তাগুদী শক্তি দিন দিন মানবতাকে ধ্বংষের পথে নিয়ে যাচ্ছে। তার মাঝে কচিত উদিত হয় বিজয় নিশান। সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্বের মাঝে সত্যকে বিজয়ী করার মুলমন্ত্র নিয়ে উদ্দীপনা জাগাতে বিখ্যাত কবি কাশেম বিন আবু বকর এর "বিজয় নিশান" এক যুগান্তকারী সৃষ্টি। কবিতার প্রতিটি শব্দে উচ্চারিত প্রবল প্রত্যয় আর আশাবাদ যেমন এক উৎসর্গকারী জীবনের মহত্ব ও ত্যাগকে তুলে ধরে, তেমনি তা আমাদের কাছে এক ইন্দ্রজালিক মোহাচ্ছন্নতা তৈরী করে। এমন একটা অবস্থা অনুভব করতে সক্ষম হই যেখানে দিন ও রাতের কোন অস্তিত্ব নেই। যেমন কবি তার অত্যন্ত জ্ঞানদীপ্ত উচ্চারনে জানিয়েছেন "আমার কাছে নাই কোন দিন আর রাত", যা তার দিন রাতের বাণিজ্যের প্রতি আমাদের বোধকে আগ্রহী করে না, আমরা বুঝতে সক্ষম হই তার প্রানন্ত প্রচেষ্টায় তিনি রাতেও দিনের মত কর্মক্ষম, যুদ্ধে অবিচল, তদ্রুপ দিনেও তিনি রাতের মত উৎসর্গকারী, নিবেদিত।
কবি আজকের যান্ত্রিক যুগের যাবতীয় বায়ুদুষণ ও পরিবেশ বিনাশী কর্মকান্ড সন্বন্ধে অত্যন্ত সজাগ। তিনি বাতাসের সীসার মাত্রা বৃদ্ধিতে উৎকন্ঠিত। তাছাড়া মানুষ এখন যে মাত্রায় যানবাহন নির্ভর হয়েছে তাতে তার শারীরিক ও মানসিক স্থবিরতা একটা চলমান প্রক্রিয়া। কবি সেটাকে পরিবর্তনের প্রায়াস খুজেছেন। তিনি তার উদাহারণ দিয়েছেন এভাবে, " হেঁটে হেঁটে দিই শুধু দ্বীনের দাওয়াত"। দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এ চরনে এক যুগান্তকারী নিরীক্ষা আমরা দেখতে পারি। সমস্ত মানবতাকামী মানুষ যুগে যুগে পৃথিবীর মানুষকে আহবান করেছেন অপার শান্তির দিকে। সেজন্য তারা কোন বিশেষ গোত্র, ব্যক্তির বৈসম্য করেননি। কবি এখানে হেঁটে হেঁটে পৌছে যেতে চান সকল মানুষের কাছে যা কখনই যান্ত্রিক জীবনের যন্ত্র অনুষঙ্গে সম্ভব নয়।
কাশেম বিন আবু বকরের চার লাইনের কবিতাটির পরবর্তী দুই লাইনে তিনি তার প্রচেষ্টার সাফল্য সুনিশ্চিত করার এক সম্ভাবনা দেখেছেন। তিনি দেখতে পেয়েছেন দ্বীনের পতাকা আকাশে উড়ছে। এখানে কবি সে নিশান কোন দন্ডে স্থাপিত হয়ে আকাশে উড়ার দৃশ্যপটের কথা বলেননি। কবি এখানে দেখতে বলেছেন কল্পনার চোখে পুরো আকাশ জুরে এক দ্বীনি পতাকার অস্তিত্ব। কবি জোর দিয়ে বলেছেন, "আসমানে উড়ে ওই দ্বীনের নিশান", তারমানে তিনি দেখছেন, নিশানকে পতপত উড়তে, তিনি হেঁটে হেঁটে মানুষের কাছে পৌছেন আর পরক্ষণেই আকাশে দেখেন এক দ্বীনি নিশান। এটা একধরণের একটিভিটি মেজারমেন্ট টুলের মত যা কবিকে উদ্বুদ্ধ করে তার অর্জনকে দেখার জন্য।
এরপরে কবি সত্য-মিথ্যার সন্ধিক্ষণের এক আপ্তবানী আমাদের উপহার দেন। কবি মানুষকে আহবান করে কি বলতে চান তা তিনি এতক্ষণ কিঞ্চিত বুঝিয়েছেন কিন্তু আসল উদ্দেশ্য তিনি এবার স্পষ্ট উচ্চারণে জানিয়ে দিলেন, "জিহাদের তরবারিতে দাও তুমি শান", এটা এক অমোঘ নিয়তি, কারণ হেঁটে হেঁটে দ্বীনি নিশান দেখানোর পরে সে মানুষের কি করণীয় হবে সেটাও জানানো দরকার। কবি উদ্বুদ্ধ মানুষকে আধুনিক কোন মারনাস্ত্র ব্যবহার করতে দিতে চান না। বিশেষত ভার্জিনিয়া টেক ম্যাসাকারেরর পর সাধারণ জনগণের বন্দুক, পিস্তল, রিভলবারের ব্যবহারে বিশ্ব নিরুৎসাহিত করতে শুরু করায় তিনি নতুন উদাহারণ তৈরী করতে চান। তিনি সেই প্রাগৈতিহাসিক ও পরিবেশ বান্ধব তরবারীর প্রচলনকে আবারো শুরু করতে চান। তিনি জানাতে চান এটা এক নতুন জীবন বিধান যা মানুষকে দিতে পারে তরবারী, সুতরাং শান দেয়া দ্বীনি দায়িত্ব, এটা উব্দেলিত করবে মানুষের আশাবাদ।
কবিতার প্রতিটি শব্দে এক দ্রোহ, এক শ্রমলব্ধ অর্জন, এক কল্পনার আকাশ ভ্রমণ, সময়সচেতন অস্ত্র ব্যবহারের উপকারীতা এবং সর্বপরি আমরা দ্বীনি দাওয়াতের কাজের ধরণ, প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য সন্বন্ধে অবগত হতে পারি। কবি নিজে এক মহান আন্দোলনের পথিকৃত হিসাবে কবিতটিকে মাও সেতুং এর রেডবুকের মত অবশ্যপাঠ্য করার জন্য জোরদার দাবী থাকলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০০৭ সকাল ১০:১৭