somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাকির নায়েকের আগমন কয়েকটি কথা!!!

০৭ ই অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৫:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আসসালামু আলাইকুম,

(বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ভারতের জাকির নায়েকের বাংলাদেশে আগমনের কারণ খুজিতে গিয়া নানাবিধ জল্পনা-কল্পনা করিয়া বিভিন্ন ব্লগে নানাবিধ পোস্ট দেওয়া হইতেছে। এইখানে আমিও নিজের ভাবনা শেয়ার করিলাম)
যুক্তিবাদী বলিয়া আমাদের দেশের প্রগতিশীলগণ নিজেদের আখ্যা দিয়া থাকেন।
কিন্তু একটি পোস্টে কী দেখিলাম?
১.শিরোনামেই একজন ব্যক্তিকে ''ভন্ড'' বলিয়া আখ্যা দেওয়া হইলো!!
তিনি কী কী ভন্ডামী কোথায়-কোথায় করিয়াছেন তাহার বিবরণ দেওয়া হইলো না।
আগে তো বিচার তাহার পরে সিদ্ধান্ত। আর এইখানে বিচারের পূর্বেই একজন আসামীকে প্রাণদণ্ড দিয়া দেওয়া হইলো।
২.জাকির নায়েক কেন বাংলাদেশে আসিতেছেন--সেই বিষয়ে পোস্টদাতা নিজেও অবহিত নহেন। তিন ''নাকি'' ''যদি''সহ অন্য একটি-ব্লগে প্রকাশিত কথাগুলিই তোতাপাখির মতোন কেবল আওড়াইয়া গিয়াছেন এইখানেও তেমন যুক্তি দেখাইতে পারিলেন না।
৩. একবার বলা হইতেছে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদিগকে বাচাইবার জন্য আসিতেছেন? আবার বলা হইতেছে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করিবার জন্য আসিতেছেন। জাকির নায়েক কখনো আমাদের দেশের যুদ্ধাপরধীদের স্বপক্ষে কোনো বিবৃতি বা প্রচারণা দেশের বাহিরে অথবা তাহার টিভ চ্যানেলে প্রচার করিয়াছেন কি না সেই বিষয়ে কোনো প্রমাণদিও পোস্টদাতা দেখাইতে পারিলেন না। তাহা হইলে তিনি কীরূপে নিশ্চিত হইলেন যে জাকির সাহাব এইসব কারণেই আসিতেছেন?
৪. দেশের সহজ সরল কোমলমতি সাধারণ মানুষের দোহাই দিয়া হইয়াছে। তাহারা নাকি অতি সহজেই বিভ্রান্ত হইতে পারে।
এইটা যদি সত্য হইতো তবে ১৯৭১ সালে এই দেশ স্বাধীনই হইতে পারিতো না। এই দরিদ্র দেশের মানুষের সচেতনতা নিয়া যাহারা প্রশ্ন তুলিয়া থাকেন --আমি বরং তাহাদের চিন্তা-উপলব্ধির গভীরতা নিয়াই প্রশ্ন তুলিতে পারি।
৫.বলা হইতেছে জাকির নায়েক পেশায় ডাক্তার তিনি কোনো ইসলামী বুদ্ধিজীবী নহেন।
ইসলাম ধর্মে এমন কোনো নিষেধাজ্ঞা নাই যে অমুক বংশে/গোষ্ঠীতে জন্ম না-হইলে কেহ ধর্মচর্চা করিতে পারিবে না।
আর ইসলাম চর্চা মানে শুধুই নামায-রোজা-দোয়া যেমন নহে আবার পানি পড়া, তাবিজ পরিধান করা পীরের দরগায় মানত করাও নহে।
ইসলাম চর্চা মানে ইসলামের বিধিবিধান মানিয়া চলাসহ তাহার দার্শনিক দিকটির প্রতিও খেয়াল রাখা আর তাহার চর্চা করা।
