somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লুঙ্গি

০১ লা আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রমজান .... রমজান ... ঐ হারমজাদা রমজান, এদিগ আয়।
জি মালিক,
ঐ হারামজাদা ... আমি না তোকে মালিক বলতে না করছি।
জি খালু আর ভূল হবেনা।
রমজান মুচকি হাসে, দাড়িয়ে থাক। সে জানে যে আজকে তার মালিক গালাগালি করবে সন্ধা পযন্ত । অনেক নোংরা গলিও হতে পারে ।
গত তিন বছর যাবত সে এখানে কাজ করে, প্রতি বছর এই দিনে এই লোকটা কেমন যেন অস্থির ও ভয়ে থাকে ।
লুঙ্গি কিনতে কেউ আসছিল?
না খালু আসার লগে লগে খবর দিমু আপনে এক দম চিন্তা করইন না আমি দোকানের দরজার সামনে টুল নিয়া বসে আছি ।
যা হারমজাদা চোখের সামনে থেকে, আমার সাথে পাকনামি করবি না, এক কাপ চিনি ছাড়া চা আন, মজনুরে বইলা যা দরজার সামনে যেন খেয়াল রাখ।

অনন্য দিনের মত আজকের দিনটা এত বিদঘুটে গরম না , যদিও চৈত্র মাস ভর দুপুর কিন্তু বেশ বাতাস আছে, গরমের তেজি ভাবটা বোঝা যায় না। মনির মিয়াকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি গোসল সেরে এসেছেন, পা থেকে মাথা পর্যন্ত কেউ পানি ঢেলে দিলে যে অবস্থা হয় ।
এতক্ষন দোকানের ভিতরে বসা ছিলেন, দোকানের চারটা এসি বিচ বিচ করে চলছে, ঠান্ডা ফ্রিজের মত অবস্থা। মনির মিয়া খেয়াল করে দেখছেন, ঠান্ডা এসির মধ্যে সে ঘামছে বেশি। এই জন্যই বাইরে আসা। দোকান ভর্তি কাস্টামর, ব্যাচা বিক্রি অসম্ভব ভাল, দোকানের আট দশ জন কর্মচারি হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তার মনটা বড়ই অস্থির। দোকানের একটু সামনে সিড়ির কনায় সে এসে দাড়িয়েছে মনির মিয়া, কারন এই জায়গায় তেমন ভিড় হয়না, কিন্তু তার গরম কমছে না। আগে ঘন ঘন বিদুৎ চলে যেত, এখন খুব কম যায় । গরমের সমায় বিদুৎ বিভাগ / সরকার কে গালাগাল করতে পারলে গরমের ভাবটা একটু কম হত। এখন গরম কমানোর কোন বুদ্ধি পাওয়া যাচ্ছে না। সে এমন যায়গায় দাড়িয়ে আছে যে দোকানের দরজাটা ভাল ভাবে দেখা যায় ।চার পাঁচ জন মহিলা কাস্টামর সে ঢুকতে দেখল, মনটা খুব আনচান করছে, লুঙ্গি কিনতে একজনের আসার কথা, কিন্তু এখন আসছে না। ঠিক আজ এই সমায়ের মধ্যে আসার কথা মনির মিয়া ভাল করে জানে সে আসবেই।


