somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা টি র ম য় না : আ ত্ম প্র কা শে র ক থা ব লে

১২ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা টি র ম য় না : আ ত্ম প্র কা শে র ক থা ব লে
তারিক আল আজিজ

(১৩ আগস্ট তারেক মাসুদের মৃত্যু বার্ষিকী, তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলী)

শিল্প কি শুধু আনন্দ দেয় বা সৌন্দর্য সৃষ্টি করে? শিল্প আত্মপ্রকাশের কথাও বলে। সিনেমার ফেরিওলা তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ চলচ্চিত্রে ‘আত্মপ্রকাশ’ অনেক বড় হয়ে এসেছে।
মাটির ময়না চায় ভবের বেড়ি ছেড়ে উড়তে। মরমিরসে সিক্ত মাটির মায়নার এক লোকসঙ্গীতে উঠে এসেছে-
পাখিটা বন্দি আছে দেহের খাঁচায়
ও তার ভবের বেড়ি পায়ে জড়ানো
উড়তে গেলে পড়িয়া যায়।
লোকসঙ্গীত মাটির ময়নায় এসেছে জলতরঙ্গের মত। চলচ্চিত্রটিকে করেছে সমৃদ্ধ। তারেক মাসুদের শিল্পী মন বারবার মাটির ময়নায় লোকসঙ্গীতের খেলায় মেতেছে। এসব সঙ্গীতে যেমন বাঙ্গালী ঐতিহ্যের প্রকাশ পেয়েছে তেমনিভাবে সঙ্গীতের বাণী দর্শকের সামনে কিছু বক্তব্য তুলে ধরেছে।
চলচ্চিত্রটি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের কথা বলে। ষাটের দশকের শেষ সময়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রাক্কাল। ওই সময়কে ধারণ করলেও এটা মুক্তিযদ্ধের চলচ্চিত্র নয়। মূলত একটি পরিবারের গল্প। যে পরিবারের কর্তা কাজী সাহেব। চরিত্র রূপায়ন করেছেন জয়ন্ত চট্রোপাধ্যায়। কাজী’র স্ত্রী আয়েশা, অভিনয়ে সুঅভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী। তাদের দুই সন্তান আনু ও আয়েশা। আনু চরিত্রে নূরুল ইসলাম বাবলু ও আসমা চরিত্রে লামিসা রিমঝিম। কাজীর ছোট ভাই মিলন (শোয়েব ইসলাম), যার জীবন দর্শন কাজীর ঠিক উল্টো।
তারেক মাসুদ ব্যক্তিজীবনে মাদরাসায় পড়েছেন। তার শৈশব কেটেছে দেশের অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায়। নিজের অভিজ্ঞতাকে বেশ ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। ২০০২ সালে চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর ‘মাদরাসা শিক্ষা ও ধর্মের বিরোধীতা করা হয়েছে’ বলে এক শ্রেণীর মানুষ প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিলো। অথচ তারেক যে মানবিক দিক থেকে দেখার চেষ্টা করেছেন তা তারা বোঝার চেষ্টা করেননি।
উল্টো দিকে বামপন্থীরাও চলচ্চিত্রটিকে খুব ভালোভাবে নেননি। মূলত যে যার অবস্থান থেকে গোঁড়া থেকেছেন বলেই এই ছবির মানবিক আবেদন তাদের ছুঁয়ে যায়নি। এছাড়া তারা মাটির ময়নার প্রেক্ষাপটকেও উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে আমি মনে করি। কেউ যদি তারেক মাসুদের ‘নরসুন্দর’ দেখে পাকিস্তানের পক্ষে গেছে বলে মনে করেন তাহলে সত্যিই তা হবে বোকামি। ‘নরসুন্দর’ চলচ্চিত্র দেখে যে কারো মনে হবে সব বিহারীই খারাপ নয়। বুঝতে হবে যে, তারেক কোনভাবেই পাকিস্তানের পক্ষ নেননি। নরুসুন্দরে পাক বাহিনীর হিংস্র মনোভাবও দেখানো হয়েছে। প্রেক্ষাপটকে তাই ভালোভাবেই বিবেচনায় আনা প্রয়োজন।
