somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সমস্যাময় যন্ত্রনাময় ইতিহাস শৈশব থেকে .....(৩)

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ ভোর ৫:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার সমস্যাময় ইতিহাস শৈশব থেকে .......এখন পর্যন্ত । (১)

আমার জীবন যাত্রা শুরু হয়েছিল এক পিক্যুলিয়ার এন্ড প‌্যাথেটিক যৌথ পরিবারের মধ্য দিয়ে। আমার মা আজীবন অনেক কষ্টের মধ্যদিয়ে পার করেছন। পরিবারের প্রায় প্রতিটি মানুষকে আমি জানি। তারা খুবই সাধারণ মানুষ। ব্যক্তিগতভাবে মোটামুটি সবাইকেই আমার ভাল লাগত। আমি সবার সাথে মিশতাম।

আমার বড় ফুপু পড়ালেখায় ভাল ছিলেন খুবই পরিশ্রমী, তিনি যেই স্কুলের পড়তেন সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমার দাদাকে অনুরোধ করেন, আমার ফুপুকে যেন পড়াশোনার ব্যপারে কোন বাধা দেয়া না হয়। সেই সময় দেশ স্বাধীনের আগে আমাদের মত পরিবেরর একজন মেয়ের পক্ষে এটা সত্যিই প্রায় অসম্ভব ছিল কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ/এম এ করা। সম্ভবত আমার ফুপুর বিয়ে নিয়ে আমার দাদা/দাদু দুশ্চিন্তার মদ্যে ছিলেন। আমার ফুপুর বিয়ে হয় কিন্তু ফুপা অর্থনৈতিকভাবে তেমন একটা সচ্জ্ছছল ছিলেননা। অথবা বেশি মাত্রায় আন্তরিকতার কারেন আমার চাচারা বা দাদা/দাদু তাকে অন্যত্র যেতে দেননি। ফুপু আমাদের এলাকার কাছাকাছি একটা স্কুলে মাষ্টারি করত। পরে অবশ্য আমার ফুপা অনেক ভাল চাকুরী পেয়ে ছিলেন। কিন্তু ঘর জামাই উপাধী মোছার জন্য অনেক পরে আমাদের পাশেই একটা জায়গা কিনেন।

আমরা সবাই মোটামুটি বেশিরভাগ সময় বড়ফুপুর কাছে থাকতাম। আমার ফুপুর দুই মেয়ে এক ছেলে ছিল। তাদের সঙ্গ আমার/দের খুবই ভাল লাগত।

তাকে আমি বেশি বেশি ফিল করিঃ
আমার জীবনে একটা অসাধারণ অনুভূতি শেয়ার করতে চাঈ। " সুপানোভা আপা" (কাল্পনিক নাম)। যদিও উনার ব্যপারে আমার কোন স্মৃতি নাই। পরিবারের লোকজনের মুখে শোনা। উনার কয়েটা ছবি বড় করে বাধানো ছিল। উনি আমাকে খুবই আদর করতেন। তখন আমার বয়স হয়ত এক বছেরের একটু বেশি। আমার রানে একটা বিশ্রি ফোরার মত ছিল। কান্নাকটি করতাম।অনেকই আমাকে কোলে নিতে চাইতানা।এদিকে আমার ভাইও অসুস্থ্য থাকত। আমার মায়ের অনেক ঝামেলা হত। ....... আপা আমাকে প্রায় সারাদিন কোলে করে রাখতেন খাওয়াতেন তার বয়স তখন তেমন একটা বেশি ছিলনা। ৭/৮ বছর হবে। আমার মায়ের অনেক কষ্ট লাঘোব হত। মাঝে মাঝে আমার মা তাকে অনেক বকা ঝাকাও করত। .......... একদিন হল কি, আমি তার কোলে ছিলাম পরে কোল থেকে নামিয়ে আমার মায়ের কাছে রেখে যান। আমার মাকে অনুরোধ করেন আমাকে দেখে রাখার জন্য একটু পরে এসে আমাকে আবার নিয়ে খেলবেন। আমাদের বাসা হাইওয়ের পাশেই ছিল। তখন অবশ্য এত যানবাহন ছিলনা। কিন্তু সেই দিন এক ট্রাক আমার শিশু জীবন থেকে আমার একজন প্রিয় মানুষকে কেড়ে নেয়। যেই বুকে তিনি আমাকে জড়িয়ে রাখতেন সেই বুকে প্রচন্ড গতিতে আঘাত করে সেই অশূভ ট্রাক। তার নাক দিয়ে সামান্য রক্ত ঝড়েছিল মাত্র। .......... আমি প্রায়ই তার কবরের পাশে দাড়িয়ে তাকে ফিল করার চেষ্টা করতাম। ..... জীবনে যন্ত্রনায় বিপদে আমার অনেকবার মনে হয়েছিল ইস যদি নোভা আপা থাকত? আমার প্রতি উনার ভালবাসা জানা বা বোঝার পর আমার প্রায়ই মনে হত, উনি থাকলে আমাকে এত এত কষ্ট থেকে আগলে রাখতেন। আমি আমার মাকেও আমি এইভাবে অনুভব করনি।

