somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গরু আসে মানুষ যায়

১৯ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মামুন মটর সাইকেলটা কোন রকম পার্ক করে সবে মাত্র কেন্টিনে এককাপ চা নিয়ে বসেছে এমন সময় আনিচ এসে বল্ল স্যার আপনাকে ডাকে। ”স্যার” মানে “সি-টিভির” সাব এডিটর আনোয়ারুল হক। মামুনের কোন প্রতিবেদনই এই লোকটার পছন্দ হয়না। মনে মনে একটা কুৎসিত গালি দিয়ে চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে মামুন উঠে দাড়াল। প্রায় মিনিট পনের অনেক অপমান জনক কথা তাকে ঠান্ডা মাথায় শুনতে হবে, তার মুখ থাকবে বন্ধ। মুখ খুললে আনোয়ার স্যার এর ভলিউম বেড়ে যায়। আশে পাশে এখন এই অপমান জনক কথাগুলো পুরো অফিস জুড়ে ভাসতে থাকে। বড়ই বিরক্তিকর ব্যাপার। তখন সবাই খুবই ব্যাস্ত ভঙ্গিতে কাজ করতে থাকে কিন্তু কান দিয়ে রাখে ধমকাধমকির ওপর। বাসা থেকে অফিস পর্যন্ত প্রায় কাক ভেজা হয়ে এসেছে। বৃষ্টি ভেজা শরীরে রীতিমত ঘামছে। আকাশ পুরোপুরি ছিদ্র ছিদ্র হয়ে গেছে মনে হয়, সারাদিন বৃষ্টি আছেই। তার উপর উপরি পাওনা হিসাবে আছে ভ্যাবসা গরম। আশে পাশে তাকিয়ে নিউজ কাষ্টার সুমিকে একটু দু-চোখ দিয়ে খুঁজে নিল। সুমির সঙ্গে তার পরিচয় নাই। সে সিনিয়র রিপোর্টার। আর মামুন গুনে গুনে আট নয় মাস হবে। তার পরেও সুমি ম্যাডাম কে একটু দেখলেই তার কেমন যেন ভাল লাগে। প্রেমটেম কোন বিষয় না। চোখটা একটু শান্তি পায়, বুকটা একটু ধর পড়িয়ে উঠে এই যা। মামুন বাথরুম কাম ওয়াশরুমে ঢুকে নিজেকে একটু গুছিয়ে নিল। সার্ট পুরোপুরি ঘামে ভেজা আর প্যান্ট এর হাঁটু পর্যন্ত বৃষ্টির কাঁদাছিটা। অবশ্য আনোয়ার স্যার এগুলো একেবারেই খেয়াল করেনা। লোকটা কাজ পাগল একটা মেসিন। বয়স বেশী না কিন্তু সারাক্ষন একটা না একটা কিছু নিয়ে আছেই। অল্প দিনেই মামুন বুঝেগেছে পার্ফেকসনিষ্ট বস্ থাকলে জীবনটা কতটা দূর্বিসহ হতে পারে।
ভীতরে ভীতরে শ্রদ্ধা করলেও মনে মনে দু’একটা গালি না দিয়ে সে পারেনা, গালি দিলে মনে একটু আরাম হয়, শেষ হলে আবার মনে মনে মাপ চেয়ে নেয়। আনোয়ার সাহেবের রুমে সব সময় লোকজন থাকেই। আজও তার ব্যাতিক্রম হয় নাই। অসচ্ছ গ্লাস পার্টিশনের ওপারে উকি দিয়ে দেখে নিল একজন মহিলা আর অন্যজন পুরুষ মানুষ দাড়িয়ে আছে, আর আনোয়ার মহাশয় হাটাহাটি করে কি যেন জ্ঞান ছড়াচ্ছে। রুমটা এমন যে বাহির থেকে সব ঘোলা দেখাযায়। মামুন ইতস্তত করতে করতে ঢুকে পড়ল। আজ মহিলা মানুষের সামনে গালাগালি খেতে হবে। কপালে থাকলে ফিরাবে কি ভাবে। ভেবেছিল কি সুন্দর ঝকঝকা প্রাইভেট চ্যানেল। কত সুন্দর করে খবর দেখায়। সেও একদিন বড় বড় ব্যাক্তিদের সঙ্গে বসে দেশ জাতি নিয়ে আলোচনা করবে। বাস্তবে এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে, ঝড় বৃষ্টি রোদে খালি খবরের জন্য ঘোরাঘুরি করতে হয়। তাও এক বৎসর গেলে চাকরি পার্মানেন্ট হবে। যদি হয়, কিছু পদন্নতি হবে হয়তো । মটর সাইকেলের বদলে একটা সি এন জি সাইজের মাইক্রো থাকতে পারে। কিন্তু এত বকাবকির পর চাকরি থাকে কিনা সন্দেহ। আজকে অফিসে ঢুকতেই আনিচ খবর দিয়ে গেল মানে মামলা সিরিয়াস। সে এমন কেওনা যে তার জন্য ভোর সকালে আনোয়ারুল হক বসে থাকবেন, নির্ঘাত চাকরিতে টান পড়বে।