চলচ্চিত্রটি শুরু হয়েছে মাদরাসা দেখিয়ে। মাষ্টারশটে ভোরবেলার দৃশ্য। কুরআন পড়ার শব্দ শোনা যায়। আঙ্গুল দিয়ে দাঁত ঘষতে দেখা যায় আনুকে। পাশে দাঁড়ানো মাদরাসার হুজুর ইবরাহীম (মইন আহমদ)। তিনি আনুকে মেসওয়াক দিয়ে দাঁত মাজা শিখিয়ে দেন। মাদরাসার ভেতরের ঘরে ছাত্রদের পড়তে দেখা যায়। আযানের সাথে সাথে ছাত্ররা পড়া ছেড়ে উঠে।
পরের দৃশ্যে সকালের সূর্যের সাথে সাথে কাজীর বাড়ি দেখা যায়। বারান্দায় চুলোর পাশে বসা আয়েশাকে আসমা প্রশ্ন করে, ‘ভাই অনেক লেখাপড়া শিখবে তাই না মা?’ আয়শার উত্তর, ‘হ, বড় হইয়া ও তোর বাবার মত অবে’। এর একটু আগে দেখানো হয় কাজীকে, সাথে হোমিওপ্যাথি ওষুধের বক্স। কাজী আয়শাকে ডাকে। আয়শা আসমার ওষুধের কথা বলে ওষুধ চায়।
কিছু সংলাপ, শটের মাধ্যমে পরিচালক এভাবে ছবির গোড়ার দিকেই কৌশলের সাথে অনেক তথ্য দর্শককে দিয়েছেন। কার সাথে কার কি সম্পর্ক, ভালো মনের ছোট হুজুর, হোমিওপ্যাথ ডাক্তার কাজী, আসমার অসুখ, ভাইয়ের মাদরাসায় পড়া- দর্শকের প্রয়োজনীয় অনেক তথ্যই তিনি সুন্দরভাবে চলচ্চিত্রের প্রথম দিকেই দিয়ে দিয়েছেন।
কাজী ধর্ম ও হোমিওপ্যাথির ক্ষেত্রে সমানভাবে গোঁড়া। ছেলে আনুকে মাদারাসায় ভর্তি করেন। আনু মাদরাসার জগতের সাথে পূর্ণ খাপ খায়না। ‘জ্বীন আছর করা’ রোকন তার খেলার সাথী। মাদরাসায় ধর্মের নামে কিছু বাড়াবাড়ি, কুসংস্কার যেমনভাবে চলচ্চিত্রে স্থান পেয়েছে তেমনিভাবেই এসেছে ধর্মের সহজ সরল রুপের কথা। যা অনেকটা সহজিয়া ধারার কাছাকাছি। যে ধারায় বিশ্বাসী ছোট হুজুর ইবরাহীম। রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টানোর সাথে সাথে আনুর পরিবারেও দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে। কাজীর বিশ্বাস পাকিস্তানী মুসলমান সৈন্যরা দেশ রক্ষা করতেই পূর্ব পাকিস্তানে এসেছে। কোন মুসলমান হয়ে তারা মুসলমানকে মারতে পারে না। হোমিওপ্যাথি যেমন আসমাকে বাঁচাতে পারে না, তেমনিভাবে কাজীর বিশ্বাসও তুমুলভাবে ভেঙ্গে পড়ে যখন পাকিস্তানী সৈন্যদের হাতে তার বাড়িঘর তছনছ হয়ে যায়। পুড়ে যায় ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে শুরু করে হোমিওপ্যাথির বইপত্র। সংক্ষেপে মাটির ময়নার সারাংশ এই দাঁড়ায়।
এই চলচ্চিত্রে তারেক নিজের বক্তব্য পেশ করেছেন কখনো মাদরাসার ছোট হুজুর ইবরাহীমকে দিয়ে, কখনো মঝিকে দিয়ে আবার কখনো লোকসঙ্গীতের মাধ্যমে। তিনি ধর্মের সহজ রুপকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যে কোন মতবাদ নিয়ে বাড়াবাড়ি বা গোঁড়ামি যে ভালো নয় তা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন।