একটা সময় য়ুরোপের চাহিতে এশিয়ার মুসলমানগণই দর্শনের চর্চা বেশী করিতেন। এইটা ইতিহাসের সত্য। নতুন করিয়া এই বিষয়ে কিছু বলিবার প্রয়োজন রহিয়াছে বলিয়া মনে হয় না। ইসলাম যেমন নামাজ-রোজা-হজ্জ-যাকাত--এইসব পালন করিতে বলে তেমনি ধর্মীয়-বিধান অনুযায়ী একটি সমাজ কাঠামো গড়িয়া তুলিবার কথাও বলিয়া থাকে।সমাজ-কাঠামো গড়িবার প্রয়াস মানেই রাষ্ট্রীয়-অর্থনীতি-দার্শনিক চর্চার গুরুত্বকে স্বীকার করিয়া নেওয়া। কার্ল মার্কস চর্চার জন্য যেমন শুধুই সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র হওয়া বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পণ্ডিত হওয়া বা দর্শনের শিক্ষক হওয়া যেমন জরুরি নহে। অন্যান্য ব্যক্তিরাও তাহার চর্চা করিতে পারেন। তেমনি ইসলামী দর্শন চর্চার জন্য শুধুই ইসলামী-অধ্যয়ন শাস্ত্রের সার্টিফিকেট পাওয়া জরুরি নহে। যদি কেহ তাহা পাইতে পারেন তাহা অবশ্যই ভালো। কিন্তু তাহার অর্থ এইটা নহে আপনার কিংবা জাকির নায়েকের ইসলামী দর্শনের চর্চার অধিকার নাই। ইসলাম কোনো কোটারী-ভুক্ত ধর্ম নহে। যিনি এই বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জনে সক্ষম তিনিই এই বিষয়ে নিজের মতামত প্রচার করিবার অধিকার রাখেন। জাকির নায়েকও তাহা করিয়াছেন। উহাতে কী অন্যায় হইয়াছে!!!!! মওলানা ভাসানী কোন্ বিশ্ববিদ্যালয় হইতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ডিগ্রি লইয়াছিলেন? না। তাহার কোনো ডিগ্রি ছিলো না।তাহা হইলে তো বলিতে হইবে ভাসানীর রাজনীতি করাটা অন্যায় হইয়া গিয়াছে!!
৬.জাকির নায়েককে মার্কিন-কানাডা সরকার ভিসা দেন নাই।
উহা হইতে আরও বেশি প্রমাণিত হয় যে তিনি অন্তত মার্কিন-বিরোধী লোক। কানাডার কথা বেশি বলিতে চাহি না। কারণ যতই অর্থনৈিতভাবে উন্নত হ্হউক--কানাডা নামক দেশটি কার্যত মার্কিনের একটি অঙ্গরাজ্য ছাড়া আর কিছুই নহে।১ম বিশ্বযুদ্ধ হইয়াছিলো য়ুরোপে। কিন্তু তখনও কানাডার সৈন্য সেই যুদ্ধে অংশ নিয়াছিলো। ২য় বিশ্বযুদ্ধে কানাডার সীমান্তে একটিও জার্মান বা জাপানী গোলা আঘাত হানে নাই। তাহার পরেও কানাডা সেই যুদ্ধে অসংখ্য সৈন্য হারাইয়াছিলো। কেন তাহার সৈন্যরা সেইসব যুদ্ধে অংশ নিয়াছিলো তাহা একটু মগজ খাটাইয়া আর এই বিষয়ে অসংখ্য কিতাবের ভিতর হইতে ২-১ টি পাঠ করিয়া দেখিবেন।এখনও কানাডা তাহার মার্কিন-প্রভুর ইঙ্গিত ছাড়া একা-একা দুনিয়ার রাস্তায় হাটিতে পারে না।
৭. যাহারাই মার্কিন-বিরোধী তাহারাই এখন সন্ত্রাসী। কিউবা একসময় সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ছিলো। চে-ফিদেলকে একসময় সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া হইয়াছিলো। এমনকি জন লেননও বাদ যায় নাই। ভিয়েতনামকঙরা সন্ত্রাসী। আর এখন মুসলিম হইলে তো কথাই নাই। হিজবুল্লাহ সন্ত্রাসী হামাস সন্ত্রাসী আফগান যোদ্ধাগণ সন্ত্রাসী। সাদ্দাম হোসেন কুর্দিদের উপর হামলা করিলে মার্কিনীদের বুক ফাটিয়া যায়। কিন্তু তুর্কি সরকার যখন পিকেকে-এর উপর জঘন্য দমন-নীতি চালায় তখন তাহারা নির্বিকার। ইসরাইয়ের নিকট পরমানু বোমা থাকিলে সমস্যা নাই িকন্তু মুসলিম ইরানের নিকট তাহা থিকবে কেন? উহা ঘোরতর অন্যায়? এই মার্কিন-নীতি লইয়া যাহারা আনন্দিত হইয়াথাকেন--তাহাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নাই।