"মা" সবার কাছে কেমন যেন তৃপ্তর একটা শব্দ। কিন্তু আমার কাছে এই শব্দেটা ভয়ঙ্কর একটা শব্দ ছিল। (এখন আমি পুরো ব্যপারটাই বুঝি, উনার জায়গায় আমি থাকলে, অন্তত আমকেই হত্যা করতাম।) আমার জন্মের সময় আমার মা অনেক কষ্ট পেয়েছেন। পরিবারের সদস্যা ফুপুরা/ দাদুর সাথে ময়ের ভাল সম্পর্ক্য ছিলনা। আমার মায়ের যখন তিব্র প্রসবজনীত ব্যাথা শুরু হল তখন বলার মত; উনার কেউই কাছে ছিলনা। আমার বাবার কাজিন তখন বাসায় ছিল। তাকে অনুরোধ করে আমার বাবাকে দোকান থেকে আনিয়েছেন। পরে ধাত্রীর ডাকা হয়। (আমার বাবা এতটাই বেখেয়ালি ছিলেন।) একদিন আমার মা কান্না করতে কারেত এগুলি আমকে বলেছিলেন। ........। এই যৌথ পরিবারের একজন অসহায় বন্ধি পাখির মতই আমার মা বেচে ছিলেন। পরিবরের প্রত্যেকটি সদস্যের সাথে তার লেগেই থাকত। কেউই তাকে সহ্য করতে পারতেন না। তার উপর অনেক অত্যাচার হয়েছিল শারিরীক মানসিক। (এত কথার পরেও অনেক কথা ছদ্ম নামেও বলা যায়না।) আমার বাবার কাছ থেকেও তিনি কোন মর্যাদা শান্তি স্বস্তি পেতে আমি দেখিনি। একটা ব্যপার আমাদের ভাইবোনদের জন্য খুবই কষ্টের ছিল। তারা প্রায়ই ঝগরা বিবাদ করত। মারামারিও করত। আমার মাও ছেরে দেওয়র পাত্রি ছিলেন না। তিনিও সুযোগ মত খামচা ঘুসি চর বসিয়ে দিতেন। কিন্তু এই অসহায় নারী জাতীর শক্তিই বা কতটুকু। এগুলা তো চোখের দেখা।

তবে অনেক ব্যপারেই কিছুই জানিনা বা অনুমান অনুভব চিন্তু কিছুই করতেও পারিনা। আজ মনে হচ্ছে সীমা লংঘন করি। আজকে ভাবি/লিখি।

(যদি কেউ আমার এই লেখা পড়ে থাকেন তবে অবশ্রই পুরেটা পরবেন। এটা আমার অনুরোধ, দাবি। অন্তত এই পোষ্টটা।)