হালিম মিয়ার (আব্দুল করিম) সাথে বড় হুজুর বাকিউল্লাহর (মোহাম্মদ মোসলেমুদ্দিন) জুময়া’র খোতবায় দেয়া বক্তব্য নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ইবরাহীম বলে, ‘আসলে বেফারটা হইলো কি জানেন, এ দেশে ইসলাম তো তলোয়ার দিয়া কায়েম অয়নো’। আরো বলে, ‘আচ্ছা হালিম মিয়া আপনে একখান কতা কনচাই, পাকিস্তান বহাল না থাকলে ইসলামের অবস্তা বেহাল হই যাইবো; কেমনে বুজলেন? পাকিস্তান কি ইসলাম কায়েম কইচ্চে না মিলিটারি হুকুমাত কায়েম কইচ্চে’।
মাঝি নৌকা বাইতে বাইতে মিলনকে বলে, ‘রাজনীতিও এক দরণের খেলা বুজলেন মিলন বাই, এই খেলায় আমার আপনের কোন লাব নাই’। মিলন মাঝিকে ধর্মান্ধ বলে উল্লেখ করলে মাঝি বলে, ‘কথাডা কি কইলেন, দর্মান্দ? হ বুজছি। আসলে কি বুজলেন মিলন বাই, পরকিত কোন দর্মই, তা হিন্দু ওক ইসলাম ওক খিষ্টান ওক তা মানুষকে অন্দ করে না। তার চক্ষুডা খুইলা দেয়’।
মাটির ময়নার একটি চমৎকার দৃশ্য কবি গান। যেখানে উঠে এসেছে- ‘যদি ভেস্তে যাইতে চাও গো অন্তরে রাইখো আল্লার ডর, যদি আল্লার সন্ধান চাও গো প্রেম রাখিও অন্তরের ভিতর’।
এইসব বক্তব্য সামনে রাখলে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়। ধর্মের সাথে সমাজ বা সংস্কৃতির শত্র“তার সম্পর্ক নেই। কিছু গোঁড়ামি-বাড়াবাড়ি এই সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে।
মিলন ও তার বন্ধুদের মাঝে রাজনৈতিক আলোচনায় উঠে আসা বক্তব্যও বেশ চমকপ্রদ। মিলনকে বন্ধু উত্তম বলে, তোর ওই কমিউনিষ্ট পার্টির ভুত আর গেল না। মজার ব্যাপারটা কি জানিস, ক্ষেপিস না তোর বড় ভাই আর তোর অমিলের মধ্যেও একটা সুক্ষ মিল আছে। কাজী সাহেবের হোমিওপ্যথি আর তোর ওই মার্কসপ্যাথি দুটোরই উৎস কিন্তু জার্মানি, খেয়াল করেছিস? কৌতুক ছলে বলা এই উক্তি এ দেশের গোঁড়া বামপন্থী দর্শকরা সহজভাবে নেননি।
মিলনের আরেক বন্ধু শাহীন বলে, আর ফ্যাসিবাদের অরিজিনও কিন্তু জার্মানি!
আরেক বন্ধু বলে, মার্কসবাদ বলিস, পুঁজিবাদ বলিস, সব বাদই কিন্তু পশ্চিমা। এই পশ্চিমা বাদানুবাদ করতে করতেই আমাদের সব বরবাদ হয়ে যাচ্ছে।
খুব সহজভাবে হাসির মধ্য দিয়ে মিলন ও তার বন্ধুদের কথা এগিয়ে গেলেও একটা চরম সত্য যেন ফুটে উঠে। নানা মতবাদ নিয়ে বাদানুবাদ করতে করতেই আমরা আসলে সমাজে বিভাজনের রেখা টানছি। পরমতসহিষ্ণুতার পাশাপাশি গোঁড়ামি ত্যাগ করতে পারলে সমাজ হতে পারে সুন্দর, শান্তিময়।
মাটির ময়না চলচ্চিত্রের বর্ণনা সরলভাবে এগিয়েছে। খুব সহজেই যে কেউ বুঝতে পারবে। শুধু একটা জায়গায় দর্শক হিসেবে একটু ধাক্কা খেয়েছি। খেলার মাঠে আনু ও রোকন খেলতে খেলতে গাছের ডালে মাথা এলিয়ে দেয়। রোকন বলে সে শহর থেকে এসেছে। আনু নিজে গ্রাম থেকে এসেছে বলার সাথে সাথে ফ্লাশব্যাকে নৌকা বাইচের দৃশ্য দেখা যায়। এই জায়গায় ‘ডিজলভের’ সাহায্য নিলে ফ্লাশব্যাক আরো বোধগম্য হতে পারতো।
