বৃক্ষের তলের এই মনোরম বাতাসটার জন্যই আমি এখানে । কী আরাম , কী আরাম । যেন প্রাণ জুড়িয়ে দেয় ।যেন দু‘চোখে ঘুমের জোয়ার নেমে আসে । ইস যদি এখানটাতে কিছুসময় ঘুমাতে পারতাম ।
--লোকে কী ভাববে ! পাশ থেকে আল-আমিন বলে উঠল ।
যা ভাবার ভাবুক গিয়ে লোকেরা।আমি তো ঠিক করেই নিয়েছি একদিন এই কালর্ভাট টাতে আরামসে ঘুমাবো । দেখি কে বাধা দেয় আমাকে ।
কথাগুলো বলে আকাশ ,আল-আমিনের দিকে খানিক তাকালো । দেখলো আল-আমিন ও আকাশের দিকেই তাকিয়ে আছে ।
আকাশ আল-আমিনের মুখের দিকে তাকিয়ে আল-আমিন কী ভাবছে বোঝার চেষ্টা করছে ।
--কীরে রাগ করলি নাকী?
আরে না ! রাগ করবো কেন ! ভাবছিলাম সেদিন আমিও তোমার সাথে একসাথে মিলে ঘুমাবো ।
--আচ্ছা সে দেখা যাবে ।
আল-আমিন ছেলেটার সাথে আকাশের পরিচয় একটা ট্রেনিং সেন্টারে ।ছেলেটার কথা-বার্তার ধরণ দেখে তাকে ভালো লেগে গেল আকাশের ।
পৃথিবীর মানুষগুলো আজকাল বরই স্বার্থপর । তার মধ্য হতে দু‘একজন নিস্বার্থপর মানুষ থাকা নিতান্তই আনন্দের বিষয়।পৃথিবীতে যে জিনিসগুলো বিলুপ্ত হয়ে যায় বা বিলুপ্তির পথে সেই সব জিনিসদের কে জাদুঘরে রাখে মানুষ । সেই দিক থেকে ভালো মানুষগুলোকেও জাদুঘরে রাখা দরকার । যাতে অন্যান্য মানুষগুলো তাদের দেখতে পায় এবং খাঁচার পাশের বোর্ডে লেখা তাদের বিবরণ গুলো থেকে তাদের পরিচয় জানতে পায় ।
আল-আমিন ও সেইসব ভালো মানুষগুলো থেকে একজন ।অন্তত্য আকাশের কাছে যা মনে হয় আরকী । সেতো আর আল-আমিনের মনের ভিতর গিয়ে দেখে নাই তার চিন্তা-ভাবনা কেমন ।পৃথিবীতে মানুষ সকল আরেকজনকে বিবেচনা করে তাদের অবয়ব-বেশভুষা আর অন্যের কাছে সে কীরুপ ভালো তা দেখে ।
আল-আমিনের ক্ষেত্রেও তাই । তবে আল-আমিন নামের অর্থও কিন্তু বিশ্বাসী ।
আল-আমিন আজ পযন্ত আকাশকে তুই বলে ডাকেনাই । সে বলে তার নাকী তুই –তোকারী করার অভ্যাস নেই । আজকাল অনেকেই বলে যে সবচেয়ে বেশি আপনতা তুই-তোকারী তেই আছে । অথচ মা-বাবাকে আমরা কখনো তুই বলে ডাকিনা যদিও মা-বাবা অনেক সময় আমাদের তুই বলে সম্বোধন করেন ।
মা-বাবার সাথেই কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বেশি আপনতার সম্পর্ক ।
পৃথিবীতা বড্ড জটিল , আসলে কথাটা ঠিক না । পৃথিবী মোটেও জটিল না ।পৃথিবী হল একটা ত্রিকোনামিতিক অঙ্ক যেটা এরিস্টটলদের কাছে বড্ড সহজ । ।
--সন্ধ্যার নামার ঘনঘটা হতেই আকাশ আর আল-আমিন বাড়ির দিকে রওনা হয় ।
দু‘জন পাশাপাশি দু‘মেসে থাকে । এক মেসের দুইটা সিট খুজে পায়নি বলে এই ব্যাবস্থা । আর কাছের মানুষগুলোকে কিছুটা দুরে দূরে রাখতে হয় যাতে তার সাথের সম্পর্কটা দীর্ঘস্থায়ী হয় ।
প্রত্যেকটা মানুষের মাঝে এমন কিছু দোষ আছে যার জন্য সবাই তাকে ঘৃণা করতে পারে।
রাত্রে আবার দু‘জনে একসাথে মেসের পাশের রাস্তাটার রেলিংয়ের পাশে আসে ।
এই গলিটার নাম আরামবাগ । রাত-আটটার পর এলাকা খুব নির্জন হয়ে উঠে ।
আর সেই নির্জনতার সীমানায় দাড়িয়ে দুই হিতাকাঙ্খী দাড়িয়ে থাকে ।
তারা দু‘জন যে খুব একটা কথা বলে তা কিন্তু নয় , তারা নির্জন থাকে ।ঠিক এই নির্জন রাতটার মতই ।
তাদের মাঝে কোন রক্তের সম্পর্ক নাই । আসল কথা হল রক্তের সম্পর্ক ই বড় কথা নয় । শুধু বিশ্বাসী হওয়া চাই ।বিশ্বাস জিনিসটার মহত্ত অনেক । সেই আদিম যুগ থেকে মানুষ বিশ্বাসী মানুষের কদর করে আসছে ।
এর একটা উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ‘‘একজন ব্যবসায়ী যখন নতুন ব্যবসা শুরু করে তখন সে চায় তার সাথে কেবল বিশ্বাসী মানুষগুলোর ই সম্পর্ক হোক , যদিও সে নিজে মস্ত বড় অবিশ্বাসী ।
জীবনটা কিন্তু চলতে থাকে । অনন্ত কাল । মানুষটা বেচে না থাকুক তবে পৃথিবী যতদিন থাকবে সেই মানুষটার নাম ততদিন কত মুখে যে উচ্চারিত হবে তার ইয়ত্তা নাই ।
------------------------------------------------------
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