রাতের অন্ধকারে কি হত? লালসা, জৈবককামনা, লেনদেন, ধর্ষন। শেষ শব্দটি অনেকেই মানতে রাজী নাও হতে পারেন। স্বামী কতৃক স্ত্রীকে কি ধর্ষন হতে পারেনা। কারন বিয়েটাইতো তার অমতে হয়েছিল। আর আমার বাবার মত চরিত্রবান পুরুষ কিইবা করতে পারেন। এখানে কারো দোষই দেয়া যায়না। সিষ্টেমলস বা মিসম্যানেজমেন্ট। তবে একটা জিনিষ আমার অবাক লাগে তারা কেউই একে অন্যের বদনাম সহ্য করতে পারতনা। যখন আমার দাদা/দাদু মায়ের ব্যাপারে খারপ কছু বলত, তখন আমার বাবা অনেক রাগ করতেন বা ওখান থেকে চলে আসতেন। তেমনি আমার মাও খালা/নানুরা বাবার ব্যাপারে খারাপ কিছু বলা পছন্দ করতেননা। দুইজনই উনাদের পেছনে উভয়ের প্রশংসা করতেন, বদনামও করতেন। (মানুষের মন বরই অদ্ভুত।)

১৯৯১ তে আমার রমজানের সময় আমার আরেকজন ভাইয়ের জন্ম হয় "মহিদুল"(ছদ্মনাম)। সে আমার কলিজার টুকরা ছিল। তার মত সরল সোজা ভাল এবং আধ্যাতিক শিশু আমি কখনো দেখিনাই। বিলিভ মি! আমার মা তাকে আমার কাছে খুবই কম দিতে চাইত।(তার হয়ত ধারন ছিল আমি তকে মের ফেলব।) আমরা তেকে নিয়ে অনেক মজা করতাম। সে খুবই হাসিখুশি ছিল। আমরা তাকে কাথার মাঝখানে রেখে দুইপাশ থেকে দুইজন ধরে দোল দিতেম। একবার হল কি অনেক জোরে দোল দিচ্ছিলাম। হাত থেকে কাথা ছুটে গেল। আমরা তো ভয়ে অস্থির। কাথার মধ্যে সে আছে। আমরা যখন কাথা সরিয়ে তাকে দেখছিলাম। সে তখন হাসছিল। আমি বালিসের উপর বালিস বসিয়ে কাল্পনিক হোন্ডা বানাতাম। তাকে সেখানে চড়াতাম। পেছনে আমি থাকতাম। চলার এক পর্যায়ে (কাল্পনিক) এ্যসিডেন্ট হত। কুউ কুউ কুউ কুউ ........ এ্যম্বুলেন্স আসলো আমি ডাক্তার হলাম আমার ভাই (অভিনয়) অজ্ঞান হয়ে রইল। আমি অনেক চেষ্টা করে তার জ্ঞান ফেরাতে পারতাম না। পরে .... এইটা শনি ...এইটা মনি....এইটা হল .....কাতুকুতু ......আমরা দুইজনেই হাসতাম। তার সাথেই আমি শৈশবের আনন্দ পেতে শুরু করি। মহিদুলের ব্যপারে একটু পরেই আসছি। একবার কিভাবে যেন গরম পানি পরে ওর মাঝে পুরে গেছিল। তার কষ্ট হচ্ছিল যন্ত্রনা কিন্তু কান্না করেনি। মাকে দোষারোপ করছিলাম। ৩/৪ বছরের ছেলে বলে, আম্মার কোন দোষ নেই। তার হাফানীর সমস্যা ছিল সরাদিন পানি ঘাটতে চাইত।

কিছু কিছু ব্যাপারে আমার বাবা মোল্লাভাব দেখাতেন। ধর্মকে নিংরীয়ে আবর্জনাগুলি সংগ্রহ করতে উনি বেশি পছন্দ করতেন হয়ত। আমার মায়ের মত কম শিক্ষিত একজন মহিলার অসহায়ত্ব অথবা আমার বাবার মত উদাসী ধার্মিক ব্যক্তির উদাসীনতা অথবা সমাজের মানুয়ের অযৌক্তিক বাক্য অথবা সরকারী স্বাস্থ্যকর্মীর খামখেয়লী অথবা ..ডট. ডট..ডট....... আমি ফিল করি এবং এটাই এখন লিখছি।

