somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কল্পদ্রুম
জ্ঞানিরা বলেন মানুষ জন্মমাত্রই মানুষ নয়,তাকে যোগ্যতা অর্জন করে তবেই মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে হয়।যোগ্যতা আছে কি না জানি না,হয়তো নিতান্তই মূর্খ এক বাঙ্গাল বলেই নিজেকে নির্দ্বিধায় মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফেলি।

Visages Villages

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আর্ট বা শিল্প একজন মানুষকে হয়তো আনন্দ দিতে পারে,হাসাতে পারে।দুঃখের সৃষ্টি করতে পারে।আবার প্রেমানুভূতিও জন্মাতে পারে।তবে সব কিছুর প্রথমে যেই অনুভূতি তৈরি করবে সেটি হলো নিখাঁদ মুগ্ধতা।আমার মনে হয় এই মুগ্ধতা সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন একজন সাধারণ মানুষের চোখে।সমালোচকরা অবচেতন মনে হলেও শিল্পের মানদন্ডের বিচারে বসে যান।তাঁদের মুগ্ধতা স্থান সাপেক্ষে পরিমাণমত।কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এই অনুভূতি অকৃত্রিম ও পক্ষপাতিত্বহীন।এখন শিল্পের প্রতি এই মুগ্ধতা আরো বাড়ে যখন শিল্প সৃষ্টির প্রক্রিয়া চোখের সামনে দেখা যায়।কারো কাছে সেটা যত জটিল হয় তত আকর্ষণীয় মনে হয়।ব্যক্তিগতভাবে শিল্প সৃষ্টির সাধারণ সূত্রগুলোই বরং আমাকে বেশি আকর্ষণ করে সবসময়।

visages villages ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম।সম্প্রতি এ ফিল্মটি দেখার পর এক ধরণের ভালো লাগা কাজ করেছে।প্রথমত ফিল্মের পরিচালক কাম কেন্দ্রীয় চরিত্রদ্বয়ের শিল্পের প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে।দ্বিতীয়ত চলচ্চিত্র বলতে যেটাকে বোঝায় এটা আসলে সেরকম কিছু না।যাঁদেরকে দেখানো হয়েছে তারা সকলেই আমজনতা।কেন্দ্রীয় চরিত্রদ্বয় সেলিব্রিটি হলেও অভিনেতা অভিনেত্রী নন।

আবার এটাকে ঠিক ডকুমেন্টারিও বলা যায় না।ডকুমেন্টারির মত কেবল তথ্যের সমাহার কিংবা কাঠখোট্টার মত কেবল ঘটনা প্রবাহের চিত্র ধারণ করা হয়নি।বরং এর নির্মাণ শৈলীতে উপভোগ্য একটা গল্পের আকার ধারণ করেছে।

ফিল্মের কেন্দ্রীয় চরিত্র দুজনের ভিতর বৈপরীত্বই বেশি।একজন ৮৮ বছরের বৃদ্ধা।পেশায় চিত্রপরিচালক।অন্যজন ৩৩ বছরের উড়নচণ্ডী যুবক।পেশায় চিত্রগ্রাহক ও ম্যুরালিস্ট।মিলের কথা বললে দুজনেই ফরাসি।কিন্তু দুজন সৃষ্টিশীল মানুষের ভিতর সবচেয়ে বড় যে মিল - সৃষ্টির প্রতি অনুরাগ- সেটিই তাদের দুজনকে এক করেছে।

বৃদ্ধার নাম আগনেস ভার্ডা(Agnes varda)।উনি একজন ষাটের দশকের স্বনামধন্য পরিচালক।যদিও এই ফিল্ম দেখবার আগে ওনার সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।সেই উড়নচণ্ডী যুবক যিনি JR নামে পরিচিত আগনেসের সাথে দেখা করে নিজের অদ্ভুত ব্যতিক্রমি কিন্তু চমৎকার পরিকল্পনার কথা বলেন।স্বাভাবিকভাবেই আগনেস তাতে রাজিও হয়ে যান।দুজনের এই পরিচিত হওয়ার ঘটনাটাও নাটুকে ভঙ্গিতে উপস্থাপন করা হয়।ফলে ফিল্মের শুরু থেকেই এটা উপভোগ্য হয়ে উঠতে থাকে।



JR এর পরিকল্পনা অনু্যায়ী তারা দুজনে ক্যামেরার মত দেখতে একটা বিশাল ভ্রাম্যমান ছবি তোলার স্টুডিও এবং প্রিন্টিং মেশিন নিয়ে ফ্রান্সের মফস্বল শহর(এই ছোট গ্রাম গ্রাম ভাবের শহরগুলোকে তো মফস্বল শহরই বলা যায়) এলাকায় ঘুরে বেড়ান।JR আর আগনেস তাদের এডভেঞ্চারে নানান মানুষের সাথে দেখা করেন।তাদের ছবি তুলে সেগুলোকে দৈত্যকার পোস্টারে রূপান্তর করে তাদেরই বাড়ির দেওয়ালে অথবা তাদের গ্রামের কোন পাবলিক প্লেসে লাগিয়ে দেন।বিষয়টা অনেকটা গ্রাফিটি কিংবা দেওয়ালে ছবি আঁকার মত।কিন্তু এখানে ভালো লাগার দিক হলো যেই মানুষগুলোর ছবি তোলা হচ্ছে তারা সবাই সাধারণ মানুষ।দৈত্যকার পোট্রেট লাগাবার পর তারা আশেরপাশের মানুষদের রীতিমত আকর্ষণের বস্তুতে পরিণত হন।ছা পোষা সাধারণ জীবনে এটা তাদের জন্য নবীণ অভিজ্ঞতা।তাছাড়া ছবি তোলার ফাঁকে তাদের কথা শোনা হয়।নানান দিক নিয়ে তারা কথা বলেন।এর ভিতর দিয়ে উঠে আসে নিজস্ব দুঃখ কষ্ট,তাদের নিজস্ব জীবন বোধ।একের পর এক নতুন নতুন স্থানে নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার কারণে পুরো ফিল্মটি তার আকর্ষণ বজায় রাখে।এর ভিতর যাত্রা পথে চলতে থাকে আগনেস ভার্ডা এবং JR এর ভিতর মজার খুনসুটি আর আগনেসের স্মৃতিচারণ।




মূল ফরাসিতে Visages villages নাম হলেও এর ইংরেজি নামকরণ করা হয়েছে 'Faces,places'.ভাষা ফরাসি হওয়ায় ইংরেজি সাবটাইটেল একমাত্র ভরসা।ডকুফিল্মটি পরিচালনাও করেছেন আগনেস ভার্ডা এবং JR এই দু জন মিলে।২০১৭ সালে সেরা ডকুমেন্টারি ফিচার ফিল্ম ক্যাটাগরিতে এটি নমিনেশন পেয়েছিলো।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×