সেদিন তার সাথে প্রথম দেখা। প্রায় ৩মাস ধরে আমাদের পরিচয় নেটের অবাস্তব জগতে। ইয়াহু মেসেঞ্জারের কালো কালো অক্ষ্ররে মনের কথা দেয়া-নেয়া করতে করতে কখন যেনো আমি মনটাই দিয়ে দিয়েছি, সত্যি বুঝিনি। যখন বললাম, উত্তর পেলাম, “আগে আমাকে দেখুন”। যখন বললাম, না দেখেই আমার ভালোবাসা হয়তো যথেষ্ট মজবুত হয়ে গেছে, “আপনাকে এতোটা সুলভ ভাবিনি”, উত্তর এলো। কেমন যেনো মিইয়ে গেলাম। ঠিকই তো। বন্ধুদের যে স্বভাবটাকে গত ৩-৪বছর ধরে ঘৃণা করেছি মনে মনে, সেটাই আমি কিভাবে করে ফেললাম?
তারপর আর লজ্জায় তার সাথে বহুদিন কথা হয়নি। নিজেকে একটু গুটিয়ে নিয়ে মন দিয়েছিলাম বইয়ের পাতায়, যে আসলে আমার সব’চে প্রিয় সঙ্গী। হঠাৎ এক রোদ ভেজা দিনে, মেইল চেক করতে গিয়ে দেখি, ইয়াহুতে আমার ইনবক্সে অনেকগুলো অফলাইন মেসেজ জমে আছে। মেইলপেজে চ্যাটের সুবিধা তখন ইয়াহু মাত্র দিতে শুরু করেছে।তার একগাদা মেসেজের উত্তরে আমি শুধু আরেকবার ক্ষমা চাইলাম। সে চাইলো দেখা করতে।
ঠিক হলো আমরা টিএসসিতে দেখা করবো, বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরোলেও আমরা দু’জনেই আসলে সুযোগ পেলেই সেই প্রাঙ্গনে ফিরে যেতে বড্ড পছন্দ করি। তাই সেদিন সেখানেই আমি অপেক্ষা করছিলাম, টিএসসি’র গেটে।
সে এসেছিলো একটা লাল জামা পরে, আমার প্রিয় রঙ লাল, সেটা সে জানত। আমাকে দেখেও যেনো সে দেখলনা, আমিও এটাই প্রত্যাশা করেছিলাম। যদিও নেটে আমরা দু’জনেই দুজনের ছবি দেখেছি। কিন্তু আমি জানতাম, সে আমাকে সত্যি চিনবেনা। তার দিকে তাকিয়ে কেবল মনে হলো, এমনিতো কথা ছিলো।
ক্রাচে ভর দিয়ে আমি বেশ দ্রুতোই হাঁটতে পারি, তাই তার পেছনে যেয়ে যখন ডাক দিলাম, “লীনা”, সে চমকে উঠে তাকালো আমার দিকে, “তুমি?”, আমি বললাম, “হ্যাঁ, আমি”। হাতের গোলাপগুলো রাখলাম তার কোলে, তারপর বললাম, “ভেতরে যাবে? বসবো কিছুক্ষণ”। নীরব সম্মতিতে মাথা ঝোঁকালো সে, আমার পাশে পাশে চলতে শুরু করলো তার ব্যাটারী অপারেটেড হুইলচেয়ার।
পাশাপাশি সেদিন আমরা চলেছিলাম অনেকদূর, অনেকটা দূর, যতোদূর কেউ কক্ষণো হাঁটেনি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