এই লেখাটা আগের গুলার চাইতেও জঘন্য।

আমার মা আবারো গর্ভধারন করেন। আমাদের যৌথ পরিবারের সদস্যরা আমার মাকে বলতো এই যে আপনার একটার পর একটা বাচ্চা হচ্ছে, তাদের কিভাবে কি (মানুষ) করবেন? আপনার স্বামি একজন ঢিলা/ বেকুব। হাবিজাবি...... আমার বড়চাচি এই কথাগুলি বলতে আমি শুনেছি। আমাকে আমার এক কাজিন বলেছিল তোর মায়ের এতগুলি বাচ্চা তারপরেও আবার বাচ্চা হচ্ছে কেন? (আমি তখন কিছুই বুঝতাম না। আমার ময়ের উপর বিরক্ত হতাম।) পরিবারের সবাই এক ধরনের মানসিক টর্চার শুরু করে। প্রতিবেশিরাও তাতে যোগ দেয়। আমাদের সমজের নারীরা নারীদের বড় শত্রু, সহানুভূতি সাহয্যের ধারে কাছে থাকেবেনা, কিন্তু টেনশন এবং কষ্টদিতে কোন রকম বিলম্ব করবেনা। বড়চাচা -আমার বাবার ইমেডিয়েট ছোট (বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একজন উচ্চপদস্থ্য কর্মকর্তা, সমাজত্বত্তে এমএ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়)। পরে আমার মা বাবাকে প্রেসার ক্রিয়েট করে। আমার বাবার একধরনের অনুমতি নিয়ে ছিলেন আমার মা। আমার বাবা কোন ডাক্তারের সাথে কথা বলে সব ঠিকঠাক করেছিলেন। তারিখও ঠিক হয়েছিল। (হয়ত আমার বাবার প্রতি আমার মায়ের বিশ্বাস ছিলনা।) কিন্তু তার আগেই একজন স্বাস্থ্যকর্মির মাধ্যমে আমার মা একটি প্রাণ হত্যা করেন, যে কিনা দুনিয়ার মুখ দেখতে পায়নি। (হ্ত্যা - পাপ)। এর পর আমার মা ভয়ানক অসুস্থ্য হয়ে যায়। (এগুলো অনেক বছর পরে আমার বাবা আমাকে বলেছিল, বেকুব নং ১।)

অনাগত প্রাণ নাশ হয়েছে কিন্তু উনার শারিরিক প্রচন্ড রকমের সমস্যা হয়ে গেছে। উনাকে ইমাজেন্সিতে ভর্তি করানো হল। ডাক্তার বাচার আশি ছেড়ে দিয়েছিলেন। উনার কষ্ট দেখে বা কষ্টের কথা শুনে আমাদের জন্য হৃদয়বিদারক ছিল। (অন্তত উনার গর্বেইতো জন্মেছিলাম, হয়তবা উনার অমতেই।)

আমার ছোটভাই মহিদুল (ছদ্মনাম) আমার মাকে দেখা করার জন্য অষ্থির হয়ে উঠত কিন্তু কান্নাকাটি করত না। সে নামজা পরেত (প্রতীকি)। আল্লাহর কাছে দোয়া চাইত। বিশ্বাস করেন এগুলো নীজের কানে শোনা। অনেকটা এরকমই "আল্লাহ আমার মাকে ভাল কইরা দাও, আমার প্রাণের বিনিমেয়ে হইলেও আমার মাকে ভাল কইরা দাও।" তার কথা আমদের চাইতেও অনেক বেশি শুদ্ধ ছিল। সে টেলিফোন করে (আমাদের বাসায় একটা নষ্ট টেলিফোন ছিল) ডাক্তারের সাথে কাল্পনিক আলাগ করত। ডাক্তার আমার মায়ের কি অবস্থ্যা? ভাল হয়ে যাবেতো? তার ঐ বয়সে এই রকম আচরণ দেখে সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল। এবং সবাই বিশ্বস করেছিল আমার মা সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসবেন।