এমন কি বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রচারের জন্য মার্কিনিরা আল-জাজিরার উপর বোমা হামলার কথাও ভাবিয়াছে। কিন্তু তাহাতে আমাদের দেশের প্রগতিশীলদের সমস্যা হয় নাই।
৮. ভারত হইতে অন্যের গীতে গলা মেলানো শ্রীকান্ত আচার্যবাবুরা আসিলে সমস্যা নাই। সুনীল -জয় বাবুরা আসিলে সকলেই গদোগদো...বোম্বের নায়ক-নায়িকা হইতে মডেল-তারকা আসিলেও হৈ হৈ কাণ্ড রৈ রৈ ব্যাপার ঘটিয়া যায়। জ্যোতিবাবুর তিরোধানে ব্রগে-ব্লগে শোকের বন্যায় ভাসিয়া যাইবার উপক্রম হয়।প্রমেন বাবু সঞ্জয় বাবুর কবিতা দিয়া ব্লগের পাতা ঢাকিয়া দেওয়া হয়। তাহাতেও সমস্যা নাই। সমস্যা হয়ও নাই। কিন্তু ভারত হইতে জাকির নায়েক আসিলেই যতো সমস্যা।
৯. কেন সমস্যা?
উত্তর একটাই।
ক.জাকির নায়েক মুসলমান। তিনি মুসলিম দর্শন সহজ ভাষায় প্রচার করিয়া থাকেন।
আর কী সমস্যা?
খ.তিনি মুসলমানগণকে আত্মসচেতন হইতে আহ্বান জানাইয়া থাকেন।
আর?
গ. তিনি ব্রিটিশ-মার্কিন তথা বুশ-ব্লেয়ারের মুখের দিকে তাকাইয়া ইসলামী মূল্যবোধ তথা দর্শনের কথা বলিতে ভয় পান নাই।
১০. জাকির নায়েক একজন ফেরেশতা--তাহা বলিবার উদ্দেশ্য আমার নাই। কিন্তু তাহার সমস্যা কোথায়?--সেইটা ভালোভাবে বুঝিয়া নিতে চাহি।
পোস্টাদাতা তাহার এই পোস্টে গণহারে তাহার বিরুদ্ধে নানাকথা কহিয়াছেন। আর প্রমাণ দিবার সময় এই লিংক দেখুন ঐ লিংক দেখুন করিয়া নিজের দায় এড়াইয়াছেন।
কেবল দায়িত্বহীন ব্যক্তিবর্গই নিজের-নিজের দায় এড়াইয়া থাকেন। এইটা কোনো সচেতন মানুষের কর্ম নহে। একজন ব্লগারের নিকট হইতেও আমরা সেই সচেতনতা আশা করিয়া থাকি। তাহাতে এমন কি অন্যায় হইয়াছে--তাহা বুঝিতে পারি না।
১১.সকল কিছুর সহিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যাহারা জড়াইয়া ফেলিতে চাহেন তাহারা আর যাহাই হউক মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই কলুষিত করিবার অপচেষ্টা করিয়া থাকেন। যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি তাহারা সামান্যতম শ্রদ্ধাবান থাকিতেন তাহা হইলে এই কর্ম করিতেন না।
জাকির নায়েক আমাদের মুক্তযুদ্ধকে কখনো কটাক্ষ করিয়াছেন কিনা তাহার প্রমাণ প্রদান করিলে পোস্টদাতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকিবো।
মত-প্রকাশের স্বাধীনতা মানে এইটা নহে যে প্রমাণাদি ছাড়া যুক্তি-তর্ক ছাড়া ঢালাওভাবে নিজের মনগড়া তথ্য প্রদান করিয়া মানুষকে বিভ্রান্ত করা। না। এইটা স্বাধীনতা নহে। এইটা স্বেচ্ছাচারিতা। স্বেচ্ছাচারিতা একইভাবে আবারও মেই দায়িত্বহীনতার কথাই স্মরণ করাইয়া দ্যায়।
পরম করুণাময় আমাদিগকে সহজ সরল পথে চলিবার তাওফিক দিন।
সকলে ছহি-ছালামতে থাকিবেন।
২৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×