হঠাৎ করে গরম টা আবার বেরে গেল মনে হচ্ছে, সাদা পাঞ্জাবি শরিরের সাথে লেগে একদম কাদা কাদা আবস্থা ।
মনির মিয়ার বয়স প্রায় ৫৮ ছুই ছুই, গাওছিয়ার এত বড় দোকান আর কারো নেই । ব্যবসা আর ক্ষমতা তার দুই পাঞ্জাবির পকেটে পুরে রেখেছে। মার্কেটের সভাপতি হিসাবে তিন বার জিতে ফুটবলারদের মত হেট্টিক করে ফেলেছে । সম্মান প্রতিপত্তি সবই আছে।
খালু...
হঠাৎ করে চমকে ফিছন ফেরে মনির মিয়া, ............
রমজান চা নিয়ে দাড়িয়ে আছে ..
এই হারামজাদা, রোজার দিনে চা খাবে কে রে..? শুয়ারের বাচ্ছা যা এখান থেকে.....
এই দিনে মনির মিয়া বেস গালাগালি করে , গালাগালি করলে অস্থিরওটা কমে।
আপনেইতো চাইলেন,
বিদায়হ হারামজাদা.........
খালু, আপনে আজকে লঙ্গি পড়া কেন?
মনির মিয়া ভিমরি খেয়ে কসতে লাগলেন, চকচকা লুঙ্গি তার পড়নে সারা জীবনে এত অবাক সে হয় নাই , প্রায় ত্রিশ বৎসর সে লঙ্গি পরেনা, পড়েন সাদা পাঞ্জাবি আর পাজামা ।
তখন গাওছিয়ার এই মার্কেটটা মাত্র কোন রকম তিন তালা । খুউব একটা ভীর তো নেই বরং সারাদিন মাছি মারার অবস্থা , মাঝখানের একটা দোকান ছিল শুধু লুঙ্গি আর গামছার ব্যবসা, রহমত আলির দোকান নামেই সবাই চিনত , মনির মিয়া ফেরি করে তার কাছ থেকে লুঙ্গি নিয়ে মাথায় করে বেচতো, আর বাকিতে কিনত রহমত আলির কাছ থেকে, রহমত আলি খুউব সদয় ব্যাক্তি ছিল, অনেক সমায় বিশটা লুঙ্গি নিয়ে বলত আঠেরোটা নিলাম, রহমত আলী মুচকি হাসতেন, তার চুরি ধরতে পারছে কি পারে নাই, একটা মনির মিয়ার কাছে ধোয়র মত অবস্থা থাকত, মনে আছে ঠিক আজকের দিনের মত ১৫ রোজার দিন, বাইরে অনেক বৃষ্টি, সাধারনত এই রকম বিষ্টি এই সমায় হয়না, সাধারনত সারা মাস খাখা রৈর্দ থাকে। এই মাসটা খুউব জমে উঠত বিশেষ করে রহমতের লুঙ্গির দোকান।
প্রচন্ড গরমে সারা দিন রোজা থাকা রহমত মিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ল, বৃষ্টির জন্য আজকের মনির মিয়ার ব্যবসা বন্ধ, হঠাৎ শোরগোল শুনে দোকারে ঢুকে দেখে রহমত মিয়া কে চিৎহয়ে পড়ে আছে, দোকান ভরা লোকজন ।
কোনরকমে রহমত মিয়াকে উপায়-অন্ত না দেখে বকশি বাজারের বাসায় নিয়ে এল মনির মিয়া, এর মধ্যে ইফতার এর সমায় হয়ে এসেছে, পানি টানি খেয়ে রহমত মিযা সোজা হযে বসল ।
বুঝলে ভাই, তুমি আমার জানটা বাচাইলা, আমি বড়ই কৃতজ্ঞ।
এই পযন্ত ৬৫ টা লুঙ্গি তুমি হিসাব ছাড়া নিছ অন্তর থেকে মাফ দিলাম।
ঠিক আজকের দিনের মতই হতবাক হয়ে গিয়েছিল সেদিন, তার মানে সবকিছু জেনেও কিছু বলেনি এতদিন।
বাসার লোকজন কোথায়?..............
রহমাত মিয়া একটা শুকনা হাসি দিলেন শুধু।
লোকজন নাই ... আমি একাই . তুমি একা কাজ কর রাতটা এই খানেই থাক বৃষ্টির মধ্যে কই যাইবা?
হু.., ঠিকই,
রহমাত মিয়ার পরিবার বলতে কিছুই নাই, নিজে বিয়ে করে নাই, নিজের আপন বলতে যে ভাই বোন, আত্মীয় স্বজন আছে, তার সঙ্গেঁ কোনকালেই কোন যোগাযোগ ছিলনা। সম্বল বলতে গাওছিয়ার দোকান, লাভ বা লস কোনাটাই তার খুব একটা মাথা ব্যাথা না, তিনি শেষ বয়সেও অনেক পরিশ্রম করে। লুঙ্গির কারখানা থেকে দোকানে তুলে বিক্রি পর্যন্ত, একটা নেশার মত, দুই দিন অসুস্থতার জন্য দোকান য়েতে না পারলে তার দম বন্ধ হয়ে আসে।
অনেক ক্ষন ঘুরে ঘুরে বাসাটা দেখেছে মনির মিয়া, চারদিকে জরাজির্নের প্রতিযোগিতা। তিন রুমের বাড়ী, একরুম দোকানের মালামাল, বাকি রুমে একটা চকির মত কিছু একটা, কোনায় একটা মশারি টাঙ্গানো, আসবাস পত্র বলতে কিছু নেই, তার পাশে রান্না ঘর বানানো হয়েছে, রমজান মিয়া ছাড়া অন্য কেও এই যন্ত্রপাতির মাধ্যমে কোন রকম খাদ্য উপযোগী তৈরি করতে পারবে বলে মনে হয় না, রমজান মিয়া নাকি ভারা থাকে এখানে, এই রকম বাড়ী ভারা হয় নাকি ? মনির মিয়া অবাক হয়।

