পুরোনো দালানের খসে পড়া ইটগুলোও একসময় মহামূল্যবান হয়ে যায়। কিছু কিছু দৃষ্টিনন্দন পদার্থ কোন না কোন জাদুঘরের কাঁচ ঘেরা নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে বন্দী হয় যায়। কত আগন্তুক এক নজর দেখার ইচ্ছা নিয়ে প্রবেশ করে কিছু মুহূর্তের জন্য অতীত সময়ের পথে।
অনিমেসের মতো কখনই মেতে উঠা হয়নি উৎসবমূখর পরিবেশে। ধরা দিলেও পাশ কাটিয়ে অন্য পথের পথিক হওয়া। কখনো সখনো আটকে যেতে হয়, সেটা হয় অভিনয়।
পৃথিবী জয়ের হাসি ভরা মুখ প্রদর্শন করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
নচিকেতার গানের কথাটা মনে হলেই এখন হাসি পায় “স্বপ্ন স্বপ্ন স্বপ্ন, স্বপ্ন দেখে মন”।
আদিত্য, নিলয়, স্বপ্নীল, অনিমেস-যে নামই বলি না কেন, এরা স্বপ্ন দেখে সময় পার করতেই ব্যস্ত।
এদের কেউ কেউ ধরে থাকে। শক্ত হাতে। আঁকড়ে পড়ে থাকে। শেষটা দেখার চরম ইচ্ছা নিয়ে। কখনো দেখা হয়, কখনো দেখা হয় না। মূল্যায়ন? সুন্দরের কাছে অসুন্দর যেমন মানানসই নয়, ঠিক তেমনই।
আবার সত্যিই ধরা দেয়। তবে অনেক সময় প্রশ্নবোধক চিহ্নটা থেকেই যায়।
বাধ্য হয়ে থেমে যাওয়া, অভিমানে থেমে যাওয়া-দুটোই ভিন্ন কথা। ভিন্ন অর্থ বহন করে। আলাদা আলাদা অর্থ। আলাদা আলাদা চিত্র।
ফাঁকা আওয়াজ প্রায় কানের কাছে এসে নতুন একটা উম্মাদনার সৃষ্টি করে। আত্মবিশ্বাসটা প্রখর থেকে প্রখর হতে থাকে। চিরাচরিত নিয়মে মাঝ পথেই অলস হয়ে পড়ে। তখন মনে হয় কেন যে মিছে মিছে মরিচিকার পেছনে ছুটলাম...
মাঝরাতে ধ্যাত শব্দ করে বিছানা থেকে ধড়ফড় করে লাফিয়ে উঠা আদিত্য, নিলয়, স্বপ্নীল, অনিমেসরা আরো একটি স্বপ্ন আঁকে-যদি জয়ী হওয়া যায় এই ভেবে...
রাতের আঁধারে ঢাকা পৃথিবীতে ওরা বিজয়ী মুহূর্তটাকে গাঁঢ় ভাবেই অনুভব করে। সে অনুভবে কোন লোভ নেই, ক্ষোভ নেই, নির্ভেজাল অনুভূতি। কিন্তু সকালের আলো পৃথিবীকে স্পর্শ করতেই সবকিছু অদৃশ্য হতে থাকে। সারারাত ধরে আঁকা স্বপ্নগুলো সূর্যের আলোর তীব্রতার সাথে সাথে খসে পড়তে থাকে। অবহেলা, অযত্নে তখন আর ধরে রাখা যায় না। কারণ তখন বাস্তব পৃথিবীটা স্বপ্নে ঘেরা মস্তিকে তীব্রবেগে আঘাত করে। প্রতিযোগিতা, বাস্তব মুহূর্ত...
মা-বাবাকে না হারিয়েও এতিম হতে হয়। ঐ মুহূর্তগুলো ভাবতেই খারাপ লাগে। আর যারা সত্যিই হারিয়ে বসে? তাদের কথা?
১০৪ ডিগ্রী জ্বর-এটা বাদই দিই। সামান্য পেট ব্যথাতেও মা’য়ের কথা মনে পড়ে। পাশে বসলেই অনেকটা আত্ববিশ্বাস বেড়ে যায়। কষ্টটাও কমতে থাকে। শুধু মা কেন বাবা, ভাই, বোন।
বাড়ী থেকে দূরে অথবা প্রবাসের নিঃসঙ্গ মুহূর্তে কিংবা অসুস্থ্যতার কারণে দূর্বল শরীরটা যখন বিছানার সাথে আটকা পড়ে যায়, তখন অবচেতন মনে প্রিয়মুখগুলো পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। নয়ত কথা বলে। বাস্তবে ফিরে আসলেই শূণ্যতা। একটু একটু করে নোনাজল বাসা বাধে। শুরুতেই শুকিয়ে যায়, নয়ত গড়িয়ে পড়ে।
আনন্দঘন মুহূর্তের মাঝে ডুবে থাকলেও শূণ্যতা কাজ করে। তখনই বোঝা যায়, যখন পথের পরিধি অনেক দীর্ঘ হয়। শত থেকে হাজার মাইল অথবা কিঃ মিঃ।
ফোনালাপেও কান্নাটা প্রকাশ পায়। কখনো কখনো শক্ত মনের মানুষরা সে কান্না চাপিয়ে রাখে। পরক্ষণেই শিশুদের মতো কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
অসহায় মুহূর্তে পরিজনের একটু ছোঁয়া পেতে ইচ্ছে করলেও সহ্য করা। নিরবে অশ্রু ফেলা। নিজের সাথে নিজেই কথা বলা। আন্তরিকতার দোহায় দিয়ে কতজনের সাথেই পরিচয় হয়। কথা হয়। কুশল বিনিময় হয়। ব্যস্ততা নামক শব্দটার জন্য অনেক কিছুই হয়ে উঠে না। চাই শারীরীক বিশ্রাম। ঘুম। পরিজনদের সময় দেয়া।
কেন যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি?