- মামুন দাড়িয়ে আছ কেন বস্ বস্। রহিম আর এককাপ চা নিয়ে আস। বলে আনোয়ার স্যার চেয়ারে বসলেন।
মামুন থতমত খেয়ে চেয়ারে বসে দেখে পাশের সিটে সুমি ম্যাডাম আলো করে বসে আছে। রহিম পিয়ন পৃথিবীর সবচেয়ে মনোযোগী ব্যাক্তির মত টেবিল পরিষ্কার করছে। আনোয়ার স্যারের হাতে কতগুলো কাগজ। চোখে ভ‚ল দেখল কিনা বুঝতে পারছেনা। কাগজ গুলো তার গতকালের এসাইনমেন্ট। “গরু আসে মানুষ যায়”। সে কি আসলে রুমের বাইরে? অবশ্যই স্বপ্নের মধ্যে এসব ঘটছে। সব তার কল্পনা। সুমি ম্যাডাম পাশে বসা। স্যার তাকে সম্মান করে চা খাওয়াবে। অবশ্যই স্বপ্ন। সে আসলে চোখ খুলে দেখবে রুমের বাইরে দাড়িয়ে আছে।

- মামুন, পারফেক্ট। তোমার রিপোর্ট টা পড়লাম। মানে ফাইল আপ কপি। ভিডিও রিপোটিংও দেখেছি। আজকের বিশেষ নিউজে দিচ্ছি। গুড জব।
- কনগ্রাচুলেশন মামুন। এত সুন্দর করে হাসতে পারে সুমি ম্যাডাম মামুনের ধারনা ছিল না। তাহলে কি স্বপ্ন দেখছেনা? এ সবিই সত্যি? টেবিলে একটা জোরে ঘুসি দিয়ে পরীক্ষা করবে?
হঠাৎ সবাইকে চমকিয়ে দিয়ে রহিম পিয়ন, স্যারের বড় কফি খাওয়ার মগটা ফেলে দিল। বিকট আওয়াজে মামুন বুঝেনিল সে বাস্তবেই আছে। টেবিলে ঘুসি দেয়ার রিস্ক টা বাদ গেল। মগের টুকরো গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
-মামুন, আমি অনেকবার সবাইকে বুঝিয়েছি। বিভিন্ন ট্রেনিং এ, সেমিনারে, সিম্পোজিয়ামে...... ডোন্ট মেক এনি কমপ্লিকেটেড ষ্টোরি হোয়াট হ্যাভ নো ডেফ্থ, ইভেন ইট লুক্স ফেবুলাস্ । আজ অনেক দিন পর এমন একটা নিউজ পেলাম। থ্যাংকস ওয়ান মোর।

ছেলে মানুষের মত চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আটকাতে পারছে না। মামুন এমন প্রশংসা আগে কোন দিন শোনেনি। সুমি ম্যাডাম আর আনোয়ার স্যারের কোন কথা আর তার মাথায় ঢুকছে না। ঘোর লাগা মানুষের মত কখন বেড়িয়ে এসেছে খেয়াল করেনি। সন্ধায় প্রথম নিউজের একঘন্টা আগে থেকেই মেস এর পাশে চায়ের দোকানের কম্পিউটারের মনিটরের টিভিটার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ তার ঘার্মাক্ত এডিটিং করা চেহারাটা ভেসে এল। সবাই মনোযোগ দিয়ে দেখছে।