হঠাৎ মাথাটা খুলে গেল, রহমত মিয়ার দুনিয়ায় কেউ নেই, মার্কেটের কারো সঙ্গেও কোন রকম গাল গল্প করে না, কাজেই ভালো কোন বন্ধুও নেই, বয়সের যা অবস্থা, বেশি দিন বেচে লাভ কি?
রান্না ঘরে রহমত মিয়া ভাত চরিয়ে রান্না করছে। আশ্চর্য্য, বেশ সুগন্ধ বেরেচ্ছে। আর দরি করা যাবে না। একটা পাতলা লুঙ্ঘি দরির মত পেচিয়ে রেডি হয়ে গেল মনির মিয়া, পিছনে দারিয়ে হঠাৎ গলায় পেচিয়ে দুই মিনিট গিট দিযে টেনে ধরেরাখতে হবে এই যা।
বেশি কষ্ট হলনা । রহমত মিয়া শরিরটা বেশ নরম এক মিনিটের গিটেই কাজ হয়ে গেল, অল্পতেই সমাধান।
সারারাত, ঢাকামেডিকেল, তার পর দাফন কাফন শেষে, দোকান খুলে ফেলল দুদিন পড়, কেও একটা সন্দেহও করল না ।
সমস্যা শুরু হল পড়ের রমজান থেকে, ঠিক ১৫ রমজান দিন একজন লোক এসে একটা লঙ্গি কিনে নিয়ে যায়। তার দোকান মহিলাদের জামা কাপরের হলেও তাকে কিছু লুঙ্গি এই লোকটার জন্য রেখে দিতে হয় ।


কে এন এন লিংকু
লেখক, কলামিস্ট
knnlinku (at) gmail.com

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৪:৪০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আসেন জুলাই/ আগস্টের মিনি পোস্ট মোর্টেম করি।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:২৪





গল্প শুনেন বলি-

আমরা পড়ালেখা গুছগাছ কইরে চাকরীতে ঢুকছি।হঠাৎ বন্ধু গো ইমেইলের গ্রুপে মেসেজ (নাম ধরেন রফিক), রফিক যে পাড়ায় (রেড লাইট এরিয়া) যাইতো সেখানের একজন সার্ভিস প্রোভাইডাররে বিয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতাঃ হে বলবান

লিখেছেন ইসিয়াক, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪০

কে আছিস বলবান!
হ্ আগুয়ান।
দে সাড়া দে ত্বরা।
ধরতে হবে হাল,বাইতে হবে তরী, অবস্থা বেসামাল।

জ্বলছে দেখ প্রাণের স্বদেশ
বিপর্যস্ত আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
মানবিকতা, মূল্যবোধ, কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতির বাতিঘর।
সর্বত্র আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাইয়ের তথাকথিত আন্দোলন পুরোটা ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:১৬

জুলাইয়ের তথাকথিত আন্দোলনের পুরোটা ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন

লালবদর নীলা ইস্রাফিল এখন বলছেন ও স্বীকার করছেন যে—
জুলাইয়ের সবকিছুই ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন।
মুগ্ধের হত্যাও সেই ডিজাইনের অংশ।

অভিনন্দন।
এই বোধোদয় পেতে দেড় বছর লাগলো?

আমরা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক ৩০০০ কোটী টাকার লোভেই দেশে ফিরেছে

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১০



তারেক এসেছে, বলেছে, I have a plan; তারেকের প্ল্যানটা কি? এই মহুর্তে তার প্ল্যান হতে পারে, নমিনেশন বাণিজ্য করে কমপক্ষে ৩০০০ কোটি টাকা আয়। ৩০০ সীটে গড়ে ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

বই : টক অব দ্য টাউন

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৮

বই : টক অব দ্য টাউন



একটি বই হঠাৎ করে এতটা আলোচনায় আসবে আমরা কি ভাবতে পেরেছি ?
বাংলাদেশের মানুষ অতি আবেগপ্রবন , বর্তমান রাজনৈতিক অস্হিরতার মধ্যে ও
বাঙালীর স্বভাবসুলভ অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×