবে ! হাত দিয়ে ধরে বলা যায় না? আসলে হাত দিতে ধরে বলা যায় কি যায় না তা আমি জানি না। কারণ আমি এ ব্যাপারে এক্সপার্ট নই। কিন্তু ব্যাপারটা আমার কাছে ভালো লাগছে না। সুমন ভাইয়ের পাছায় খুব জোরে থাপ্পড় মারলে তার ইন্দ্রিয় যতটা অনুভব করবে এই অবলা প্রাণীটার পাছায় থাপ্পড় মারাতে ও হয়তো সে খুব ব্যাথা অনুভব করছে। সে বাকশক্তিহীন প্রাণী বিধায় মুখ ফুটে বলতে পারছে না।

আমি হাঁট ছেড়ে ঘরে চলে এসছি। ওখানে আর এক মুহূর্ত ও থাকতে ইচ্ছে করছে না। একজন বোধসম্পন্ন মানুষকে দেখি সে নির্বোধ পশুটাকে পেছন থেকে লাথি মেরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আরেক হাতের লাঠি নিয়ে খুব শক্তি দিয়ে পেটাতে পেটাতে বোধহীন প্রাণীটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বোধহীন প্রাণীটাকে এভাবে এগিয়ে নিতে হবে? অন্যভাবে নেয়া যায় না? কোনভাবে নেয়া যায় কি যায় না তা আমি জানি না কারণ আমি এ ব্যাপারে এক্সপার্ট নই। কিন্তু বিষয়টা আমার কাছে ভালো লাগছে না। যে লোকটা নির্বোধ পশুটাকে লাথি মেরে অসম্মান করছে নিজের গায়ের সমস্ত জোর দেখাচ্ছে নির্বোধ পশুটির উপর তাকে ঠিক এভাবে পেটালে তার যতটা ব্যাথা অনুভব হবে ঠিক ততোটা ব্যাথা সইছে এই নির্বোধ পশুটি। সে বাকশক্তিহীন প্রাণী বিধায় মুখ ফুটে বলতে পারছে না।
এসব সইতে না পেরে আমি ঘরে এসে চুপটি করে বসে রইছি। আসলে ভয়ে আর আতংকে আমি চুপসে গেছি। এভাবে কখনো কেউ আমাকে পেটালে আমার অস্তি থাকবে না। আমি কখনো কারো সাথে উগ্র ব্যাবহার পর্যন্ত করি না তাহলে আমার ভয় কিসের? খারাপ মানুষ ভয় পাবে আমি কেনো পাবো ! আমি তো কারো সাথে খারাপ কিছু করি না। আমাকে কেউ এভাবে মারবে কেনো?
কিন্তু এ অবলা পশুটি ও তো কারো কোনো ক্ষতি করেনি। কারো পাকা ধানে মই দেয়নি তাকে ও তো পেটালো। মনের আনন্দে পেটালো। মনের আনন্দে পেটাতে পেটাতে ঘরে আনলো। ঈদ মানে খুশি। ঈদের খুশিতে আনন্দে আনন্দে নাচতে নাচতে একটা পশুকে পেটাচ্ছে। তার গলায় ফুলের মালা পরিয়ে তাকে জবাই করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঈদের খুশিতে আনন্দে উল্লাসে একটা পশুকে জবাই করে দিচ্ছে। এ ক্যামন আনন্দ !