তার কিছুদিন আগের কথা। আমাদের বাসায় ক্যাসেট প্রেয়ার ছিল। মাইলসের "প্রত্যাশা" এ্যলবামটা তখন সুপার হিট। আমাদের সবার প্রিয় গান ছিল ঐ গুলি। মহিদুল গান গাইত (কাল্পনিক মাউথ পিস হতে নিয়ে।)


ফিরিয়ে দাও আমারি প্রেম তুমি ফিরিয়ে দাও....
নিস্ব করেছ আমায় কি নিঠুর ছলনাম টো টো টা টা (মুখ দিয়ে ইনস্ট্রুমেন্টের সাউন্ড)
তুমি হীনা এ হৃদয় আমার একাকী অসহায়.....
ছেলে হারনোর বেদনায় পুরে চলেছি সরাক্ষন ৎ
কেন তুমি মিছে মায়ায় বেধেছিলে আমার তখন...
ফিরিয়ে দাও.....

আরেকটা গান ছিল (অন্যকোন ব্যান্ডের) ,

কাটার আঘাম দিবে সুবাস দিবেনা তাই কি হয়.....

আমার তার খুবই ভাল শ্রোতা ছিলাম।

আমার মা সুস্থ্য হয়ে বাড়ী ফিরে আসে। আসার পরই বায়না ধরে তার দেশের বড়ীতে যাওয়ার। আমাদের নানা বাড়ী ছিল অনেক দূরে। মোটামুটি সকাল ৫ টায় রওয়না করলে রাত ৮/৯ বাজে তখন পৌছনো যেত। আমার যাওর ইচ্চা থাকলেও পরীক্ষার কারনে আমি যেতে পারিনাই। আমার বাবা মাকে এবং মহিদুলকে নানবাড়ী দিয়ে আসে। (আমার নানা বাড়ী যাওয়া আমাদের জন্য ব্যয় বহুল ছিল, আমার বাবাকে রাজী করাতে কষ্ট হত।)

আমার পরীক্ষা শেষ হয়। আমি অপেক্ষায় থাকি কখন সে আসবে। আমরা অর্থনৈতিক ভাবে অনেক দুর্বল ছিলাম। সে বেলুন খুবই পছন্দ করত। বেলনুকে "ফোট্টি" বলত। কয়েকবার তাকে বেলনু কিনে দিয়েছিলাম। আমাদের বাসার পাশেই বস্তি ছিল। ওখানের বচ্চারা 'কনডম' ফুলিয়ে খুবই মজা করত। অকে বড় করত। ওগুলাদিয়ে আমাদের বাসায় খেলতে দিত না। বলত মুখে ঘা হবে। আমি অনেকবার ভালকরে ধুইয়ে। মোটামুটি মধ্যম সাইজ করে ফুলিয়ে তাকে নিয়ে খেলতাম। মাঝে মাঝে চুরি করে গ্যাসেরচুলা থেকে গ্যাস ভরতাম।

তার অপেক্ষায় আমি অনেকগুলি দেয়াশলইয়ের বক্স জোগার করেছি। পান সিগারেটের দোকান থেকে। তাদেরকে অনুরোধ করতাম তাদের ছোট ডাষ্টবিন থেকে খালি বক্স দেয়ার জন্য। অনেকই দিত আবার অনেকই খুবই খারপ ব্যবহার করত। তারপরেও আমি প্রায় ২৫/৩০ বক্স জমিয়েছিলাম। একটার পর একটা জোড়া লাগিয়ে বিশাল লম্বার এক খেলনার টেন বানিয়ে ছিলাম। তার অপেক্ষায়.......।

