দিন শেষে ত্রিসন্ধ্যায় জলাশয়ের পাশে গাড়ি পার্ক করে রাহাত পাখি এবং হাসকে খাবার দিচ্ছিল। হঠাৎ বিকট শব্দে মোবাইলে রিং বাজে। ঝম্পে উঠে ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে বুকে থুথু দিয়ে নিম্নকণ্ঠে বলল, ‘আশে পাশে হয়তো ঠাঠা পড়েছে।’
রিং না থামলে, চোখ বুজে শিউরে পকেট থেকে মোবাইল বার করে কপাল কুঁচকে জবাব দেয়, ‘হ্যাঁ বলো। কী, আমার সাথে দেখা করতে চাও? যেখানে প্রথম দেখা হয়েছিল ওখানে, মগজ বিকল হয়ে মাথাটা নষ্ট হয়েছে নাকি? দেখো, ধুর। তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছ না। শোনো, অন্যের হাত ধরে আমাকে ছ্যাঁকা দিয়েছ। আমি আর তোমার সাথে দেখা করব না। তোমার নতুন প্রেমিককে ডাকো। আমি এখন রাখছি। আল্লাহ হাফেজ। আর কথা হবে না, তুমি ভালো না থাকলেও আমার ক্ষতি হবে না। দূর গিয়ে মর, মরে দোজখে যা। ভুল হয়েছে। আমি তোমাকে আশীর্বাদ করি, তুমি অভিশপ্তা হও।’
মুখ ভেংচিয়ে রাহাত লাইন কেটে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে ঝিলে ছোড়ে অলোকসামান্যাতায় ভূতুড়ে কাণ্ড দেখে তার চক্ষু চড়কগাছ। বাতাসে ভেসে মোবাইল তার সামনে এসে তাইরে নাইরে করে দুলতে শুরু করলে ভোঁ দৌড়ে গাড়িতে উঠে গায়ের জোরে দরজা বন্ধ করে হাঁফায়। সামনে তাকিয়ে দুলে দুলে মোবাইল আসতে দেখে ভয়ে শিউরে গাড়ি স্ট্রার্ট দিয়ে খুব দ্রুত চালিয়ে M25 এ ওঠে মনে থেকে ভয় এবং দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য ডান্স মেউজিকে ফোল ভলিউম দিয়ে রাত্রিকালীন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। ক্যান্টাবেরী চাকলায় প্রবেশ করার সাথে সাথে সে শিহরিত হয় এবং তার গায়ে কাঁটা দেয়। এই অঞ্চলে ভূতুড়ে রাজপ্রসাদের সংখ্যা বেশি এবং ভূতরাও বেশি উপদ্রব করে।
‘ইয়া আল্লাহ, পাগলের মত গাড়ি দৌড়িয়ে এ কোথায় এসেছি?’ সভয়ে বলে রাহাত শিউরে ডানে বাঁয়ে তাকায়।
‘রাহাত, তুমি এসেছ?’ আনন্দোদ্বেজিত নারী কণ্ঠ বলল।
‘আত্মহত্যা করে হয়তো অবশীভূত হয়েছে। ভূতের ভয়ে আজ আজি অভিভূত অথবা জড়ীভূত হবো। হায় হায়, ভূতপেত্নী, দত্যি-দানোর চিন্তায় চিন্তিত হয়ে গাড়ির গতি মন্দীভূত হচ্ছে। নিশ্চয় আমাকে বশীভূত করতে চায়। বিয়ে করে সংসারী হতে পারব না। অকালে হাবাকালা হওয়ার জন্য মায়াবিনীর প্রেম সাগরে কেন যে ঝাঁপ দিয়েছিলাম, এখন আমি কী করব? এই পেত্নীর হাত থেকে আত্মরক্ষা করি কেমনে? হায়রে হায়, আজ আমার নিস্তার নাই।’ নিম্নকণ্ঠে বলে রাহাত নারীর দিকে তাকিয়ে কপট হাসে।
‘কী হয়েছে রাহত, এমন করছ কেন; ভয় পেয়ছ নাকি? বেরিয়ে আস, তোমার সাথে খোশগল্প করতে চাই।’ বলে নারী দু হাত প্রসারিত করে।
‘সময়ের চেয়ে উত্তম মহৌষধ আর নেই, সময়ের সাথে ক্ষতবিক্ষত দেহ সুস্থ হয়, মনঃকষ্টে ক্লিষ্ট সত্তা সন্তুষ্ট হয়, শুধু ভূতের ভয় দূর হয় না।’ নিম্নকণ্ঠে বলে রাহাত চোখ বুজে শিউরে ওঠে। ছোটকালে দাদি নানি যা বলছিলেন তা তার মনের কানে প্রতিধ্বনিত হয়। ভূত পেত্নির কায়া ছায়া নেই, ওরা অশরীরী। ওরা আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। সান্ত্বনাবাণী মনের কানে প্রতিধ্বনিত হলেও মনশ্চক্ষে অশরীরীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখতে পায়।
নারী অগ্রসর হলে রাহাত গাড়ি চালাতে শুরু করে বন্ধুকে ফোন করে। বরাবর রাত বারটায় দেয়াল ঘড়ি এবং মোবাইল এক সাথে বাজে। ক্রিং ক্রিং, ডিং ঢং। মুনীর বসা ছিল। ঝম্পে ওঠে পকেট থেকে মোবাইল বার করে, সভয়ে চারপাশে তাকিয়ে কম্পিত কণ্ঠে বলল, ‘হ্যালো।’
‘এই মুনীর, তুই কোথায়? আমাকে বাঁচা। ডরে ভয়ে কলিজা শুকিয়ে মরে যাব। হাত পা কাঁপছে। আল্লাহর দুহাই দিচ্ছি জলদি আয়।’
‘তোর কী হয়েছে, কথা শুনে মনে হচ্ছে গলা শুকিয়ে এক্কেবারে সালমনের শুঁটকি।’
‘বন্ধু রে, জগতের বার যতসব ইচ্ছিবিচ্ছিরি শ্রীভ্রষ্ট আমার নজরগোচর হচ্ছে। ভাবের স্ফুরণে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে, বিশ্বাসযোগ্য বিষয় অবিশ্বাস করতে চাই। আমাকে প্রাণবন্ত দেখতে হলে পবনবেগে আয়।’
‘তুই এখন কোথায়?’
‘Somewhere in Kent, I think I’m in-front of haunted house of Canterbury.’
‘তোর মড়া চোখের দিকে তাকালে আমার আত্মা আড়ষ্ট হবে, তবুও তোর নিথর দেহ দেখার জন্য অভয়ের কাছে প্রাণকে বন্ধক দিয়ে আসছি। আমি আসার আগ পর্যন্ত জগতের মায়া ত্যাগ করিস না। আমি এখুনি আসছি।’ বলে মুনীর প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে খুব দ্রুত চালিয়ে যায় এবং রাহাতের গাড়ির সামনে থেমে ভিতরে কাউকে না দেখে কাঁধ ঝুলিয়ে বলল, ‘এখন আমি কী করবো?’
ঘটনা সত্য হলেও বাস্তব বলে সত্যাসত্য নিশ্চিত করতে পারব না।
Copyright © by Mohammed abdulhaque
ছবি নেট থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৪