চলচ্চিত্রটির চিত্র গ্রহণে ছিলেন সুধীর পালসানে। চিত্রগ্রহণ সত্যিই অসাধারণ। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখার মত। এ ক্ষেত্রে পরিচালকের বিভিন্ন গ্রামীন ঐতিহ্য তুলে আনার চেষ্টাও প্রশংসার যোগ্য। উপর থেকে নেয়া ‘বার্ডস আই ভিউ'তে গ্রামীন দৃশ্য মনকে দোলা দেয়। নৌকা বাইচের দৃশ্য সবচেয়ে সুন্দর লেগেছে। এই নৌকা বাইচ প্রতি বছর একবার হয়ে থাকে। দুই ঘন্টার এই বাইচকে তারেক মাসুদ তার টিম নিয়ে পরিকল্পিতভাবে অনেক পরিশ্রম করে ধারণ করেছেন। পরে তিনি নিজেই এ কথা বলেছেন।
শিশুদেরকে ক্যামেরায় সুন্দরভাবে ধারণ করা হয়েছে। খেলতে খেলতে গাছের এলিয়ে দেয়া ক্লোজআপে ধরা আনুর মুখ, রাতের বেলা কুপির আলোয় রোকনের মুখ দেখতে বেশ লাগে। আসমার মৃত্যুর পর ছোট নৌকায় করে কবরের পাশে গিয়ে আনুর দোয়া করা দেখে হৃদয়ে দুঃখ জেগে উঠে।
কিছু কিছু দৃশ্য দেখে মনের মাঝে আক্ষেপ জাগে। কেমন যেন হতে হতেও হলো না। অনেকটা হাফ সেঞ্চুরি করার পর সেঞ্চুরির আশায় থাকা ব্যাটসম্যানের ৭০ এর ঘরে আউট হবার মতো। আসমার মৃত্যু দৃশ্যটা আরো ট্র্যাজিক হতে পারতো। দর্শক মনে একটা তীব্র অভিঘাত তৈরি করতে পারতো। দৃশ্যটা দেখতে দেখতে বারবার পথের পাঁচালীর দুর্গার মারা যাওয়ার দৃশ্য মনে এসেছে। দুর্গার মৃত্যু, পরে হরিহর এলে রবিশঙ্করের তারসানাইয়ে যে করুণ রস দেখেছি; সেরকমই কিছু একটা হতে পারতো আসমার মৃত্যু দৃশ্য।
আবার ঈদের দিনে যখন আয়শা আসমাকে নতুন জামা পরাতে যায়, আনু পেছনে এসে দাঁড়ায়। মা ও মেয়ে দুজনের সাথে পেছনের আয়নায় আনুকে দেখা যায়। এখানে মনে পরে অপুর চুল আঁচড়ে দেয়ার সে দৃশ্য। সর্বজায়া-দুর্গা-অপুর ত্রিভুজ শট সারা বিশ্বে সুখী পরিবারের চিত্র হিসেবে ছড়িয়ে দিয়েছিলো ইউনেস্কো। সেরকমটা হতে হতে হয়নি মনে হয়েছে।
এসবের ফলেও কিন্তু পুরো চলচ্চিত্রে স্বাদ নষ্ট হয়নি। সবটা দেখে যে কেউ একটা ভালো ছবি দেখার তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারবে। ছবিতে ডিটেইলের ব্যবহার অসাধারণ। সময়কে ধারণ করতে পরিচালক যথার্থই সফল হয়েছেন। লঞ্চ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কাঠের লঞ্চ সেই সত্যকেই প্রমান করে।
মৌসুমি ভৌমিকের সঙ্গীত পরিচালনাও ভালো লেগেছে। ছবিতে আবহসঙ্গীতের পরিমিত ব্যবহার শুদ্ধতার প্রকাশ বলে মনে হয়েছে। শরীয়ত ও মারেফত নিয়ে কবি গানসহ সব গানই শ্র“তিমধুর। বাণী ও সুরের অসাধারণত্ব চলচ্চিত্রের সাফল্যে অসামান্য অবদান রেখেছে।
চলচ্চিত্রে সব চরিত্রের অভিনয়ই অসাধারণ। কোন চরিত্রই আমার কাছে দুর্বল মনে হয়নি। পরিচালক এ বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগী ছিলেন বোঝা যায়। সবচেয়ে ভালো লেগেছে রোকনের চরিত্র। জ্বিনে ধরা’ মাদরাসার সাধারণ বিষয়। সবসময় মানসিক কষ্টে ভোগা অভিব্যক্তি, স্বতস্ফুর্ত সংলাপ বলা, হাসির মাধ্যমে রোকন সত্যিই চমৎকার।