অবশেষে একদিন আমার বাবা ও ভাই জরুরী ভিত্তিতে বাড়ী যায়। কয়েকদিনপর ফেরত আসে। কিন্তু আমার ভাই আর ফেরত আসেনা। ব্যাপারটা তারা আমার কাছ থেকে অনেকদিন গোপন করেছিল। আমার প্রিয় ভাই আমার কলিজার টুকরা, শবেবরাতের দিন সন্ধার সময় পুকুরে ডুবে মৃত্যুবরণ করে। আমার মা উনার নানা বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিল। ( এইটা একটা এ্যকসিডেন্ড ছিল।) না হলে হয়ত আজরইল নামে কেউ সৃষ্টিকর্তার আদেশে তাকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। হয়তা সৃষ্টি কর্তার সাথে কোন পুরাণ হিসবা নিকাশ ছিল।

আমার মা ঐ গানটা আর শুনতে পারতেন না। আক্ষেপ করতেন কারন আমার সেই মাছুম ভাই গানটা একটু ব্যতিক্রম করেই গাইতেন....ছেলে হারনোর বেদনায় পুরো চলেছি সরাক্ষন.......।

এর পর থেকে আমার মায়ের সাথে আমার অনেক দুরুত্ব হয়। আমার মাও স্বভবিক ছিলেন না। প্রয়ই কাদতেন। আমি তাকে উল্টো বলতাম, যান নানা বাড়ি যান, আমাকে একলা ফেলে নানা বাড়ী যান। মহিদুলের মৃত্যুর জন্য আমি মাকে দোষারোপ করতাম। তার সাথে খুবই বাজে ব্যবহার করতাম। গালগালী করতাম। এমনও বলতাম তুই ওকে খেয়ে ফেলেছিস। ডাইনি। অবশ্য বিনিময়ে অনেক মার খেতম। আমাকের আমার মা অনেক টর্চার করত। হাতের কাছে যাই থাকত তাই দিয়ে মারত। গলায় পারা দিয়ে ধরত। তখন আমার বয়স ... ১৩ এর মত। মোটামুটি সবাই আমার মায়ের ব্যপারে আমার মধ্যে বিষাধাগর গরে তুলেছিল। আমি আমার মায়ের কাছে বিলকুল থাকতামনা। দাদুর কাছে অথবা ফুপুর কাছে থাকতাম।

মহিদুলের মৃত্যুর পর আমার মা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পারেন। আমার ব্যবহারও তাকে অনেক আঘাত করে। হয়তা আমার মায়ের মধ্যেও পাপবোধ কাজ করে। .......

তারপর তাকে স্বান্তনা দেয়ার জন্য নতুন মানুষ উৎপাদন করেন আমার বাবা, তাকে স্বভাবিক করার জন্য জনপরামর্শক্রমে।

আমার নীজের খুবই লজ্জা লাগছে এই কথাগুলো লিখতে, আমি মাথা নীচু করেই লিছছি।

আমি তখনো জানি, মাকে কষ্ট দিয়ে আমি খুবই বড় পাপ করছি, তার সাথে কোন ঝগার বিবাধ হলে আমি অনুশোচনায় ভুগতাম। আমার ঘুমহতনা। তিব্র পাপবোধ হত। আমার অস্তিত্ব নিয়ে আমার লজ্জাবোধ হত। সেই ছুটি গল্পের শিশুর মতই। কষ্টগুলি আমার জন্য পুর্ব শারীরিক কষ্টের চাইতেও অনেক গুন বেশিছিল। যে মায়ের পায়র নীচে বেহেশত, সেই মায়ের সাথে আমি খারপ ব্যবহার করি? আমার অনেক ভয় হত। ...... কিন্তু তিনিও আমাকে যথেষ্ট মারতেন। একদিন খুন্তি দিয়ে মাথা দুইটা বাড়ি দিয়েছিলেন। দুইটা ছিদ্র অনেক রক্ত। রক্ত দেখে উনি আবার আমাকে জরীয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন। আমি উনাকে ধাক্কা মেরে আমার দাদীর কাছে চলে যাই। আমি জানি আমার মায়েরও কষ্ট হত........। কিন্তু এটা তখন ফিল করতামনা। এটা সবই এই পিক্যুলিয়ার এন্ড প‌্যথেটিক ফ্যামিলর জন্য। মাঝে মধ্যে আমার মায়ের সাথে আমার সম্পর্ক্য বেশ ভাল হত। খুবই কম। কিন্তু তার পরেই আরো বেশি খারাপ হত।