যে বোধ সম্পন্ন মানুষটি লাথি মেরে নির্বোধ পশুটির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলো লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নিজ গতরের ক্ষমতা দেখালো সে লোকটি আমাদের প্রতিবেশি। আমাদের পাশের বাড়ির। আমি আগে জানতাম না। জানলা দিয়ে তাকানোর পর দেখেছি। গোরুকে বেঁধে রেখে খাওয়াচ্ছে। লোকটাকে দেখে আমার খুব ভয় হচ্ছে। যেমন ভয় হচ্ছে তেমন ঘৃণা ও হচ্ছে। আমি তাকে দেখার পর আর জানলা খুলছি না। রুমের ভেতর ঘুপটি মেরে আছি।
আজ আর জানলা খুলবো না। কালসকালে মানে ঈদের দিন খুলবো।
ঈদের দিন এক ভয়ানক পরিবেশ। ছুরি চাপাতি হাতে সব এদিক ওদিক ছুটোছুটি, রাস্তাঘাটে জামা কাপড়ে রক্তারক্তির ছাপ। রক্ত দেখলে আমার মাথা চক্কর দেয়।
নামাজ থেকে এসে একমুহূর্তের জন্য জানলা খুলেছি। আশে পাশের জনস্বরাগম আর হৈ চৈ দেখছি। অনেক পিতামাতা তাদের ছোট বাচ্চাদের কোলে করে নিয়ে এসছেন পশু জবাই দেখাতে। অনেক বাচ্চারা আবার উৎসুক চিত্তে নিজেই এসে পশুর পাশে ভিড় পাকাচ্ছে। কেউ শেষবারের মতো সেলফি তুলছে। কেউ শেষ বারের মতো ঘাস লতা পাতা খাওয়াচ্ছে।
আমি জানলা বন্ধ করবো এমন সময় দেখি ইয়া লম্বা ছুরি হাতে সেই বজ্জাত লোকটা এসেছে।
ও'মা; এই লোক তো দেখি সাজিদের বাবা !
সাজিদ আমার ক্লাসমেট। আমার বন্ধু। আর এই লোক হচ্ছে সেই বোধ সম্পন্ন লোক যিনি বাহুবলে দড়িতে বাঁধা নির্বোধ পশুকে লাথি মেরে বশ করে ফেলেন।
আমি জানলা বন্ধ করে ফেলেছি।
ঈদের আমেজ শেষে স্কুল শুরু হয়। বেশ কদিন ধরে আমি কৌতুহল নিয়ে বসে আছি কবে স্কুল খুলবে কবে আমি সাজিদকে ওর বাবা সম্পর্কিত ব্যাপারে কয়েকটা প্রশ্ন করবো।
ওর বাবা কেমন মানুষ, ওর বাবার মায়া ভালোবাসা কেমন, ওকে ও কি এভাবে পেটায়, এসব আর কি।

সাজিদ স্কুলে আসছে না। সাজিদ নাকি অসুস্থ। স্কুল শেষে ওকে দেখতে গেলাম আমি আর রনি। কলিং বেলে চাপ পড়তেই সাজিদের বাবা দরজা খুলল। লোকটাকে আমার দেখতে ভালো লাগে না। আমার যাকে ভালো লাগে না তার দিকে আমি একবারের বেশি দু'বার তাকাই না। কিন্তু সাজিদের বাবার দিকে একবার তাকিয়েই আমি চোখ সরাতে পারছি না। লোকটার চোখে এক সমুদ্র অশ্রু জল টল মল করছে। যে কোনো সময় উপচে পড়বে।
মুখখানা একযুগ নির্ঘুম রজনী পার করা ইনসোমিয়া রোগীদের মতো মনে হচ্ছে। লোকটার অবস্থা দেখে আমি আর চোখ সরাতে পারছি না।
লোকটা আমাকে ধরে চোখের জল আর সামলে রাখতে পারলো না। হড়বড় করে কেঁদে ফেললো। আমি তার ছেলের ক্লাসমেট তাই আমাকে ছেলে মনে করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।
সাজিদের বাবার কথা বার্তা শুনে বুঝতে পারলাম সাজিদের খুব মারাত্মক সমস্যা হয়েছে। সেদিন গোরুটাকে জবাই করতে দেখে সাজিদ মানুষিকভাবে আঘাত পেয়েছে।
সাজিদ এখন হ্যালুসিনেশন দেখে। গলা কাটা গোরু দেখে। গোরুর সাথে কথা বলে গোরুর কথা শুনতে পায়।

সাজিদের এই অবস্থার জন্য আমার তার বাবাকেই দায়ী করা উচিৎ বলে মনে হয়েছে তাই সেদিন আসার সময় সফিক সাহেবকে ক্ষুদ্র মগজে বলে দিয়েছি ''প্রকৃতি কখনো তার কর্মের ফল বিফলে ফলতে দেয় না সময় মতো তা শোধ করে দেয় আর একেই বলে প্রকৃতির প্রতিশোধ।''

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:১৮
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×