ঘটনাক্রমেই কিছু ছোট ছোট ঘটনার মাধ্যমে হিউমার এসেছে। যা সত্যিই মনে আনন্দ যোগায়। যেমন বড় হুজুর বাকিউল্লাহ ঘুমিয়ে পরা এক ছাত্রকে প্রশ্ন করে, ‘দারাবা জাইদুন আমরান বিল আসয়া’ এখানে যাইদুনে পেশ আমরানে যবর আসয়াতে যের হলো না কেন। ছাত্রটি ভুল উত্তর দেয়। ঠিক পরপরই বড়হুজুর তার লাঠি ব্যবহার করে। আরবী বাক্য ‘দারাবা যাইদুন বিল আসয়া’ অর্থ হচ্ছে- যায়েদ আমরকে লাঠি দিয়ে মেরেছে। আবার রেজাল্ট দেয়ার সময় বড়হুজুর আব্দুর রহীমকে ডেকে হাতের লেকা খারাপ কেন জিজ্ঞেস করে আরবী হাতের লেখা এত খারাপ কেন? রোকন ছাত্রদের সারি থেকে বলে উঠে, ‘হুজুর ও আসলে বাউয়া’। বেশ মজা লাগে। পাশাপাশি অভিভূত হতে হয় ছোট ছোট ঘটনা, সংলাপ দিয়ে পরিচালকের বড় বিষয়ের দিকে অর্থবহ ইঙ্গিতের ব্যবহার দেখে।
এতো চমৎকার একটি চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা মনে হয় একটু ছাড়া ছাড়া ভাব। সব দৃশ্যই সুন্দর, কিন্তু সব মিলে গাঁথা মালাটা আরো সুন্দর হতে পারতো। পরিচালকের অনেক কিছু দেখানোর ইচ্ছা থেকে বিভিন্ন বিষয় টেনে নিয়ে আসায় এটা হতে পারে। অনেক সময় বোঝা যায় যে, পরিচালক ইচ্ছা করে এখানে কবি গান এনেছেন বা নৌকা বাইচ দেখিয়েছেন। ঘটনার পর ঘটনা দিয়ে একেবারে ছবির সাথে একিভূত করার বিষয়টি মার খেয়েছে।
মাটির ময়না চলচ্চিত্রটি এখন পর্যন্ত বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। প্রথম বাংলাদেশের চলচ্চিত্র হিসেবে অস্কারে বিদেশী ভাষায় মনোনয়ন দৌড়ে যায় এ চলচ্চিত্র। কান চলচ্চিত্র উৎসবে সমালোচকরা এই ছবিকে সেরা হিসেবে পুরস্কৃত করেন। পাশাপাশি চলচ্চিত্রটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়।
৯৮ মিনিট দৈর্ঘের এই ছবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হলেও দেশে চালানোর ক্ষেত্রে ঝামেলা হয়। সেন্সর বোর্ডের কাঁচির ঝক্কি ঝামেলা পেরিয়ে অবশেষে দেশে চলচ্চিত্রটি পরিবেশিত হয়।
মাটির ময়না মাটির কথা বলেছে। আনু একটি খেলনা মাটির ময়না বোন আসমার হাতে তুলে দিয়ে বাবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে বলে। খানিকবাদে কাজী আসমার হাতে মাটির ময়না দেখে ও তীর্যক দৃষ্টি দেয়। মাটির ময়না হাতে আসমার ছবি চলচ্চিত্রের পোষ্টারে শোভা পেয়েছে। কাজীর তীর্যক দৃষ্টি বাড়াবাড়ির নামান্তর। এই চলচ্চিত্র গোঁড়ামিকে প্রত্যাখ্যান করার কথা বলে। ধর্মীয় বা যে কোন মতবাদের গোঁড়ামি থেকে উর্ধ্বে উঠে মানুষকে সত্যিকার শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার কথা বলে।
লোকসঙ্গীতের প্রতি তারেক মাসুদের অনুরাগের কথা অনেকেই জানেন। তিনি লোকজ সুরে গানও লিখেছেন, যদিও তিনি নিজেকে গীতিকার হিসেবে পরিচয় দিতে চাননি। প্রয়াত গুনী এই চলচ্চিত্র শিল্পীর একটি গানের মুখ তুলে ধরার মাধ্যমে শেষ করছি-
মন দিয়া পড় আসল মাদরাসায়
কান না দিয়া কুশিক্ষায়
মন দিয়া পড় আসল মাদরাসায়।
[email protected]
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×