অভাজন এক সাধারণ যুবক। অচেনা এ যুবকের কুড়িয়ে পাওয়া ডাইরি থেকে এ ধারাবাহিকের উত্পত্তি
........ রবিবার
কয়েকটি ঘটনা ঘটলো আজ। কিছু ভালো, কিছু মন্দ। ভালোর মধ্যে প্রথমটা হচ্ছে, আজ ছিলো হরতাল। বৃহস্পতিবার বিএনপির মিছিলে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আজকের হরতাল। আমার অরাজনৈতিক জীবনে এটা সুখবর, কারণ আজ রাস্তাগুলো ছিলো ফাঁকা। সকালে ঘুম ভেঙেছিলো দেরিতে। দুপুর নাগাদ বাইরে বেরিয়ে দেখলাম দারুন ছিমছাম ঢাকা। বাস আর প্রাইভেট কার একেবারেই নেই। সব রাস্তায় রিকশা চলছে পুরোদমে। বেশ একটা পরিবেশবাদী আবহাওয়া ছিলো। টাকা ছিলো না, তাই দুপুর-রোদে রিকশা-ভ্রমণের শখ বাদ দিয়ে ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে বসে থাকলাম অনেক্ষণ। দুপুরের পর আরিফ ভাইয়ের সাথে দেখা করার কথা ছিলো। সময় কাটিয়ে গেলাম। দিনের দ্বিতীয় ভালো খবরটা জন্ম নিলো বিকেলেই, পত্রিকা অফিসে। আরিফ ভাই আমার লেখাগুলোর জমে থাকা বিলের বড় একটা অংক আজ পরিশোধ করলেন। মনটা খুশিতে ভরে দিয়ে পকেট গরম হয়ে উঠলো। রিমিকে ফোন দেয়ার আগ পর্যন্ত তৃতীয় ও শেষ ভালো খবরটা ছিলো, আজ আমার টিউশনিতে যেতে হয়নি। হরতালের কারণে ছাত্রীর মা ফোন করে জানালো, আজ আমার ছুটি। খুশি হয়ে রিমিকে বললাম চলে আসতে। হরতালের অযুহাত দেখিয়ে ও প্রথমে আসতে চায়নি। কিন্তু ওর মনের খবর তো আমি জানিই। বরাবরের মতো কিছুক্ষণ না-টা করে বললো আধঘন্টার মধ্যে আসবে। রিমির বাসা আরমানীটোলায়। পুরোনো ঢাকার ওই অংশটা আমার দারুন লাগে। গলির জাল আর পুরোনো ধাঁচের বাড়িগুলোর আশপাশ দিয়ে যেতে নিজেকে কেমন যেন প্রাগৈতিহাসিক মনে হয়। একটা ক্যামেরা থাকলে ভালো কিছু ছবি তুলতাম। যা হোক, দিনের প্রথম খারাপ খবর হচ্ছে রিমির সাথে দেখা করা। শুরুটা ভালোই ছিলো, সন্ধ্যায় শাহ্বাগে দুজনে ফুচকা খেলাম। এরপর একটু রিকশায় ঘুরেটুরে রাতে একসাথে খাবো ভেবেছিলাম। রিমির পছন্দের শর্মা হাউসে যাচ্ছি, তখনই ফোন করলো টুম্পা। টুম্পার সাথে কলেজে পড়তাম আমি। একসময় ভালোই বন্ধুত্ব ছিলো, তবে এখন আর আগের মতো না। তারপরও মেয়েটা মাঝেমাঝে ফোন করে, আমিও কথা বলি। কোনও এক অদ্ভুত কারণে রিমি ওকে একেবারেই পছন্দ করে না বলে আমি বলেছিলাম টুম্পার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই আমার। ভেবেছিলাম রিমির সামনে টুম্পার ফোন ধরবো না, কিন্তু মোবাইলে নামটা দেখে ফেলল রিমি। আর দেখেই হইচই শুরু করলো। শর্মা হাউসের বদলে রিকশা থেকে নেমে বাসার মুখে রওনা দিলো সে। মানাতে পারলাম না। জানি কালই আগের মতো আদুরে গলায় কথা বলবে আমার সাথে, তারপরও ওই সময় দিনের সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল।
রাতে আরেকটা খারাপ খবর পেলাম। আমার বন্ধু সবুজের কাছে একটা সি.ভি. দিয়েছিলাম। ওর দুলাভাইয়ের বায়িং হাউসে লোক নেয়ার কথা ছিলো। রাতে ও জানালো আপাতত ব্যবসা মন্দার কারণে লোক নিচ্ছে না তারা।
বিকেল পর্যন্তও যে ফুরফুরে মেজাজে সময় কাটিয়েছি, রাতে সেটা এমন কষ্টে পাল্টে যাবে -এটা কি সত্যিই ভেবেছিলাম! মনে হচ্ছে একেই নিয়তি বলে। ভীষণ কষ্ট লাগছে। রিমির ফোন বন্ধ। মেয়েটা এতো জেদি কেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