সামনে ঈদ। রাস্তাঘাট ভাঙ্গা, জ্যাম, ট্রেন, বাস লঞ্চে উপচে পড়া ভির। আমরা প্রতি ঈদেই দেখতে পাই। আপনারা কেও কি একবার খেয়াল করেছেন। লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবি দিন মুজুর, গরীব মেহনতী মানুষ, রিকসাচালক অথবা শহরের ফেরিওয়ালা। তারা ভাঙ্গা রাস্তা বোঝেনা, দীর্ঘ ট্রাফিক এ আটকে থেকেও মন খারাপ করেনা। বিরক্তি নাই। বরং মনে হয় দল বেঁধে বেড়াতে বের হয়েছে। কেও বা ছ’মাস পর বাড়ী ফিরছে, কেও বা একবছর বা আরো বেশী। তারা শুধু রক্ত ঘাম করা টাকা বাঁচিয়ে দেশে ফেরত যায়, দেশের মাটি আর আত্মীয় স্বজনের টানে । তাদের বাস, ট্রেন বা লঞ্চ স্টীমারে ঠাই মেলেনা। ঐ পরিমান ভাড়া দেয়ার ক্ষমতা নেই। তাদের একমাত্র বাহন গরু বহন কারী ফিরতি ট্রাক। সব চাইতে সস্তা পরিবহন। গরু হাটে নামানোর পর এই মানুষ নামের দরিদ্র সরল প্রানীগুলো গরুর মতই লাফিয়ে উঠে পরে ফিরতি ট্রাকে। সারা রাস্তা গরু যেভাবে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আসে। তাড়াও একই ভাবে দাড়িয়ে দাড়িয়ে যায়। গরুদের তবু খাবার জন্য খড় থাকে। তাদের ভাগ্যে তাও নাই। কিন্তু কি আনন্দিত এই মানুষ গুলো। ঈদের আনন্দে বাড়ী ফিরছে। মামুন আস্তে আস্তে বেড়িয়ে আসে। এর পর বেশ কয়েক জনের সাক্ষ্যাতকার আর কিছু আলোচনা চলতে থাকে। আস্তে আস্তে অস্পষ্ট হতে থাকে টেলিভিশনের সাউন্ডটা। মামুন উদ্দেশ্যহীন ভাবে শ্রমজীবি মানুষদের মত ভাবলেশহীন ভাবে হাটতে থাকে। সত্যি এদের নিয়ে খবর তৈরি হয় কিন্তু সত্যিকারের তাদের সমস্যা সমাধানে কেও আসে না।


কে এন এন লিংকু
লেখক, কলামিস্ট

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:১৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আসেন জুলাই/ আগস্টের মিনি পোস্ট মোর্টেম করি।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:২৪





গল্প শুনেন বলি-

আমরা পড়ালেখা গুছগাছ কইরে চাকরীতে ঢুকছি।হঠাৎ বন্ধু গো ইমেইলের গ্রুপে মেসেজ (নাম ধরেন রফিক), রফিক যে পাড়ায় (রেড লাইট এরিয়া) যাইতো সেখানের একজন সার্ভিস প্রোভাইডাররে বিয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতাঃ হে বলবান

লিখেছেন ইসিয়াক, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪০

কে আছিস বলবান!
হ্ আগুয়ান।
দে সাড়া দে ত্বরা।
ধরতে হবে হাল,বাইতে হবে তরী, অবস্থা বেসামাল।

জ্বলছে দেখ প্রাণের স্বদেশ
বিপর্যস্ত আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
মানবিকতা, মূল্যবোধ, কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতির বাতিঘর।
সর্বত্র আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাইয়ের তথাকথিত আন্দোলন পুরোটা ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:১৬

জুলাইয়ের তথাকথিত আন্দোলনের পুরোটা ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন

লালবদর নীলা ইস্রাফিল এখন বলছেন ও স্বীকার করছেন যে—
জুলাইয়ের সবকিছুই ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন।
মুগ্ধের হত্যাও সেই ডিজাইনের অংশ।

অভিনন্দন।
এই বোধোদয় পেতে দেড় বছর লাগলো?

আমরা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক ৩০০০ কোটী টাকার লোভেই দেশে ফিরেছে

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১০



তারেক এসেছে, বলেছে, I have a plan; তারেকের প্ল্যানটা কি? এই মহুর্তে তার প্ল্যান হতে পারে, নমিনেশন বাণিজ্য করে কমপক্ষে ৩০০০ কোটি টাকা আয়। ৩০০ সীটে গড়ে ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

বই : টক অব দ্য টাউন

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৮

বই : টক অব দ্য টাউন



একটি বই হঠাৎ করে এতটা আলোচনায় আসবে আমরা কি ভাবতে পেরেছি ?
বাংলাদেশের মানুষ অতি আবেগপ্রবন , বর্তমান রাজনৈতিক অস্হিরতার মধ্যে ও
বাঙালীর স্বভাবসুলভ অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×