সেই কথা বলবেন না- চরম ব্যস্ততা।
ব্যস্ততার মাঝেও দু’মিনিটের জন্য সময় বের করা কঠিন কিছু নয়।
এতোগুলো কথা বললাম। বকর বকর করলাম, এর কোন মানে হয়? শুধু শুধু সময় নষ্ট। বিল গেটসের কথা মনে করলেই তো হয়। প্রতি সেকেন্ডে তাঁর আয় কত? আর আমরা বাঙালিরা অযথা সময় নষ্ট করি।
আর যারা মানুষের বিভিন্ন দিক ভেবে মানসিক কষ্ট পায়, প্রকাশ করে?
আরে তারাতো আবেগী।
এইসব মানুষদের হিসেবের খাতা থেকে যত দূরে রাখা যায়, ততই ভাল। ততই মঙ্গলজনক। বলা যায় এরা সমাজের অপদার্থ একটি শ্রেণী। খালি স্বপ্ন দেখা, পাগলের মতো দৌড়াদৌড়ি করা। অনুভূতির কথা প্রকাশ করে-বিব্রতকর মুহূর্তের জন্ম দিতে পারদর্শী।
তাদের দোষ দিই না। যে সময়টা সবাই আসা করে, ভাবে, কল্পনা করে-ওদের কাছেতো সে সময়টা ধরাই দেয়নি। ওরাতো কঠিন হবেই। আমরা শুধু শুধু ভুল বুঝি। আঘাত করে বসি।
না না এটা আবেগের কথা বলছি না। নির্মম বাস্তব।
জীবনের প্রতিটি সময়ে এক এক করে জমে রাখা এই অনুভূতির কথাগুলো যদি আমার ভবিষ্যত প্রজন্মকে না জানাই, না শেখাই-তাহলেতো ওরা অন্যের কষ্ট অনুভব করতে শিখবে না। ভালবাসতে শিখবে না। আঘাত করতে ওদের হাত কাঁপবে না। হিংস্র হতে সময় লাগবে না।
আবেগী হয়েই বেঁচে থাক-তাতে ক্ষতি নেই। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াক এই স্বপ্নই দেখি। অন্যের কষ্টে কষ্ট পাক এটাই মনে প্রাণে চাই। এমন যদি হয় তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মাথাটা লজ্জায় হেট করতে হবে না।
আপাতত কথা না বাড়ানোই ভাল। আদিত্য, নিলয়, স্বপ্নীল, অনিমেসরা এখন নতুন পৃথিবী তৈরী নিয়ে মহা ব্যস্ত। বাস্তবিক অর্থে নিরব। ক্ষাপ্যাটে টাইপের। দূরত্বের পরিমাণটা দিনকে দিন দীর্ঘই করছে। আর বসে বসে কাজের ফাঁকে নিজের পৃথিবীটা সাজাচ্ছে। সেই পৃথিবীটা ভার্চুয়াল পৃথিবী। এখানেই গান, কবিতা, গল্প, জীবনকথা, আনন্দ, উল্লাস, আড্ডা, কান্না, অভিমানে মেশা। বকা ঝকা। শাসন। অভিমান। দুষ্টুমি। প্রেরণা।
বাস্তব জীবনের প্রিয়জন বা বন্ধু বান্ধবদের থেকে এই ভার্চুয়াল জগতটা অনেক সুন্দর। এখানে রক্তের গন্ধ নাকে আসে না। মনের মাঝে হিংসার বারুদ জ্বলে উঠে না। বাস্তব দৃষ্টিতে এখানে ফুলের সুবাস নেই, বৃষ্টি নেই, প্রকৃতির অপরুপ খেলাও নেই। সব নেই-এর মাঝে আবার সবই আছে। আর তাই সেই স্বপ্নীল পৃথিবীর প্রিয়মুখগুলোর জন্য মন খারাপ হতেই পারে। না-এটা কোন নক্সা না। নক্সীকাঁথা। যেখানে অনেককিছুই লুকিয়ে থাকে। লুকিয়ে থাকে সেলাইয়ের প্রতিটি ফোঁড়ে ফোঁড়ে, অ-নে-ক-কি-ছু। এখন এই পৃথিবীটা সাজাতেই ব্যস্ত ওরা।
[যাদের নিয়ে পৃথিবীটা সাজানো, তাদের জন্যই এই ভালবাসা-“তোমাদের জন্যই এ লেখা”]

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