উনি বেশিরভাগই অসুস্থ্য থাকতেন। তারপর সংসারের এত কাজ। আমার বোন তখন বেশ বড় হয়েছে। তাকে মোটামুটি সাহয্য করত। কিন্তু তিনি সাহায্য নিতে জানতেননা। একটা কাজ করতে দিলে করার আগেই খিটি মিটি করে বলত এটা এইভাবে করে? ... আমার বোনও তার উপর বিরক্ত হত। সেও প্রচুর মার খেত। আর তার তো চুল ছিল। তার প্রতিও আমার মা কম অত্যচার করেন নাই। আমার মার আমার বোনকেও কোনরকম মানসিক শান্তি দিতেননা। তারো অনেক কষ্টে বড় হওয়া।

আমার মাকে সাহায্য করতে চাইতাম। আমি প্রায়ই কয়েকবার তার পিয়াজ, হলুদ, রুসন ও পাটাতে পিসে দিয়েছি।অবশ্যই আমি মাকে ভালবাসতাম। এখনো বাসি। কিন্তু তখন এমন কেন হত। উনিই বা এমন খারাপ আচরন করত কেন। উনি যদি আমাকে না বোঝ তবে ..... উনাকে বোঝা আমার জন্য অনেক কষ্টকর ছিল। বৃক্ষই ফলের ভার নেয়। (কিন্তু এখন বুঝি, অমতে বিয়ে এবং বাল্য বিবাহ।)। আমার সকল ভূলের জন্য, খারাপ আচরনের জন্য আমি আজীবন অনুতপ্ত। আমকে জন্ম দেয়ার জন্য আমি আজীবন কৃতজ্ঞ। আপনার কাছে আমার আর কিছু চাইবার ছিলনা। শুধু আপনার ভালবাসা ছাড়া। আমি না বুঝেই শুধু খাদ্যের জন্য আপনাকে জ্বালতন করাতাম। আপনি হয়ত কখনো বলতেন, পেটেকি দোজখের আগুন জ্বলছে? আমার বিকাশ/বয়স/পরিবেশটা অনুকূলে ছিনা ঠিক আপনার মতই, আমারো জন্ম হয়েছিল হয়ত আপনার এবং আমার অনিচ্ছায়। তবুও ধন্যবাদ, পেয়েছি পৃথীবির অদ্ভুত স্বাদ। আল্লাহ তুমি সবসময় আমার মায়েদের ভাল রেখ। হে আল্লাহ মানুশকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত কর। মানুষকে মনুষত্ব দাও। মানুষকে আঘাত করার শক্তি কমিয়ে দাও।

আমার যখন টুকটাক টাকা কামানো শুরু করি। তখন একদিন আমার মায়ের জন্য, আপেল নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি কত খুশি হয়েছিলেন। অসুস্থ্য অবস্থা থেকে উঠে তিনি আমাকে আপেল কেটে দিয়েছেন। তিনি হয়ত বলেছিলেন তোর খাওয়াই আমার খাওয়া।

আমার মায়ের আনন্দই আমার সবচাইতে বড় পাওয়া ছিল। আমি এখন ফিল করি আমার চাইতেও কত বেশি কষ্ট করে তিনি বেচেছিলেন।

আজ আমি প্রাণ খুলে কান্না করতে চাই....... সবার কাছে থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

টয়লটে বেডরুম এট্যাচড। গেলাম হাতমুখ ধুলাম। লেখা শেষ করার পর আর কান্ন আসছিলনা তাই আপনাদেরও ব্যাপারটা জনালাম। এগুলা আমার ১৫/১৬ বছরের আগের কাহীনি। একজন আশরাফুল মাকলুকাত এর কাহীনি।

............................. চলবে???????? যদি আপনি শুনতে চান।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:১৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×